কীর্ণাহার 20 আগস্ট : বিরাট বাড়িটায় তালা ঝুলছে, খাঁ খাঁ করছে নাটমন্দির৷ গতবারের ঠাকুরের কাঠামো রয়েছে ৷ সেই কাঠামোর গায়ে কি মাটি লাগবে? রং পড়বে? আপাতত জানা নেই মিরাটির৷ কোরোনা আবহ আর লকডাউন অস্বস্তি ছিলই, এইসঙ্গে গুরুতর অসুস্থ গ্রামের ছেলে৷ দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় । ফলে অনিশ্চিত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির গ্রামের বাড়ির দুর্গাপুজো।
শতাধিক বছরের পুরোনো মিরাটির মুখার্জি বাড়ির পুজো। সারাবছর যেখানেই থাকুন পুজোর সময় বাড়ি ফিরতেন, পুজোয় অংশগ্রহণ করতেন প্রণববাবু। এমনকী, নিজে চণ্ডীপাঠ করতেন। এবাড়ির পুজো ঘিরেই মেতে উঠত মিরাটি-সহ আশেপাশের গ্রামের মানুষ । এবার হবে?
বীরভূমের কীর্ণাহারের প্রত্যন্ত গ্রাম মিরাটি। এগ্রামের ধুলোমাটিতে বড় হয়েছেন যিনি, তিনিই একদিন সামলেছেন দেশের সর্বোচ্চ পদ। তার আগে একের পর এক অতি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্ব ৷ প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থমন্ত্রকের গুরু দায়িত্ব৷ তবু, ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায় যে সবার আগে বাংলার গর্ব, তার প্রমাণ তাঁর প্রতিবার বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের সময় গ্রামে ফিরে আসা৷ একই কারণে তিনি গ্রামের মানুষের প্রিয় পল্টুদাও বটে ! কিন্তু, বেশ কিছুদিন ধরেই এলাকার কৃতী ছেলে গুরুতর অসুস্থ। ফলে মনখারাপ এলকাবাসীর।
আগেই প্রয়াত হয়েছেন প্রণববাবুর দাদা পীযূষ মুখোপাধ্যায়, দিদি অন্নপূর্ণা বন্দোপাধ্যায় ও স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়। এবার দেশের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতিও অসুস্থ হওয়ায় মুখার্জি বাড়ির ঐতিহ্যবাহী পুজো নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। যেহেতু দূরে থেকেও বাড়ির পুজোর অন্যতম উদ্যোগী ছিলেন তিনি৷ এবং পুজোর কটা দিন বাড়িতেই৷ চারদিন হাইপ্রোফাইল প্রণববাবু হয়ে উঠতেন গ্রামের ছেলে৷
গ্রামবাসীরা বললেন, কীভাবে প্রতিবেশীদের খোঁজ নিতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ স্থানীয়রা যে মুখার্জি বাড়ির পুজোকেই নিজেদের পুজো বলে মনে করেন, তাও জানা গেল৷ উৎসবের কদিন এবাড়িতেই গ্রামের সকলের পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা ৷ কিন্তু, এবার সেই হইহই কি হবে?
গ্রামবাসী সাধন সাহা বলেন, "ভগবান তুল্য মানুষ । দ্রুত সুস্থ হয়ে গ্রামের মানুষ গ্রামে ফিরে আসুন৷ এটাই চাই । ওঁর বাড়ির পুজো না হলে আমরা এবার বাড়ি থেকে বেরোবো না।"
প্রণববাবুর বন্ধুপ্রতিম, মুখার্জি বাড়ির পারিবারিক চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, "মেধা আর অন্তরের আশ্চর্য মিশেল মানুষটার৷ আমার বড় দাদা বলতে পারেন৷ বাড়ির পুজোয় আর পাঁচজন বাঙালির মতোই আনন্দ করতেন ৷ মানুষটা গ্রামে এলেই মেতে উঠত গ্রাম৷"
পুজো নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেও আশাবাদী মুখার্জি বাড়ির পুরোহিত রবি চট্টরাজ৷ তিনি বলেন, "অত বড় মানুষ৷ গ্রামে এলেই গ্রামটা বদলে যেত ৷ পুলিশ, সাংবাদিক ৷ কিন্তু উনি সবার সঙ্গে মিশতেন৷ এখন সবার মন খারাপ৷ তবে পুজো হবে৷ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হবে৷ তবে ওঁকে নিয়ে চিন্তায় আছি৷"
উদ্বিগ্ন সকলেই৷ মিরাটির সকলেই চাইছে, উনি সুস্থ হয়ে উঠুন৷ শরৎ আনন্দও ফিরুক৷ যেমনটা বললেন গ্রামবাসী সরস্বতী বাগদি৷
সরস্বতী দেবীর কথায়, "উনি সুস্থ হয়ে উঠুন৷ ফিরে আসুন বাড়িতে৷ আগের মতো পুজোও হোক৷ এটাই চাই৷"