কলকাতা, 24 মে : প্রথমে দল ভেঙে একের পর এক নেতাকে নিজের পক্ষে টানা । পঞ্চায়েত-বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রাথমিক ভাবে তৃণমূলের পিলার নাড়িয়ে দেওয়া । আর এ বার মোক্ষম আঘাতটা দিলেন লোকসভা ভোটে । বাংলার অলিন্দে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, BJP-কে 2 থেকে 18 তে নিয়ে যাওয়ার কান্ডারি নাকি তিনিই । তিনি মুকুল রায় । এই মুহূ্র্তে তিনিই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে । এক ধাপ এগিয়ে কেউ তাঁকে 'চাণক্য'ও বলতে শুরু করেছেন ।
প্রথমে মুকুলকে দলে নিতে আপত্তি ছিল BJP-র অনেকেরই । BJP-র আন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, গত বিধানসভা ভোটের আগে মুকুল দলে যোগ দিতে চেয়েছিলেন । কিন্তু, নেওয়া হয়নি । তখন নাকি অন্য একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি । ছেলে শুভ্রাংশু এবং আরও কয়েকজনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা হয় । এমন কী, গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূল টিকিট না দিলেও, ইলেকশন ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে রাখা হয়েছিল মুকুলকেই । সেই সময় ঘনিষ্ঠমহলে মুকুল দাবি করেছিলেন, “দায়িত্ব যখন নিয়েছি সততার সঙ্গে পালন করব ।" সেই দায়িত্ব পালনও করেছিলেন মুকুল । নারদকাণ্ডের পরেও গত বিধানসভায় বিপুল জয় পায় তৃণমূল । এ জন্য অনেকেই মুকুলকে কৃতিত্ব দেন ।
কিন্তু, তার পর ছাইচাপা আগুনের মতো ফের প্রকাশ্যে চলে আসে মমতা-মুকুল দ্বন্দ্ব । অবশেষে তৃণমূল থেকে ঝরেই পড়ে মুকুল । কৈলাস বিজয়বর্গীয়-র হাত ধরে BJP-তে ঢোকার পর, মুকুলকে নিয়ে দলের অন্দরে গুঞ্জন কম হয়নি। কয়েকটি বিধানসভা উপনির্বাচন এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর মুকুলকে দলে নেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন BJP-র অনেকে । চুপ ছিলেন মুকুল । যেন তাঁর পাখির চোখ ছিল লোকসভা । কাজ করে যাচ্ছিলেন মুখবুজে । রীতিমতো অঙ্ক কষে রাজনীতির পাশার দান দিচ্ছিলেন মুকুল । হয়তো মুকুলের পদক্ষেপ বুঝতে পেরেছিলেন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ । আর তাই মুকুল-ঘনিষ্ঠ নেতাদের লোকসভায় টিকিট দিতে ভুল করেননি । পরিসংখ্যান বলছে, অনুপম হাজরা হারলেও, নিশীথ প্রামাণিক থেকে শুরু করে সৌমিত্র খাঁ- নিজের লোকদের জিতিয়ে এনেছেন মুকুল । এমন কী, শান্তনু ঠাকুরকে প্রার্থী করার বিষয়টিও তাঁরই মাথা থেকেই বেরিয়েছিল ।
মুকুল ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, 2009 সালের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের উপর ভর করে লোকসভায় তৃণমূল 19 জন সাংসদ পাঠালেও, এর পিছনে ছিল মুকুলের নিখুঁত প্ল্যানিং । সে সময় যে ভাবে সব দিক সামলেছিলেন এবারও সেই একই কাজ করলেন । আদিবাসী ভোটকে এক করা, মতুয়া ভোট ভেঙে দেওয়া, আর সব থেকে বড় কথা তলে তলে যোগ রেখে দল ভাঙানোর কাজ করা । গতকালই মুকুল ঘনিষ্ঠদের বলেছেন, “এবার ওদের প্রকাশ্যে আনা হবে। যোগ দেওয়ানো হবে BJP-তে । এবার লক্ষ্য 21 ।"
সত্যিই হয়তো, চাণক্যের মতোই কাজ করে চলেছেন তিনি । যখন তৃণমূলের ছিলেন তাঁর মাথা থেকে বের হয়েছে একাধিক পরিকল্পনা । যা দলকে বহু সাফল্য দিয়েছে । যে দিন থেকে তিনি BJP-তে, সে দিন থেকেই পরিস্থিতি পালটে গেছে । ভোটের পাটিগণিতে এই মুহূ্র্তে রাজ্যের সেরা রাজনীতিক বোধ হয় মুকুলই । প্রণব মুখোপাধ্যায় যদি কংগ্রেসের 'চাণক্য' হয়ে থাকেন, তাহলে মুকুল রায় তৃণমূল বা এখন BJP-র 'চাণক্য' কি না, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন ।