বীরভূম, 14 সেপ্টেম্বর : বাবা ছিলেন ক্যানসার পেশেন্ট ৷ তাঁর জন্য রক্ত জোগাড় করতে গিয়ে বিস্তর হিমসিম খেতে হয়েছে ৷ সেই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা থেকে চেয়েছিলেন অন্তত আর কেউ যেন এই সমস্যায় না পড়ে ৷ কিছুটা আবেগ থেকেই জেলাজুড়ে রক্তের সংকট মেটাতে ব্রতী হয়েছেন শিক্ষক নুরুল হক । দীর্ঘ 15 বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তিনি ৷ বীরভূম জেলার যে কোনও প্রান্তে রক্তের প্রয়োজন হলেই মানুষ একজনেরই নাম নেন, তিনি হলেন নুরুল সাহেব । দিন হোক বা মধ্যরাত্রি, রক্তের প্রয়োজন হলে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে নয়, সরাসরি ফোন যায় নুরুল সাহেবের কাছে ৷ বীরভূমের মানুষের কাছে "রক্ত মানেই নুরুল দা"।
বীরভূম জেলার নানুর থানার পাপুড়ি গ্রাম । সেই বাম আমল থেকে প্রত্যন্ত এই গ্রাম রাজনৈতিক হিংসা, বোমাবাজি, গুলি, সংঘর্ষ, রক্তপাতে একাধিকবার উঠে এসেছে সংবাদ শিরোনামে । এই গ্রাম থেকেই বড় হয়ে ওঠা নুরুল হকের । পেশায় শিক্ষক নুরুলবাবু থাকেন শান্তিনিকেতনে । রামপুরহাটের চাঁদপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে দর্শন বিষয়ে শিক্ষক তিনি । শিক্ষকতার পাশাপাশি দীর্ঘ 15 বছর ধরে বীরভূম জেলাজুড়ে রক্ত আন্দোলন করে আসছেন তিনি । প্রত্যন্ত গ্রামে রাজনৈতিক সংঘর্ষ, রক্তপাত তাঁর মনকে নাড়া দিয়েছিল । এছাড়া বাবা ছিলেন ক্যানসারের রোগী । তার জন্য রক্ত জোগাড় করতে হিমসিম খেতে হয়েছিল । এই দুটো দিক তাঁকে রক্তদান আন্দোলনে শামিল হতে প্রেরণা জোগায় ।
বীরভূম জেলাজুড়ে রক্তের সংকট রয়েছে বহু দিন ধরেই । রয়েছে রক্ত নিয়ে চলে কালোবাজারি, দালাল চক্রের উৎপাত । বহুবার রক্তের কালোবাজারি সংবাদ শিরোনামে আসতে দেখা গেছে । এই সংকট কাটাতে দীর্ঘ 15 বছর ধরে মানুষকে রক্ত দিতে উৎসাহিত করা, রক্তের কালোবাজারি রুখে দেওয়া, অর্থের বিনিময়ে রক্ত না দেওয়ার বিষয়ে সচেতন করা প্রভৃতি কাজে উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে নুরুল বাবুকে । এই কোরোনা পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে 60 টিরও বেশি রক্তদান শিবিরের আয়োজনে করেন তিনি । সংক্রমণের ভয় কাটিয়ে প্রায় 1800 মানুষজনকে রক্তদান শিবিরে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন তিনি ।
বীরভূম জেলায় তিনটি ব্লাড ব্যাংক রয়েছে । বোলপুর, রামপুরহাট ও সিউড়ি হাসপাতালে । এই তিনটি ব্লাড ব্যাংকে যখনই রক্তের সংকট হয় তখনই ফোন যায় নুরুল হকের কাছে । এছাড়া বীরভূম জেলার যেকোনও প্রান্তে মানুষজনের রক্তের প্রয়োজন হলে নুরুল হককে ফোন করা হয় । এমনকী সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে যখন রক্তের সংকট হলেও ফোন যায় নুরুল সাহেবের কাছে ৷ এমন ফোন পেলেই তড়িঘড়ি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন তিনি ।
নুরুল হক বলেছেন, "রক্তের সংকট তো আছেই । সব থেকে বেশি আমাকে যেটা নাড়া দিয়েছে সেটা হল, টাকার বিনিময়ে একদিন আমার কাছে রক্ত কিনতে চেয়েছিল এক ব্যক্তি । তাই জেলাজুড়ে রক্তদান আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি । রক্তের বিকল্প নেই । মানুষকে রক্ত দানের দিকে এগিয়ে আসা নিয়ে সচেতন করাই আমার মূল লক্ষ্য ।"