ETV Bharat / state

Amartya Sen on Intolerance: বিভাজন-অসহিষ্ণুতা আর বেশি দিন নয়, দাবি অমর্ত্য সেনের - বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ

রবিবার কলকাতায় প্রতীচি ট্রাস্টের উদ্যোগে 'নো ইয়োর নেবার' নামে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় ৷ সেখানে সপ্তম শ্রেণির এক পড়ুয়ার প্রশ্নের উত্তরে অর্মত্য সেন (Amartya Sen) জানান, বিভাজন-অসহিষ্ণুতা (Intolerance) আর বেশি দিন নয় ৷

অর্মত্য সেন
Amartya Sen
author img

By

Published : Jan 9, 2023, 4:31 PM IST

কলকাতা ও বীরভূম, 9 জানুয়ারি: নোবেল জয়ী (Nobel Laureate) অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন (Amartya Sen) রবিবার বলেছেন, ভারতে বর্তমানে যে ‘অসহনশীলতার পরিবেশ’ (Intolerance) বিরাজ করছে, তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ।

কলকাতায় প্রতীচি ট্রাস্ট আয়োজিত 'নো ইয়োর নেবার' শীর্ষক আলোচনায় যোগ দিয়ে এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ (Economist) বলেছিলেন, ‘‘যদি কেউ আপনার মতের সঙ্গে একমত না হয়, অথবা ভিন্ন ধর্মের হন তাহলে তাঁকে মারা হবে, এই পরিস্থিতি বেশিদিন স্থায়ী হতে পারে না । জনগণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে । আমাদের মতভেদগুলো দূরে সরিয়ে রাখতে হবে । আমাদের পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব কমাতে হবে ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দেখতে হবে আমরা কেন পিছিয়ে পড়ছি ৷ সম্ভবত এর একটা বড় কারণ আমরা ক্রমশই ক্ষমা করতে ভুলে যাচ্ছি ।’’

তিনি আরও জানান, অমর্ত্য সেন রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর গবেষণায় উঠে এসেছে বর্তমান বিশ্বে মানসিক যোগাযোগের পথে কাঁটা ধর্মে ধর্মে, জাতিতে জাতিতে ভয়ঙ্কর ভুল বোঝাবুঝি । তিনি বলেন, "এর জন্য দায়ী অশিক্ষা ও অজ্ঞানতাবাদ ।"

সপ্তম শ্রেণীর এক পড়ুয়ার প্রশ্নের জবাবে এদিন অমর্ত্য সেন বলেন, ‘‘বৈচিত্র কি সবসময়ই ভালো ! ইদানীং ভারতকে নানা ধরনের বৈচিত্র গ্রাস করেছে, যা আগে হয়নি । বৈচিত্রের সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই আমাদের দেখতে হবে ।’’ এদিন এই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ তারই বক্তব্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানিয়েছেন, যে ভাবে একাংশের হাতে প্রচুর অর্থ আর অন্যদল অভুক্ত, সেই বৈচিত্র তিনি পছন্দ করেন না ।

এখানেই শেষ নয়, বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে মহাত্মা গান্ধির ভাবনার অবতারণা করেন । তিনি বলেন, ‘‘গান্ধি নিজেও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি-পর্বে বলেছিলেন আমাদের মধ্যে পৃথকীকরণ কমাতে হবে । আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে । অর্মত্য সেনের মতে অন্যকে সম্মান জানানোর ক্ষমতা আমাদের কমছে । আর সেটাই আমাদের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ ।’’

