সিউড়ি, 26 এপ্রিল: 'আটটা বাজে দেরি করিস না' - বাংলাদেশের 'হাওয়া' চলচ্চিত্রের এই গান বর্তমানে দুই বাংলায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে । তবে প্রায় 39 বছর আগে যাঁর হাত ধরে দিনের আলো দেখেছিল গানটি, তিনিই রয়ে গিয়েছেন ব্রাত্য । বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে গানটি জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছলেও, কোথাও রচয়িতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি ৷ পুরনো ডায়রির পাতা হাতে এই আক্ষেপ ঝরে পড়ল গানটির স্রষ্টা সিউড়ির মণিরুদ্দিন আমেদের গলায় ৷ তবে ইটিভি ভারতের অনুসন্ধানী চোখ তাঁর মতো প্রতিভাকে খুঁজে বের করে, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছে চলচ্চিত্রের পরিচালকের ৷ তাই অবশেষে মিলতে চলেছে বহু কাঙ্ক্ষিত স্বীকৃতি ৷
বাংলাদেশে সদ্য মুক্তি পাওয়া 'হাওয়া' ফিল্মের গানটি ও পার বাংলার সীমান্ত ছাড়িয়ে এ পার বাংলাতেও অন্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । 'আটটা বাজে দেরি করিস না' - গানটি এখন অনেকেরই মুখে মুখে ঘুরছে । গানের রচয়িতার স্থানে লেখা রয়েছে 'সংগৃহীত'। কিন্তু, গানটির রচয়িতা এখনও জীবিত । এখনও তিনি যথারীতি লোকগানের চর্চা করে চলেছেন । কিন্তু, তাঁর নাম কেন উল্লেখিত হল না গানের রচয়িতার জায়গায় ?
বীরভূমের সিউড়ির বাসিন্দা বছর 81-র মণিরুদ্দিন আমেদ । তাঁর সৃষ্টি করা অসংখ্য গানে গলা মিলিয়েছেন প্রতিথযশা শিল্পীরা । তারমধ্যে অন্যতম আমিনুর রসিদ, স্বপ্না চক্রবর্তী, কার্তিক দাস বাউল, বাসুদেব দাস বাউল প্রমুখরা । সেই মণিরুদ্দিন আমেদের দাবি, বাংলাদেশে 'হাওয়া' ফিল্মে বিখ্যাত হওয়া 'আটটা বাজে দেরি করিস না' গানটি তিনি লিখেছিলেন 1986 সালে । ক্যাসেটও হয়েছিল । গেয়েছিলেন নামী লোকশিল্পীরা । সেই গানই ফের 'হট কেক' হয়েছে বাংলাদেশের সেলুলয়েডে । কিন্তু তারজন্য ন্যূনতম সম্মানটুকুও মেলেনি গানটির রচয়িতার । যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়ে লোক সঙ্গীতের জগতে ।
মণিরুদ্দিন আমেদ অবসরপ্রাপ্ত পঞ্চায়েত কর্মী । থাকেন বীরভূমের সিউড়ি লালকুঠি পাড়াতে । 81 বছর বয়সেও তাঁর নিরলস সঙ্গীত সাধনায় কোনও ছেদ পড়েনি । তাঁরই সৃষ্টি একটি গান এখন বাংলাদেশ কাঁপাচ্ছে । মণিরুদ্দিন আমেদ বলেন, ''কী করব । এখন মোবাইলের যুগ । কোথা থেকে কীভাবে পেয়েছে জানি না । আমার কী ক্ষমতা আছে বাংলাদেশে নামী দামি লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার !''
গানের রচয়িতা এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করলেও তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে ইটিভি ভারত ৷ আমরা যোগাযোগ করেছি বাংলাদেশের 'হাওয়া' ছবির পরিচালক মেজবাউওর রহমান সুমনের সঙ্গে । তিনি জানান, বহু খুঁজেও এই গানের গীতিকার-সুরকারকে পাননি তিনি ৷ তাই গানটির রচয়িতার নামের জায়গায় 'সংগৃহীত' লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন ৷ অবশেষে ইটিভি ভারতের মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয় গানটির গীতিকারের সন্ধান পেলেন । পরিচালক বলেন, "আমরা এ বার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে অবশ্যই তাঁর নাম দেব । দুই বাংলাতেই খুব জনপ্রিয় হয়েছে এই গান ৷ অনেক খুঁজেছি আমরা সকলে মিলে ৷ কিন্তু, কে লিখেছেন এই গান, তা পাইনি ।"
- " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="">
বর্তমানে এই গানে যিনি সুর দিয়েছেন, বোলপুরের বাসিন্দা বাসুদেব দাস বাউল বলেন, "আমি এই গানটা গেয়েছি । জানতে পারলাম গানটি গেয়েছেন বীরভূমের সিউড়ির বাসিন্দা মণিরুদ্দিন আমেদ । তাঁর নামটা এই গানে দিলে ভালো হয় । এটাই আমি বলব বাংলাদেশের পরিচালককে ।"
প্রসঙ্গত, এর আগে লোক সঙ্গীত শিল্পী রতন কাহারের লেখা গান 'বড় লোকের বিটি লো'-কে নতুন ভাবে তৈরি করেন আদিত্য প্রতীক সিং সিসোদিয়া ওরফে বাদশা ৷ সেই মিউজিক ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজকে ৷ এই গানটির ক্ষেত্রের বীরভূমের লোক সঙ্গীত শিল্পী রতন কাহারের নাম ব্রাত্য ছিল । পরবর্তীতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি সম্প্রচার হওয়ার পর স্বীকৃতি পান এই শিল্পী ৷
আরও পড়ুন: একুশ বছর এগিয়ে গেল 'গাঁটছড়া', নতুন চরিত্রে হাজির আর্য দাশগুপ্ত