বিষ্ণুপুর, 13 জুন : বিষ্ণুপুর মানেই বালুচরি শাড়ি, টেরাকোটা শিল্প আর সারি সারি মন্দির । বাংলায় সুলতানি শাসন থেকে শুরু করে ইংরেজ শাসন সব কিছুর সাক্ষী থেকেছে এই মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর ৷ শহরের আনাচে কানাচে ইতিহাসের ছড়াছড়ি । সবার দৃষ্টির অগোচরে এখনও কত ইতিহাস লুকিয়ে আছে তা জানা নেই কারোর ৷
মল্ল কথার অর্থ মুষ্টিযুদ্ধ । সেখান থেকেই রাঢ়বঙ্গের একাংশের নাম হয়েছিল মল্লভূম । আবার অনেকের মতে, স্থানীয় মল্ল আদিবাসীদের থেকেই এই নামকরণ । এই ভূমির প্রথম মল্ল শাসক ছিলেন আদি মল্ল । তিনি ছিলেন বিষ্ণুর উপাসক ৷ সেখান থেকেই এই শহরের নাম হয় বিষ্ণুপুর ।
এই নগরীর দলমালদল কামান, জোড় বাংলো, মদনমোহন মন্দির সহ আরও অনেক স্থাপত্য ও টেরাকোটা শিল্পের টানে সারা বছর ধরে পর্যটকরা আসেন । 2011 সালে পালাবদলের পর এর গরিমা আরও বাড়ে ৷ কিন্তু বর্তমানে করোনার প্রকোপে স্তব্ধতা গ্রাস করেছে মন্দিরনগরীকে ৷
2021-র শুরুর দিকে স্বমহিমায় ফিরলেও ফের করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কার্যত বিপর্যস্ত এখানকার পর্যটন৷ নীরবতার চাদরে ঢেকেছে গোটা শহর ৷ চরম সমস্যায় পড়েন এলাকার টুরিস্ট গাইড থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা৷ কারণ এই পর্যটনের উপর নির্ভর করেই তাঁদের সংসার চলে ৷
তালা পড়েছে শতাব্দী প্রাচীন স্থাপত্যগুলিতে ৷ বন্ধ হয়েছে সাপ্তাহিক পোড়ামাটির হাট ৷ পর্যটক থেকে শুরু করে শহরবাসী সবাই দিন গুনছেন কবে দেশ সুস্থ হয়ে আবার নতুনভাবে সব কিছু শুরু হবে ।
আরও পড়ুন : রোনাল্ডো অনুপ্রেরণা, নিজেকে প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বায়ার্ন যাচ্ছেন হাওড়ার শুভ
দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় নামে এক টুরিস্ট গাইড আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘‘এই বিষ্ণুপুরে এত অসংখ্য মন্দির, প্রতিটা মন্দির শিল্প, সাহিত্য ভরপুর ৷ মানুষজন না এলে এই ইতিহাস আমরা কাকে শোনাব বলুন? আমরা বিভোর হয়ে বসে আছি, দিনযাপন করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷’’
দ্বিগ্বিজয় দে নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আমাদের রুজি-রোজকার সবই পর্যটক নির্ভর ৷ এখন পর্যটন শিল্প পুরো বন্ধ ৷ আমারা যদি সরকারি কোনও সাহায্যে পাই খুব উপকৃত হব ।’’
সবে মিলে এই মল্লগড় বিষ্ণুপুরের চিত্রটা পর্যটন নির্ভর মানুষগুলোর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ৷ তবে আশাবাদী তাঁরা, খুব শীঘ্রই মন্দিনগরীর তালা খুলে যাবে ৷