রবিবারের অনুষ্ঠানে মূল বিষয় ছিল হিন্দু ও মুসলমানের পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি । এদিনের অনুষ্ঠানে এই প্রসঙ্গের সঙ্গে সম্পৃক্ত ‘ভারতে হিন্দু-মুসলমানের যৌথ সাধনা’ নামে অমর্ত‌্য সেনের মাতামহ ক্ষিতিমোহন সেনের একটি প্রবন্ধ সংকলনের বিভিন্ন অংশ পাঠ করেন বিশ্বভারতীর অধ‌্যাপক বিশ্বজিৎ রায় । একই সঙ্গে ক্ষিতিমোহনের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির ভাবনা নিয়ে বক্তব‌্য রাখেন তাঁর প্রপৌত্র শান্তভানু সেন । দু’জনেই জোর দেন সমাজ, শিল্প ও সৃজনক্ষেত্রে এ দেশে দুই ধর্মের একযোগে পথ চলার পরম্পরার উপর ।

এদিন অমর্ত্য সেনের এই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছে এই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) । এই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় জানিয়েছেন, সঠিক কথাই বলেছেন এই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ । আসলে অমর্ত্য সেন দেশজুড়ে চলা বিভাজনের সংস্কৃতির সমালোচনা করেছেন । রাজ্যসভার এই সাংসদের ব্যাখ্যা, ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ, ভাষার নিরিখে যে ভাবে বিজেপি (BJP) পুরো দেশকে বিভাজিত করেছে, সেই পরিস্থিতির বদল চেয়েছেন তিনি (অর্মত্য সেন) । আর সে কারণেই এই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি ।

অন্যদিকে সিপিএমের (CPIM) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘একজন প্রকৃত চিন্তাবিদ হিসাবে তিনি তার উপলব্ধির কথা বলেছেন । আমাদের দেশের ঐতিহ্য রবীন্দ্রনাথ নজরুল । আমাদের রাষ্ট্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে বহুত্ববাদের কথা বলা হয় ঐক্যের কথা বলা হয় । সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছেন অমর্ত্য সেন ।’’

অন্যদিকে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) বলেছেন, ‘‘আগে তো দেশের অর্থনীতি নিয়ে কথা বলতেন এখন আর দেশের অর্থনীতি নিয়ে বলেন না বা বলতে চান না । এখন অসহিষ্ণুতা দেখছেন । এখন হয়তো বুঝতে পারেন না । বয়স হয়েছে ।’’ এর পরই তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বয়স হয়ে গিয়েছে চুপচাপ বসুন আর এত কষ্ট করতে কেন এখানে আসেন ?’’

আরও পড়ুন: দেশে জাতিসঙ্কট নিয়ে শঙ্কিত অমর্ত্য সেন, দিলেন দাওয়াই

কলকাতা ও বীরভূম, 9 জানুয়ারি: নোবেল জয়ী (Nobel Laureate) অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন (Amartya Sen) রবিবার বলেছেন, ভারতে বর্তমানে যে ‘অসহনশীলতার পরিবেশ’ (Intolerance) বিরাজ করছে, তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ।

কলকাতায় প্রতীচি ট্রাস্ট আয়োজিত 'নো ইয়োর নেবার' শীর্ষক আলোচনায় যোগ দিয়ে এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ (Economist) বলেছিলেন, ‘‘যদি কেউ আপনার মতের সঙ্গে একমত না হয়, অথবা ভিন্ন ধর্মের হন তাহলে তাঁকে মারা হবে, এই পরিস্থিতি বেশিদিন স্থায়ী হতে পারে না । জনগণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে । আমাদের মতভেদগুলো দূরে সরিয়ে রাখতে হবে । আমাদের পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব কমাতে হবে ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দেখতে হবে আমরা কেন পিছিয়ে পড়ছি ৷ সম্ভবত এর একটা বড় কারণ আমরা ক্রমশই ক্ষমা করতে ভুলে যাচ্ছি ।’’

তিনি আরও জানান, অমর্ত্য সেন রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর গবেষণায় উঠে এসেছে বর্তমান বিশ্বে মানসিক যোগাযোগের পথে কাঁটা ধর্মে ধর্মে, জাতিতে জাতিতে ভয়ঙ্কর ভুল বোঝাবুঝি । তিনি বলেন, "এর জন্য দায়ী অশিক্ষা ও অজ্ঞানতাবাদ ।"

