বোলপুর ও কলকাতা, 4 এপ্রিল: পাঠ্যপুস্তক থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তে নিন্দার ঝড় পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামহলে ৷ এতে শুধুমাত্র যে পড়ুয়াদের ক্ষতি হবে না নয়, হারিয়ে যাবে কমপক্ষে 300 বছরের ইতিহাস । ইতিহাস বদলই কেন্দ্র সরকারের মূল উদ্দেশ্য, এমনটাই বলছেন অনেকে । ইতিমধ্যে, ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (NCERT)-এর নির্দেশ অনুযায়ী উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ সরকার দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিয়েছে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস ।
উল্লেখ্য, 'এলাহাবাদ' হয়ে গিয়েছে 'প্রয়াগরাজ'। মহারাষ্ট্রের দুই ঐতিহাসিক শহর 'ঔরঙ্গাবাদ' ও 'ওসমানাবাদ'-এরও বিকল্প নাম তৈরি হয়েছে 'ছত্রপতি শম্ভাজিনগর' ও 'ধারাশিব' । এমনকী দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনের ভিতরে 'মুঘল গার্ডেন'-এর নাম পরিবর্তন করে নাম দেওয়া হয়েছে 'অমৃত গার্ডেন'। এবার পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস । ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে অন্তর্গত পাঠ্যক্রমে থাকছে না আকবর-বাবর-শাহজাহানদের কথা ৷ বিশেষ করে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ পড়ছে মুঘল ইতিহাস। 2023-24-এর শিক্ষাবর্ষ থেকে লাগু হচ্ছে নতুন পাঠ্যক্রম । ইতিমধ্যে ঘোষণা করে এই পাঠ্যক্রম গ্রহণ করেছে মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার । যদিও, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনও এই পাঠ্যক্রমকে স্বীকার করেনি ৷
সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস, এমনটাই মনে করছেন এ রাজ্যের শিক্ষাবিদরা ৷ এর ফলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে ৷ বদলে যেতে পারে সুফি গানের ইতিহাস ও চর্চা, মুঘল স্থপতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বিকৃত হতে পারে স্থাপত্যের ইতিহাস । কারণ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে মুঘল ইতিহাসের বহু নিদর্শন, স্থাপত্য, শৈলি।
তাই কেন্দ্র সরকারের এই সিদ্ধান্তে নিন্দার ঝড় উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা মহলে ৷ ইতিহাস বদলে দিতে ও 300 বছরের ইতিহাস লোপাট করতেই এই সিদ্ধান্ত বলেই নিন্দামুখর বাংলা ৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সদস্য তথা শিক্ষাবিদ সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, "এরা চায় না আমরা আমাদের অতীতকে জানি । মুসলমান শাসকরা যাতে ইতিহাসে না থাকে এটাই উদ্দেশ্য । ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত মুঘলরা ৷ পাঠ্যপুস্তক থেকে সেই ইতিহাস বাদ গেলে ক্ষতি হবে পড়ুয়াদের ৷ ভারতবর্ষের ইতিহাসকে বদলাতে পারবে না । তাও চেষ্টা করে চলেছে।"
আরেক শিক্ষাবিদ দেবাশিস সরকারের কথায়, "ইতিহাস হল সেই বিষয় যাকে আমরা সময়ের ধারাবাহিক হিসাবে বিচার করি । ফলে কোনও সময়ে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রের পছন্দ অনুযায়ী কোনও বিষয় রাখা ও না-রাখা কখনও হতে পারে না । এমনকি রাষ্ট্র এমন কিছু কাজ করবে না বলেই আমাদের ধরে নিতে হবে । কারণ রাষ্ট্র কখনওই খন্ডিত ইতিহাস বিকৃত করতে পারে না ৷ এর ফলে আগামিদিনে পড়ুয়ারা ইতিহাসের একটা বড় অংশ থেকে বাদ পড়বে । তারা জানতে পারবে না মুঘলদের শাসনব্যবস্থা থেকে শুরু করে তাঁদের সবকিছুই ৷ এটা কখনওই করা উচিত নয় । শিক্ষাব্যবস্থা এ ধরনের কোনও পরিকল্পনা আগে গ্রহণ করেনি, এখনও করবে না ।"
আরও পড়ুন : সিলেবাসে বদল, দ্বাদশ শ্রেণির এনসিইআরটির বইতে ব্রাত্য 'বাবর-আকবর-শাহজাহান'রা !