বোলপুর/কলকাতা, 25 জুলাই: সদ্য একুশের মঞ্চে বক্তব্য রেখে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়েছেন তৃণমূলের নতুন মুখ রাজন্যা হালদার । বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি দৃপ্তকণ্ঠে একটি স্লোগান দেন, যা নিয়ে সোশাল নেটওয়ার্ক সাইটে শুরু হয়েছে জোর তর্জা । এবিভিপি দাবি করেছে স্লোগানটি তাদের । তৃণমূল কংগ্রেসকে 'স্লোগান চোর' বলেও কটাক্ষ করেছে তারা ৷ আবার এসএফআইয়ের দাবি, এই স্লোগান আসলে তাদের ৷ এই স্লোগানকে ঘিরে যুযুধান তিন রাজনৈতিক দলের মধ্যে তর্জা শুরু হওয়ায় স্লোগানটির ইতিহাস খুঁজে দেখল ইটিভি ভারত ।
যে স্লোগান নিয়ে বিতর্ক: 'জুলমি জব জব জুলম করেগা সাত্তা কি হাতিয়ারো সে, চপ্পা চপ্পা গুঞ্জ উঠেগা ইনকিলাব কি নাড়ো সে, ইনকিলাব জিন্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ ।' বিতর্কের সূত্রপাত এই স্লোগানকে ঘিরে ৷
কী বলছেন ইতিহাসের অধ্যাপক: বিশ্বভারতীর ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক বিদ্যুৎ পাতর জানান, এটি একটি উর্দু কবিতা ৷ এই কবিতায় যে শব্দটি রয়েছে 'ইনকিলাব', এই শব্দটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোনলনের একজন সক্রিয় কর্মী তথা উর্দু কবি হসরত মোহানির লেখা । মূলত 1921 সালে এই শব্দটি তাঁর লেখায় বেশি পাওয়া যায় । তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ৷ কিন্তু, এই 'ইনকিলাব' স্লোগান বা শব্দটি জনপ্রিয়তা পায় বিপ্লবী ভগৎ সিং-এর হাত ধরে ৷ বামপন্থী সংগঠন হিন্দুস্থান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনেরও মূল স্লোগান ছিল 'ইনকিলাব'। পরবর্তীতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি এই স্লোগান বা শব্দ বারবার ব্যবহার করেছে ।
'ইনকিলাব শব্দ দক্ষিণপন্থীদের নয়': এ ছাড়া, স্বাধীন ভারতে 1970-এর দশকে তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধি সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জয়প্রকাশ নারায়ণ মুভমেন্ট বা 'জেপি মুভমেন্ট' হয়েছিল । এই সময় 'জুলমি জব জব জুলম করেগা সাত্তা কি হাতিয়ারো সে' স্লোগানটি ব্যপক ভাবে ব্যবহার হয়েছে ও জনমানসে সাড়া ফেলেছে । অর্থাৎ, সমাজতান্ত্রিক জয়প্রকাশ নারায়ণের 'সম্পূর্ণ বিপ্লব'-এর ডাকে দেশজুড়ে ছাত্র সংগঠনগুলি পথে নামে । সেই সময় বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি এই স্লোগান ব্যবহার করে । তাই এই স্লোগানের শেষে যে 'ইনকিলাব' শব্দ আছে তা কখনওই দক্ষিণপন্থীদের নয় বলে মনে করেন বিশ্বভারতীর অধ্যাপক বিদ্যুৎ পাতর ।
আরও পড়ুন: মাথায় চুল কেটে লেখা মমতা-অভিষেক, পায়ে হেঁটে কলকাতার পথে বর্ধমানের শের আলি
তিনি আরও জানান, জেপি মুভমেন্টের উপর লেখা জনপ্রিয় একটি হিন্দি উপন্যাস ব্যাস মিশ্রের লেখা 'কৌন তার সে বনি চাদরিয়া'। এই উপন্যাসেও এই স্লোগান কবিতাটির উল্লেখ রয়েছে । সেখানেও দেখা যাচ্ছে, জেপি মুভমেন্টের সময় অংশগ্রহণকারী বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলিই এই স্লোগান ব্যবহার করছে ।
স্লোগানে মমতা-অভিষেকের নাম জোড়েন রাজন্যা: উল্লেখ্য, 21 জুলাই ধর্মতলায় শহিদ স্মরণ সভামঞ্চে বক্তব্য রাখেন সিএমসিপি নেত্রী রাজন্যা হালদার । রাতারাতি তিনি জনপ্রিয়ও হয়ে যান । বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, 'জুলমি জব জব জুলম করেগা সত্তা কি হাতিয়ারো সে, চপ্পা চপ্পা গুঞ্জ উঠেগা মমতা দিদি কি নাড়ো সে ।" অর্থাৎ, স্লোগানের শেষ শব্দ 'ইনকিলাব' বদলে দেন তিনি । এরপরেই শুরু হয় তর্জা ৷
স্লোগান চোর বলে কটাক্ষ বিজেপির: ভারতীয় জনতা পার্টি ও অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ তাদের বিভিন্ন সোশাল সাইট থেকে তৃণমূলকে 'স্লোগান চোর' বলে কটাক্ষ শুরু করে । এমনকী, তারা পালটা একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে, তাতে দেখা যাচ্ছে বিজেপির কোনও এক নেত্রী একই স্লোগান দিচ্ছেন । কিন্তু, শেষের 'ইনকিলাব' শব্দ বদলে দিয়ে 'ভারতমাতা কি নাড়ো সে' বলছেন ৷
রাজন্যার জবাব: যদিও এবিভিপি-র দাবি মানতে নারাজ রাজন্যা ৷ ইটিভি ভারতকে তিনি বলেন, এটা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ের স্লোগান ৷ এরপর নানা জন নানা ভাবে এই স্লোগানকে ব্যবহার করেছে ৷ আর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে এই স্লোগানের সঙ্গে মমতা ও অভিষেকের নাম জুড়ে দেওয়াটা একেবারেই স্বতস্ফূর্ত ও যথাযথ ছিল, যা উপস্থিত জনতার মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে বলে দাবি করেন তিনি ৷
এসএফআইয়ের জবাব: এসএফআইয়ের কলকাতা জেলার সভাপতি দেবাঞ্জন দে এ প্রসঙ্গে বলেন, "পশ্চিমবাংলার ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস ঘাঁটলেই বোঝা যাবে কোন স্লোগান কাদের ৷ একুশে জুলাই বড় বড় চোরেরা মঞ্চে বসে থাকে ৷ গত বছর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ আলো করে বসেছিলেন ৷ আর এ বছর তিনি জেলের ভেতরে বসে আছেন ৷ এত যখন আওয়াজ তখন তারা ছাত্র সংসদ নির্বাচনটা ঘোষণা করুক তৃণমূল ৷ ক্যাম্পাসের ভেতরে কাদের লড়াই জিতবে তা মানুষের সামনে চলে আসবে ৷"