শান্তিনিকেতন, 19 অগাস্ট : "যেহেতু রাজ্য সরকারের তরফে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে তাই স্থান আমরাই ঠিক করব", বৈঠক শেষে বললেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু । প্রসঙ্গত, বিশ্বভারতী চত্বরে বৈঠক না হলে উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে আগেই জেলাশাসককে জানিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী । এদিনের বৈঠকে গরহাজির থাকতে দেখা যায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে । তার কারণ হিসেবে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিশ্বভারতী জানায়, বৈঠকের স্থান ও সময় তাদের মতামত ছাড়াই হয়েছে । জেলাশাসক জানান, এই বৈঠকের রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে । পাশাপাশি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকেও জানানো হবে।
পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়াকে কেন্দ্র করে জটিলতা চলছেই । প্রাচীরের কাজ রুখতে বোলপুর-শান্তিনিকেতনের কয়েক হাজার মানুষ জমায়েত হয়ে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় বিশ্বভারতী জুড়ে । ভেঙে দেওয়া হয় নির্মাণকাজ সহ বিশ্বভারতীর অস্থায়ী অফিস ও পৌষ মেলার গেট । জমায়েতে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় তৃণমূলের বিধায়ক, কাউন্সিলরদের ।
বিশ্বভারতীর অভিযোগ, শান্তিনিকেতন থানার সামনে এই ঘটনা ঘটলেও পুলিশকে দেখা যায়নি । প্রাচীর বিতর্ক সমাধান করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলাশাসককে বিশ্বভারতীর সঙ্গে একটি বৈঠক করার নির্দেশ দেন । সেইমতো এদিন বোলপুর মহকুমা শাসকের দপ্তরে সভাকক্ষে বৈঠক ডাকা হয় । বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং, বোলপুরের সংসদ অসিত মাল, ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুরসহ অন্য আশ্রমিক, পড়ুয়া ও প্রাক্তনীরা । প্রায় দু'ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলে । তবে বৈঠকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে কেউ হাজির ছিল না।
এই সংক্রান্ত আরও খবর : বিশ্বভারতী নিয়ে রাজনীতি করবেন না, আবেদন পার্থর
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জেলাশাসক জানান, "আগেই বিশ্বভারতীর উপাচার্য চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে বৈঠক না হলে তাঁরা উপস্থিত থাকবেন না।"
বিশ্বভারতীতে ঘটনার পর বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপার ও জেলাশাসককে জানানো হলেও তাঁদের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি । এই অভিযোগ করেছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ । এই প্রসঙ্গে জেলাশাসক বলেন, "আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব । কখন আমাদের জানানো হয়েছিল সেই বিষয়টিও দেখা হবে ।" জেলাশাসক আরও বলেন, "এদিন বৈঠকে প্রত্যেকের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে । প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, বিশ্বভারতীর সংস্কৃতির সঙ্গে প্রাচীর যায় না । আরও মতামত পেয়েছি । গাছ লাগানো হলে ভালো হয় । আমরা প্রত্যেকের মত নোট করেছি । এদিনের বৈঠকের রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হবে, পাশাপাশি বিশ্বভারতীকে আমরা জানাব ।"
এই সংক্রান্ত আরও খবর : "এ লজ্জা রাখি কোথায় !" বিশ্বভারতীর ঘটনার নিন্দায় সরব শিক্ষা মহল
পরবর্তীকালে বিশ্বভারতীর সঙ্গে ফের বৈঠক হবে কি না সেই নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হবে বলেও জানানো হয় । জেলা প্রশাসনের বৈঠক শুরুর দেড় ঘণ্টা পর প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় গরহাজির থাকার কারণ । জানানো হয়, বৈঠকের স্থান ও সময় বিশ্বভারতীর মতামত না নিয়ে ঠিক করা হয়েছে । এই প্রসঙ্গে জেলাশাসক বলেন, "যেহেতু বৈঠক রাজ্য সরকার ডেকেছে, তাই বৈঠকের স্থান আমরাই ঠিক করব ।"
এই সংক্রান্ত আরও খবর : বিশ্বভারতী নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল, নির্মাণকাজে সমর্থন নেই মমতার
শান্তিনিকেতনের পৌষমেলার মাঠের চারদিকে পাঁচিল দেওয়াকে কেন্দ্র করে সোমবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা । স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে নির্মীয়মাণ পাঁচিল পে লোডার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় । কে বা কারা এই ঘটনায় আর্থিক সাহায্য করেছে তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করে ED। ED-র তরফে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ঘটনার প্রেক্ষিতে দায়ের হওয়া পাঁচটি অভিযোগ চাওয়া হয় । এই প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং বলেন, "ED-র কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছি । সেইমতো পুলিশ কাজ করবে ।"
বৈঠক শেষে ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, "ওই জায়গায় প্রাচীর দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না । তবে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক । এটা হওয়া উচিত ছিল না।"