শান্তিনিকেতন, 28 জুন : কবিভূমে কোপাই চুরি ! কাঠগড়ায় রাজ্যের শাসকদলের নেতা, কর্মীরা ৷ অভিযোগ, তাঁদের মদতেই বহর কমছে নদীর ৷ চুরি যাচ্ছে জলের জমি ৷ কোপাইয়ের বুক ভরাট করেই উঠছে পিলার ৷ কাঁটাতারের বেড়ায় গতি হারাচ্ছে নদীর বাঁক ৷
বাঙালি তো বটেই, এমনকি অবাঙালি থেকে শুরু করে অভারতীয়, এক কথা দেশি, বিদেশি সকলের কাছেই শান্তিনিকতেনের একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে ৷ একে শুধুমাত্র একটি পর্যটনকেন্দ্র বললে কম বলা হয় ৷ এ জায়গার আনাচ-কানাচে জড়িয়ে কবিগুরুর স্মৃতি ৷ তাঁর সৃষ্টি, তাঁর রচনায় এখনও রাঙামাটির ধুলোর গন্ধ, মেঠো মানুষের সুর, তাঁদের রোজনামচা ৷
আরও পড়ুন : ফের নদী চুরি চাঁচলে, বালি বোঝাই ট্র্যাক্টর আটক মহকুমাশাসকের
এই রোজনামচায় আজও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে কোপাইয়ের প্রতিটা বাঁক ৷ আর সেখানেই থাবা বসিয়েছে লোভ ৷ মোটা মুনাফার লোভে প্রকাশ্যেই নদী চুরির প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে মাফিয়াদের মধ্যে ৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে গোয়ালপাড়ার পিয়ারসন সেতু সংলগ্ন এলাকায় কোপাই নদীর দুই পাড়ে, এমনকী নদীবক্ষেও একের পর এক গজিয়ে উঠছে কংক্রিটের পিলার ৷ সরকারি সম্পদ রাতারাতি ভোল বদলে হয়ে যাচ্ছে বেসরকারি সম্পত্তি ৷
ইদানীংকালে শান্তিনিকেতনে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে বহু গুণ ৷ এমনকী, বহু মানুষ সেখানে জমি কিনে বাড়িও বানাচ্ছেন ৷ আর এতেই বাড়ছে জমির চাহিদা ৷ মাঠ, ঘাট, জঙ্গল সাফ করে সেই চাহিদা মেটানোর তৎপরতা শুরু হয়েছিল আগেই ৷ আর এবার হাত পড়েছে নদীর বুকে ৷ নদীর পাড়েই অবলীলায় খাড়া হচ্ছে রিসর্ট, বাংলো, ক্যাফেটেরিয়া ৷ নদীর বুক থেকে মাটি তুলে তৈরি হচ্ছে ইট ৷
আরও পড়ুন : অজয় নদী থেকে অবৈধ বালি উত্তোলন, উত্তেজনা জামুড়িয়ায়
স্থানীয় আদিবাসীদের অভিযোগ, এর পিছনে মদত রয়েছে শাসকদলের ৷ নেতা, মন্ত্রীদের প্রশ্রয়েই চুরি যাচ্ছে নদী ৷ অথচ, এই নদীই জড়িয়ে রয়েছে এলাকাবাসীর জীবন, জীবিকার সঙ্গে ৷ স্নান করা, মাছ ধরা, সেচের কাজ থেকে শুরু করে নদীর ধারে বসে গান, আড্ডা- হারিয়ে যাচ্ছ সবই ৷ এলাকারই বাসিন্দা সোনা মুর্মু, শ্যাম বেসরারা জানালেন, তাঁরা গরিব মানুষ ৷ সীমিত সাধ্য ৷ তবুও স্থানীয় প্রশাসনকে নদী চুরির কথা জানিয়েছেন তাঁরা ৷ কিন্তু তাতে লাভ হয়নি কোনও ৷
এই অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি স্থানীয় রূপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপ-প্রধান রণেন্দ্রনাথ সরকার ৷ তিনি বলেন, ‘‘নদীর পাড় কোনওভাবেই বিক্রি করা যায় না ৷ আমরা এসব হতে দেব না ৷ আমাদের পঞ্চায়েতের তরফে আমরা গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখব ৷ কেউ বেআইনিভাবে নদীর পাড় ঘিরলে আইন মাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ প্রয়োজনে অন্য়ান্য পঞ্চায়েতের কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে ৷’’
বোলপুরের মহকুমাশাসক মানস হালদার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘নদীর পাড় ও নদীবক্ষ বিক্রি করা যায় না ৷ বিষয়টি সরজমিনে দেখার জন্য বিএলআরও-কে নির্দেশ দিয়েছি ৷’’