বোলপুর, 23 জুলাই: 'মাহালী' জনজাতির মূল পেশা ও শিল্পকর্ম হল বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি সামগ্রী ও কারুকার্য ৷ দেশ-বিদেশে এই শিল্পকর্মের প্রসার ও প্রচারের উদ্যোগ নিল ভারতীয় ডাক বিভাগ ৷ এই জনজাতির শিল্পসত্ত্বাকে সম্মান জানাতে এবং তাঁদের আয়ের মুখ দেখানোর উদ্দেশ্যে ডাক টিকিট-সহ খাম প্রকাশ করল ডাক বিভাগ ৷ দেশের মধ্যে বোলপুর-শান্তিনিকেতন থেকেই এই উদ্যোগ নিল জনসংযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ভারতীয় ডাক বিভাগ ৷
প্রাচীন কাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী জনজাতি হল 'মাহালী' ৷ পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে মূলত বসবাস করেন মাহালী জনজাতির লোকজন ৷ বাংলাদেশেও রয়েছে মাহালী জনজাতির মানুষ ৷ এই গোষ্ঠীর মানুষের মূল পেশা হল বাঁশ দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করা ৷ পাশাপাশি বাঁশের শিল্পকর্ম প্রস্তুত করেন এই জনজাতির মানুষজন ৷ যেমন বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি কুলো, টুপি, ঝুড়ি, ফুলের সাজি, ডালা, ল্যাম্প সেট-সহ বিভিন্ন ধরনের ঘর সাজানোর সামগ্রী ৷
মাহালী জনজাতির শিল্পকর্মকে সম্মান জানাতে এবং তাঁদের শিল্প সামগ্রীর দেশ-বিদেশে প্রসার ঘটাতে উদ্যোগ নিয়েছে ভারতীয় ডাক বিভাগ ৷ সেই উপলক্ষে বোলপুর উচ্চবিদ্যালয়ের গীতবিতান সভাগৃহে জনসংযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ডাক বিভাগ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ৷ সেখানে মাহালী জনজাতিকে সম্মান জানাতে প্রকাশিত হল ডাক টিকিট-সহ খাম ৷ সেই খামের উপরে রয়েছে একটি ছবি ৷ যেখানে দেখা যাচ্ছে এক মাহালী জনজাতির মহিলা শিল্পী ব্যস্ত বাঁশের কঞ্চি দিয়ে নানান সামগ্রী তৈরি করছেন এবং তাঁর আশেপাশে তৈরি নানান সামগ্রী রয়েছে ৷
এই কভার প্রকাশের জন্য ভারতীয় শিল্প, সংস্কতি ও সাহিত্যের অন্যতম পীঠস্থান বোলপুর-শান্তিনিকেতনকেই বেছে নিয়েছে ভারতীয় ডাক বিভাগ ৷ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডাক বিভাগের কলকাতা রিজিয়নের পোস্ট মাস্টার জেনারেল সঞ্জীব রঞ্জন, ডিএসপি বিপাশা সিংহ এবং গৌরব সিংহ ৷ এছাড়াও ছিলেন মাহালী ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক কালাচাঁদ মাহালী এবং মাহালী জনজাতির শিল্পীরা ৷ জানা গিয়েছে, বাঁশের তৈরি সামগ্রীগুলি দেশ-বিদেশে বিক্রির ব্যবস্থাও করবে ডাক বিভাগ ৷ সেই টাকা ডাক বিভাগের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে সংশ্লিষ্ট শিল্পীর অ্যাকাউন্টে ৷ ডাক বিভাগের এই স্বীকৃতিতে খুশি মাহালী শিল্পী-সহ জনজাতির মানুষজন ৷
আরও পড়ুন: রাজ্য থেকে সেরা রেশম সুতো উৎপাদক কালিয়াচকের আনসারুল শেখ
ডাক বিভাগের কলকাতা রিজিয়নের পোস্ট মাস্টার জেনারেল সঞ্জীব রঞ্জন বলেন, "মাহালী জনজাতির শিল্প সামগ্রীকে মর্যাদা দিতে ও দেশ-বিদেশে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ৷ তার জন্য একটা বিশেষ কভার প্রকাশ করা হল ৷ ডাক বিভাগই তাঁদের শিল্পসামগ্রী বিক্রি করবে ৷ সেই টাকা তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে ৷ শান্তিনিকেতন হল শিল্পের জায়গা ৷ তাই তাঁদের সম্মান জানাতে দেশের মধ্যে শিল্পের এই স্থানকে বেঁছে নেওয়া হল ৷"
মাহালী জনজাতির ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক কালাচাঁদ মাহালী বলেন, "আমরা খুবই খুশি ৷ মাহালী জাতি নতুন করে একটা পরিচিতি পেল ভারতীয় ডাক বিভাগের মাধ্যমে ৷ বাঁশ হল পচনশীল, দূষণ হয় না ৷ তাই মাহালী জনজাতির তৈরি বাঁশশিল্পের চাহিদা বেশি ৷ সেগুলি এবার আরও প্রচার পাবে, এটাই খুশির বিষয় ৷"