কলকাতা, 11 জুলাই : স্মৃতি সততই সুখের নয়! পোস্তাবাসীর জন্য তো নয়ই । আজও জোরে কোনও আওয়াজ হলে পোস্তার বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে । ভেঙে পড়ল না তো ব্রিজের আরেকটা অংশ ! না চাইলেও মনে পড়ে যায়, সেই আর্তনাদ । সেই হাহাকার । রক্তে ভেজা রাজপথ । না, সেসব আর দেখতে চায় না পোস্তা । স্থানীয়রা চান, অবিলম্বে ভেঙে ফেলা হোক বিবেকানন্দ উড়ালপুল ।
2016 সালের 31 মার্চ । বিধানসভা নির্বাচনের আঁচে নিজেকে সেঁকছে রাজ্য । পোস্তা অবশ্য ছিল পোস্তাতেই । পথের পাশের রাম মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি, মাল বাহকদের চিৎকার, ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা । সবই ছিল আর পাঁচটা দিনের মত । দুপুরে হঠাৎই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে নির্মীয়মান ব্রিজের রবীন্দ্র সরণি লাগোয়া অংশ । নির্মীয়মান উড়ালপুলের তলা দিয়ে চলছিল শয়ে শয়ে গাড়ি । একটু আগেই সিগনালে দাঁড়িয়ে ছিল ছাত্র-ছাত্রী ভরতি স্কুল বাস । ঘটনার আকস্মিকতা বোঝার আগেই চলে গেল বেশ কিছু প্রাণ । পরে এক একটা করে লোহার বিম সরানো হচ্ছিল, আর মৃত্যুর বীভৎস ছবি হাহাকার ছড়িয়ে দিচ্ছিল গোটা এলাকায় । পোস্তার আজও মনে পড়ে যায় সেই দিনটার কথা।
সালটা 2008 । পোস্তা উড়ালপুলের জন্য রাজ্যের প্রস্তাবে কেন্দ্রের অনুমোদন পাওয়া যায় । টাকাও বরাদ্দ করা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে । 2009 সালে হই হই করে শুরু হয়ে যায় কাজ । দুর্ঘটনার পর খড়গপুর IIT-র বিশেষজ্ঞ কমিটি বলেছিল নকশাতেই ছিল গলদ । রাজ্য সরকারের তরফে সেই সময় তৎকালীন মুখ্য সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেয়ারম্যান করে তৈরি করা হয়েছিল 8 সদস্যের কমিটি । উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ কী হবে তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছিল এই কমিটিকে । কমিটিতে ছিলেন IIT-র 3 সদস্য । শ্রীমান ভট্টাচার্য, স্বপন মজুমদার এবং এ কে গুপ্ত । গত বছর রিপোর্ট দেয় ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি । সূত্রের খবর, রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণেই ভেঙে পড়েছিল ব্রিজ । এই উড়ালপুলের কংক্রিটের কাঠামো ভেঙে ফেলার পক্ষেই রায় দেয় কমিটি । কমিটির সেই সুপারিশ গ্রহণ করে রাজ্য সরকার । গত সপ্তাহে শুরু হওয়ার কথা ছিল উড়ালপুলের কংক্রিটের অংশ ভাঙার কাজ । সেই মর্মে বিজ্ঞপ্তিও জারি করে কলকাতা কর্পোরেশন । কিন্তু কলকাতা পুলিশ, KMDA এবং কর্পোরেশনের বৈঠকে আপত্তি ওঠে । ভাঙার পদ্ধতি ঠিক করার জন্য চাওয়া হয় সময় । সেইমতো গতকাল KMDA এবং পুলিশের পক্ষ থেকে পরিদর্শন করা হয় পোস্তা ব্রিজ । তবে কবে থেকে ভাঙার কাজ শুরু হবে, তা এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়নি ।
কিন্তু পোস্তাবাসীর যেন তর সইছে না । কারণ, সেই আতঙ্ক । নির্মীয়মান প্রায় পরিত্যক্ত সেই ব্রিজের উপরের দিকে তাকালেই দেখা যায় ফাটল ধরেছে কংক্রিটে । স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, মাঝে বেশ কয়েকবার খসে পড়েছে চাঙর । খসে পড়া কংক্রিটের সেই চাঙরে দুর্ঘটনা ঘটতে পারত যে কোনও সময় । বাস্তব অভিজ্ঞতা হল, বর্ষায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকটাই । তাই ভাঙার কাজ পিছিয়ে যাওয়ায় হতাশ পোস্তাবাসী । তাঁরা চাইছেন অবিলম্বে শুরু হোক কাজ ।