বোলপুর (বীরভূম), 9 মার্চ: আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে (Panchayat Elections 2023) বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) অনুপস্থিতি কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়েই কিছুটা হলেও চিন্তিত তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) জেলা নেতৃত্ব ৷ যদিও, সেকথা মুখে স্বীকার করছেন না কেউই ৷ তবে কর্মীদের মনোবল বাড়াতে মরিয়া শতাব্দী রায় থেকে চন্দ্রনাথ সিনহা ।
কারণ, অনুব্রত মণ্ডল যত দিন না ফিরবেন, ততদিন বীরভূমের সংগঠন দেখবেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) । তবে, অনুব্রত দিল্লি যেতেই শুনশান বোলপুরে দলের জেলা কার্যালয় । উল্লেখ্য, প্রতিবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূলের তরফে 'অনুব্রত দাওয়াই' ছিল কর্মী-সমর্থকদের মনোবল বৃদ্ধি করত ৷ এবার সেই হাল কে ধরবেন, সেই উত্তরের অপেক্ষায় লালমাটির রাজনীতি ৷
রাজ্যে পালাবদলের পর 2013 সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয় ৷ সেই সময় কসবায় একটি জনসভা থেকে বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে বলতে শোনা গিয়েছিল, "পুলিশকে বোম মারুন, আমি বলছি বোম মারতে ।" এমনকি, নির্দল প্রার্থীদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার নিদানও দেন অনুব্রত ৷ বিতর্কে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি । এই নিদানের পর খুন হয়েছিল নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষ ৷ যেখানে নাম জড়িয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলের ।
এরপর 2018 সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে অনুব্রত দাওয়াই ছিল, 'উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে ।' এই দাওয়াইয়ের পরেই দেখা গেল পুরো জেলাজুড়ে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে কোথাও কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা মনোনয়নই জমা দিতে পারলেন না ৷ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলার সব পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের আসন দখল করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ পঞ্চায়েত নির্বাচন ছাড়াও, বিধানসভা নির্বাচন ও লোকসভা নির্বাচনে অনুব্রত ম্যাজিক রাজ্য রাজনীতিতে নজর কেড়েছে বরাবর ৷
এবার অনুব্রতহীন বীরভূমের পঞ্চায়েত নির্বাচন । নেই 'অনুব্রত দাওয়াই' ৷ যেদিন অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হল, তারপর থেকে কার্যত শুনশান বোলপুরে দলের জেলা কার্যালয় । ফলে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ভোটে এর প্রভাব পড়বে ? ঘাসফুলের ফল কি এবার খারাপ হবে ?
যদিও, বোলপুর সফরে এসে দল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বীরভূমের সংগঠন দেখার কথা ঘোষণা করেছেন । সেই সঙ্গে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তৃণমূলের আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, দুই সাংসদ-সহ মোট 9 জনকে নিয়ে একটি কোর কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে । জানা গিয়েছে, এই কোর কমিটিই নিজ নিজ এলাকায় সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখবে ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে নেতৃত্ব দেবে ।
তবে কোর কমিটির সদস্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, "একটু অসুবিধা হবে ৷ তবে পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে কোনও প্রভাব পড়বে না ৷ দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করি, মানুষের পালস বুঝি, সুবিধা-অসুবিধা বুঝি৷ অল্প অসুবিধা থাকলে সেটা কাটিয়ে উঠব । আমরা কোর কমিটি এক সঙ্গে কাজ করি ।"
কোর কমিটির আরেক সদস্যা তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় বলেন, "প্রভাব পড়বে না ৷ সবাই লাফাচ্ছে, ভাবছে অনুব্রত দিল্লি গিয়েছে । সেটা নয় ৷ আইনের বিষয়, সেই নিয়ে কিছু বলব না । তবে ওঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে, সেই দায়িত্ব ইডি-সিবিআইকে নিতে হবে ৷ অনুব্রতর সঙ্গে থাকা নেতারা যাঁরা এক সঙ্গে রাজনীতি করেছেন, তাঁরা সবাই সংগঠন করতে জানে । অন্য ইলেকশনের সময় তো নজরবন্দি থাকত । ইলেকশন হবে যেমন হয়, জিতও হবে ।"
আরও পড়ুন: হিন্দি প্রশ্নের বাংলায় জবাব ! কেষ্টর জেরায় দোভাষীর ভূমিকায় দুই ইডি আধিকারিক