রামপুরহাট, 22 মে: সম্প্রতি পথ দুর্ঘটনায় আহত এক যুবককে এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে ভরতি করাতে গিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। কিন্তু সেই রোগীকে ভরতি নেয়নি এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ ৷ তারপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র। আর সেই নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে চলে চাপানউতোর। তারপর অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আহত রোগীকে ভরতি নেওয়া হয়। এবার মদন মিত্রের সুরে রামপুরহাট হাসপাতালে দালাল চক্রের অভিযোগ তুললেন শতাব্দী রায়। এনিয়ে সতর্ক করা হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিককেও।
সিসিটিভি দেখে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। মাস দু'য়েকের মধ্যে এনিয়ে ফের পর্যালোচনা বৈঠকে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় ধীরে ধীরে নতুন পালক লেগেছে রামপুরহাট হাসপাতালের মাথায়। তবে পরিষেবা সেই তলানিতে। আজও রোগীদের বদলি করা হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিংবা স্থানীয় কোনও নার্সিংহোমে। অভিযোগ, দালাল চক্রের খপ্পরে পরে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন রোগীর আত্মীয়রা। এনিয়ে একাধিক অভিযোগ পেয়েছেন সাংসদ থেকে বিধায়ক। বহুবার সারপ্রাইজ ভিজিট করে রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কোনও ফল হয়নি।
আরও পড়ুন: মদন বনাম স্বাস্থ্য দফতর ! মমতা সাক্ষাতের পরই জিরো টলারেন্স নীতিতে এসএসকেএম
সেই সমস্ত পাহাড় প্রমাণ অভিযোগ নিয়ে রবিবার বিকেলে রামপুরহাট নিশ্চিন্তপুরে তারাবিতান গেস্ট হাউসের সভাকক্ষে বৈঠকে বসেন বীরভূম এবং বোলপুরের সাংসদ শতাব্দী রায়, অসিত মাল, ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলাশাসক বিধান রায়-সহ স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। সেখানেই দালাল রাজ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শতাব্দী রায় অভিযোগ করেন, একজন রোগীর জন্য তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার ফোন করেছিলেন। কিন্তু কোনও সদুত্তর পায়নি। বাধ্য হয়ে রোগীকে নার্সিংহোমে ভরতি করতে হয়। আমরা জনপ্রতিনিধি হয়ে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে সাধারণ মানুষ কীভাবে পরিষেবা পাবে। এভাবে চলতে পারে না। আরও কিছু অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে আলোচনা হয়েছে ৷
সাংসদ অসিত মাল বলেন, "হাসপাতালের কিছু চিকিৎসকের সঙ্গে অসাধু কর্মী এবং দালাল চক্র রোগীদের নার্সিংহোমে যেতে বাধ্য করে। হাসপাতালে উন্নত পরিষেবা থাকা সত্ত্বেও বাইরে থেকে এক্সরে, ইউএসজি-সহ বিভিন্ন পরীক্ষা করতে বাধ্য করছে দালাল চক্র। এছাড়া রোগীদের সঙ্গে নার্সিং স্টাফদের দুর্ব্যবহার বন্ধ হওয়া দরকার। দুপুরে ভরতি হওয়া রোগীকে একদিন পর কেন চিকিৎসক দেখবেন? এছাড়াও জন্ম ও মৃত্যু শংসাপত্র দ্রুত দেওয়ার দাবি জানান অসিতবাবু। এতদিন হাসপাতালের সামনে জল জমা নিয়ে সরব হয়েছিলেন রোগীর আত্মীয়রা। এবার এনিয়ে অভিযোগ তুললেন খোদ সাংসদ অসিত মাল। তিনি বলেন, "অবিলম্বে হাসপাতালের সামনে জল জমা বন্ধ করতে হবে।"
আরও পড়ুন: মমতার উদ্যোগে মদনের পরিচিত সেই রোগীর ভরতি নিল কলকাতা মেডিক্যাল, মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা বিধায়কের
দালাল চক্রের কথা মেনে নিয়েছেন ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী অনেক উন্নয়ন করেছেন। কিছু ত্রুটি তবুও রয়েছে। তা সংশোধনের চেষ্টা চলছে।" জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, "কিছু অভিযোগ উঠেছে। সেগুলি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। আগামিদিনে যাতে কোনও ত্রুটি না-থাকে সেদিকে নজর দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের বলা হয়েছে।"