রাজনগর (বীরভূম), 20 সেপ্টেম্বর: নদীমাতৃক দেশ ভারতবর্ষ। আর এদেশের মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে আস্ত একটি নদী। নাম কুশকর্ণি বা কুশকর্ণিকা। বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্ত থেকে উৎপত্তি, বীরভূমে বয়ে চলা এই ছোট নদীটি বিলুপ্তির নেপথ্যে প্রধানত রয়েছে বালি-মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য ও প্রশাসনিক গাফিলতি। আর জলধারা নেই, দেখলে মনে হবে মাঠ বা ঝোঁপঝাড়ের মধ্যদিয়ে একটি রেখা বয়ে গিয়েছে। যদিও নদী বাঁচাতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে প্রতিবাদে সরব স্থানীয় মানুষজন, পড়ুয়া থেকে শুরু করে পরিবেশপ্রেমীরা।
যে কোনও নদ-নদী শুধুমাত্র যে জলধারা বহন করে তা নয়। বহন করে ইতিহাস, সভ্যতা, নিদর্শন। নদীমাতৃক দেশ ভারতবর্ষ। সেই দেশের মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে আস্ত একটি নদী। বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে দুটি পাহাড়ি গ্রাম আছে ৷ বীরভূম জেলার চয়নপুর ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বহিঙ্গা। এই দু'টি গ্রামে পাহাড়ের কোণ থেকে নেমে এসেছে একটি ছোট নদী। নাম কুশকর্ণি বা কুশকর্ণিকা। যার অর্থ নবাগত কুশের আগা। নদীটি বীরভূম জেলার রাজনগরের জয়পুর, গাংমুড়ি বয়ে ময়ূরাক্ষী নদীতে মিশছে। তাই এটি ময়ূরাক্ষী নদীর উপনদী। প্রায় 33 কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদীটির ৷
নদীটি বিলুপ্তির মূল কারণগুলি হল অবাধে বেআইনি ও অবৈজ্ঞানিকভাবে নদী বক্ষ থেকে বালি তোলা, নদীর পাড় কেটে মাটি পাচার, ভূমি সংস্কারের অভাব, প্রশাসনিক নজরদারির অভাব প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে জনসচেতনতার অভাব ৷ নদীর দুই তীর বরাবর একাধিক ইটভাটা রয়েছে। এই ভাটাগুলি নিজেদের প্রয়োজনে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নদীর পাড় কেটে মাটি নিয়ে যায়। এমনকী, ইট ভাটার ছাই এসে পড়ে নদীতে। ফলে যত দিন গিয়েছে নদীটি কার্যত সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
আজ এই কুশকর্ণি জলধারা বহন করে না। দেখলে মনে হবে মাঠ, ঝোঁপঝাড়ের মধ্য দিয়ে একটি রেখা রয়ে গিয়েছে। চতুর্দিক আগাছায় ঢেকেছে ৷ শুষ্ক নদীবক্ষ চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। তবে এই নদীটি বাঁচাতে বহুদিন থেকে সরব স্থানীয় মানুষজন, আদিবাসী মানুষজন, পড়ুয়ারা, পরিবেশপ্রেমী মানুষও। একাধিকবার নদী সংস্কারের দাবিতে রাজনগর বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে ডেপুটেশন দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু, কোনও ফল যে হয়নি তা নদীটি দেখেই বোঝা যায়। তবে নদীর তীরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গাছ লাগানোর মধ্য দিয়ে নদী বাঁচানোর আন্দোলন চালিয়ে যায় তারা।
স্থানীয়দের মধ্যে শিবম বন্দ্যোপাধ্যায়, সঞ্জয় গড়াই, সৌগত চৌধুরী বলেন, "আমাদের এই কুশকর্ণি নদী হারিয়ে যাচ্ছে। নদী ধ্বংস হওয়ার কারণ বালি মাফিয়ারা বালি তুলে নিচ্ছে, মাটি কেটে নিচ্ছে। নদীর ভূমিরূপ সংস্কার প্রয়োজন। ছোট ছোট নদী না-বাঁচলে বড় নদী গঙ্গা বাঁচবে কী করে? বড় নদীর জলের উৎস এই ছোট নদীগুলোই। আমরা প্রশাসনকে বহুবার জানিয়েছি নদীটি সংস্কার করে পূর্বরূপ দিতে।" রাজনগর ব্লকের বিডিও শুভদীপ পালিত বলেন, "একটি নদীকে তো হারিয়ে যেতে দেওয়া যায় না। এখানকার মানুষজন আমাকে জানিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত নদী সংস্কারে হাত দিতে। তবে বালি, মাটি কেটে নেওয়া রুখতে উদ্যোগ নিয়েছি, পুলিশকেও সতর্ক থাকতে বলেছি। নদী বাঁচাতে যা যা করণীয় আমরা করব।"
আরও পড়ুন: ভারতের মানচিত্রে অস্তিত্ব নেই 5 গ্রামের, নাগরিক হয়েও জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত স্থানীয়রা