সপ্তম শ্রেণীর এক পড়ুয়ার প্রশ্নের জবাবে এদিন অমর্ত্য সেন বলেন, ‘‘বৈচিত্র কি সবসময়ই ভালো ! ইদানীং ভারতকে নানা ধরনের বৈচিত্র গ্রাস করেছে, যা আগে হয়নি । বৈচিত্রের সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই আমাদের দেখতে হবে ।’’ এদিন এই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ তারই বক্তব্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানিয়েছেন, যে ভাবে একাংশের হাতে প্রচুর অর্থ আর অন্যদল অভুক্ত, সেই বৈচিত্র তিনি পছন্দ করেন না ।

এখানেই শেষ নয়, বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে মহাত্মা গান্ধির ভাবনার অবতারণা করেন । তিনি বলেন, ‘‘গান্ধি নিজেও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি-পর্বে বলেছিলেন আমাদের মধ্যে পৃথকীকরণ কমাতে হবে । আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে । অর্মত্য সেনের মতে অন্যকে সম্মান জানানোর ক্ষমতা আমাদের কমছে । আর সেটাই আমাদের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ ।’’

রবিবারের অনুষ্ঠানে মূল বিষয় ছিল হিন্দু ও মুসলমানের পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি । এদিনের অনুষ্ঠানে এই প্রসঙ্গের সঙ্গে সম্পৃক্ত ‘ভারতে হিন্দু-মুসলমানের যৌথ সাধনা’ নামে অমর্ত‌্য সেনের মাতামহ ক্ষিতিমোহন সেনের একটি প্রবন্ধ সংকলনের বিভিন্ন অংশ পাঠ করেন বিশ্বভারতীর অধ‌্যাপক বিশ্বজিৎ রায় । একই সঙ্গে ক্ষিতিমোহনের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির ভাবনা নিয়ে বক্তব‌্য রাখেন তাঁর প্রপৌত্র শান্তভানু সেন । দু’জনেই জোর দেন সমাজ, শিল্প ও সৃজনক্ষেত্রে এ দেশে দুই ধর্মের একযোগে পথ চলার পরম্পরার উপর ।

এদিন অমর্ত্য সেনের এই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছে এই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) । এই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় জানিয়েছেন, সঠিক কথাই বলেছেন এই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ । আসলে অমর্ত্য সেন দেশজুড়ে চলা বিভাজনের সংস্কৃতির সমালোচনা করেছেন । রাজ্যসভার এই সাংসদের ব্যাখ্যা, ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ, ভাষার নিরিখে যে ভাবে বিজেপি (BJP) পুরো দেশকে বিভাজিত করেছে, সেই পরিস্থিতির বদল চেয়েছেন তিনি (অর্মত্য সেন) । আর সে কারণেই এই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি ।

অন্যদিকে সিপিএমের (CPIM) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘একজন প্রকৃত চিন্তাবিদ হিসাবে তিনি তার উপলব্ধির কথা বলেছেন । আমাদের দেশের ঐতিহ্য রবীন্দ্রনাথ নজরুল । আমাদের রাষ্ট্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে বহুত্ববাদের কথা বলা হয় ঐক্যের কথা বলা হয় । সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছেন অমর্ত্য সেন ।’’

অন্যদিকে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) বলেছেন, ‘‘আগে তো দেশের অর্থনীতি নিয়ে কথা বলতেন এখন আর দেশের অর্থনীতি নিয়ে বলেন না বা বলতে চান না । এখন অসহিষ্ণুতা দেখছেন । এখন হয়তো বুঝতে পারেন না । বয়স হয়েছে ।’’ এর পরই তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বয়স হয়ে গিয়েছে চুপচাপ বসুন আর এত কষ্ট করতে কেন এখানে আসেন ?’’

আরও পড়ুন: দেশে জাতিসঙ্কট নিয়ে শঙ্কিত অমর্ত্য সেন, দিলেন দাওয়াই

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.