কলকাতা, 11 অক্টোবর : প্রতারণার প্রতিশোধ নিতে অপহরণ বললে একটুও ভুল হবে না ৷ চাকরি দেওয়ার নামে দিনের পর দিন টাকা তুলছিল এক ব্যক্তি ৷ কিন্তু প্রতিকার কী? অতএব অপহরণের পরিকল্পনা ৷ না, কোনও সিনেমার গল্প নয় ৷ বাস্তবে এমনটাই ঘটেছে ৷ তিন পুলিশ ও এক BSF জওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে এই ছক কষেন প্রতারিত ব্যক্তি নিজেই ৷ গতকাল দিনের আলোয় কলকাতার চাঁদনি চকে ই-মলের সামনে থেকে অপহরণ করা হয় ওই প্রতারককে ।
ই মলের সামনে থেকে একটি বোলেরোতে জোর করে ওই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যেতে দেখে 100 ডায়ালে ফোন করেন এক ব্যক্তি । মুহূর্তে তৎপর হয় কলকাতা পুলিশ । ই-মলের সামনেই রয়েছে ট্রাফিক বিভাগের CCTV ক্যামেরা । দ্রুত সেই ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে চিহ্নিত করা হয় গাড়িটি । সেই সূত্র ধরেই বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা । ঘটনায় তিন পুলিশ কর্মী, এক BSF জওয়ান ও গাড়ির ড্রাইভার-সহ সাত জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । অভিযোগ, নিজেদের সরকারি পরিচয় এবং সার্ভিস রিভলবার এই অপহরণে ব্যবহার করেছে ওই চারজন ।
লালবাজার সূত্রের খবর, গতকাল দুপুরে এই অপহরণ ঘটে । সৌমেন বসু নামে এক ব্যক্তি সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা তুলেছিল বেকার যুবকদের থেকে । কিন্তু সেই চাকরি তাঁরা পাননি । বারবার বলা সত্ত্বেও সৌমেন টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছিল না । প্রতারিতদের মধ্যে একজন অভিজিৎ ঘোষ । তাঁর দাবি, সৌমেনকে এক কোটি টাকা চাকরির জন্য দিয়েছিল সে । বারবার বলা সত্ত্বেও টাকা ফেরায়নি সৌমেন । তখন অভিজিৎ অপহরণের ছক কষে । অপহরণের জন্য দলে নেয় তিন পুলিশকর্মী এবং এক BSF জওয়ানকে । ওই তিন পুলিশ কর্মীর মধ্যে শ্যামল মণ্ডল এবং জ়াকির খান কলকাতা পুলিশের কমব্যাট ফোর্সের সদস্য । অপর জন মহম্মদ হানিফ রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য । এই দলে যোগ দেয় BSF জওয়ান আমির হোসেনও । দলে ছিল মনজ়ারুল হক নামে অপর এক ব্যক্তি । সঙ্গে বোলেরো গাড়ির ড্রাইভার শেখ সুলেমন । দলটি গতকাল অভিজিতের নেতৃত্বে ই-মলের সামনে থেকে অপহরণ করে সৌমেনকে । অভিজিৎ ঘোষ ও শ্যামল মণ্ডলের বাড়ি মালদার ইংলিশ বাজারে । জ়াকির খান, মহম্মদ হানিফ, মনজারুল হক, আমির হুসেনের বাড়ি বীরভূমের লাভপুর থানার দরবারপুর গ্রামে ।
কলকাতা পুলিশ বোলেরো গাড়ির নম্বর প্লেট দেখে বুঝতে পারে, সেটি বীরভূমের । খবর দেওয়া হয় বীরভূম জেলা পুলিশকে । বীরভূমের জেলা পুলিশ গতরাতে নাকা চেকিং চালায় এলাকায় । উদ্ধার করা হয় অপহৃত সৌমেনকে । ঘটনায় গাড়িচালক সহ সাত জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে লাভপুর থানার পুলিশ । তাদের আজ বউবাজার থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে । সৌমেনের নামেও অন্য একটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি 7 এম এম পিস্তল ।