কলকাতা, 20 মে : প্রবেশিকা নয়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অধীনস্থ কলেজগুলিকে শুধুমাত্র উচ্চমাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই স্নাতকে ভরতির নির্দেশ দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । আজ রাজারহাট নিউটাউনের অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী । জানা গেছে, সেখানেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রসঙ্গ তুলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের উপরই আস্থা রাখতে হবে কলেজগুলিকে । প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া যাবে না ।" পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, ভরতি প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইন হবে । ভরতির পর ক্লাস শুরুর আগে পর্যন্ত কোনও পড়ুয়াকে শারীরিকভাবে উপস্থিত হতে হবে না কলেজে ।
রাজ্যের কয়েকটি কলেজ গত বছর পর্যন্ত কয়েকটি বিষয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে এসেছে । যেমন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ বেথুন কলেজ । এই কলেজ বাংলা ও ইংরেজিতে প্রবেশিকা নিত । জানা গেছে আজকের বৈঠকে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষা ইংরেজিতে প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । সেই বিষয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, একটি কলেজের জন্য নিয়ম পরিবর্তন করা যাবে না । বোর্ডের ফলাফলের উপরই আস্থা রাখতে হবে কলেজগুলিকে ।" যদিও, প্রবেশিকা পরীক্ষা না নেওয়ার নির্দেশ শুধুমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বলে জানান তিনি ।
আজকের এই বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও উচ্চ শিক্ষা সচিব রাজেন্দ্র এস শুক্লা সহ উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অন্য আধিকারিক এবং রাজ্যের সবকটি সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও তাদের অধীনস্থ কলেজের অধ্যক্ষ, টিচার ইনচার্জরা উপস্থিত ছিলেন । উচ্চ শিক্ষা সচিব রাজেন্দ্র এস শুক্লা বলেন, "আমাদের নতুন অ্যাকাডেমিক ইয়ার 2019-20 শুরু হচ্ছে । তার আগে সব অ্যাফিলিয়েটেড প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য ও কলেজের অধ্যক্ষদের আমন্ত্রণ করা হয়েছিল স্নাতকে ভরতির মডালিটিস নিয়ে আলোচনা করতে । আপনারা জানেন আমাদের রাজ্যে এটা ক্লিয়ার পলিসি করে দেওয়া হয়েছে যে পুরো ভরতি প্রক্রিয়া অনলাইন হবে ।"
এক্ষেত্রে ভেরিফিকেশনের জন্য কী করা হবে ? রাজেন্দ্র এস শুক্লা বলেন, "শুধু ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের কথা থাকছে । অনলাইনে ওরা সব আপলোড করে দিচ্ছে । কিন্তু ওরা যখন আসবে, অ্যাডমিশন নেবে, ক্লাস স্টার্ট হবে তখন কলেজ তার ডকুমেন্ট ভেরিফাই করে নেবে । এটা বলে দেওয়া হয়েছে, সেই সময় যদি কোনও ডকুমেন্ট অথেন্টিক না হলে, সেই অ্যাডমিশন লায়েবল টু ক্যান্সেল ।"
এদিকে ভরতি প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইন হওয়ার ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের একটি সমস্যার কথা উঠে আসে বৈঠকে । বহু ক্ষেত্রেই বিশেষত গ্রামাঞ্চলের দিকে দেখা যায় অনলাইনে ভরতি হতে গিয়ে বহু টাকা দিতে হয় পড়ুয়াদের । কারণ, তারা ফর্ম ফিল আপ বা পেমেন্ট করতে যান নিকটবর্তী সাইবার ক্যাফেতে । যেখানে তাদের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়ে নেওয়া হয় । জানা গেছে, এক্ষেত্রে পঞ্চায়েত দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে । যাতে পঞ্চায়েত দপ্তর পরিচালিত সেন্টারগুলিতে কম খরচে বা বিনামূল্যে অনলাইনে ভরতি হতে পারে পড়ুয়ারা ।
প্রতিবছরই ভরতির সময় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নজরে আসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হেল্প ডেস্ক । আজ রাজেন্দ্র এস শুক্লার কাছে ভরতির সময় স্টুডেন্ট ইউনিয়নগুলোর ভূমিকা কী হবে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "কোনও ভূমিকা হবে না।" হেল্প ডেস্কের বিষয়ে তিনি বলেন, "হেল্প ডেস্ক থাকবে। কলেজের হেল্প ডেস্ক থাকবে। আমরা কলেজ অথরিটির কথা বলছি। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ যে ব্যাপার আছে সেটা পুরোপুরি কলেজ কর্তৃপক্ষ করবে।" এই হেল্প ডেস্কও পুরোপুরি অনলাইন অর্থাৎ ভার্চুয়াল হবে বলে জানান রাজেন্দ্র এস শুক্লা। তিনি বলেন, "আমাদের হেল্প ডেস্ক অনলাইন হবে। আমাদের গাইডলাইন খুব স্পষ্ট। কেউ যদি পরিবর্তন করে, আমরা বলে দিয়েছি পরিবর্তন অ্যালাউড নয়।" অনলাইনে ভরতি করার নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই উচ্চ শিক্ষা দপ্তর থেকে লিখিতভাবে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ীই স্নাতকে ভরতি করতে হবে কলেজগুলিকে।