সোনামুখী, 26 নভেম্বর : বয়স ষাটের কোঠা পার করে গেলে ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের নিয়ে সুখের জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখেন অধিকাংশ মানুষ ৷ পেনশনের টাকায় বাকি জীবনটা আরামে কাটিয়ে দিতে চান প্রবীণ-প্রবীণারা ৷ যে পরিশ্রমটা তো এতকাল যাবৎ করে এসেছেন তা আর কেন ? এই ভেবেই জীবন এগোয় । কিন্তু সেই গতানুগতিক ধ্যানধারণাকে পাল্টে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন 69 বছরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিকাশ রায় (retired teacher makes wooden crafts)। অঢেল সময়টাকে সৃষ্টিশীল কাজে মনোনিবেশ করেছেন ৷ ছোটবেলা থেকেই হস্তশিল্পের দিকে ঝোঁক ৷ তাই অবসর মিলতেই হাতে ছেনি, হাতুড়ি তুলে নিয়েছেন ৷ ষাটোর্ধ্ব মানুষটির হাতের কারুকার্যে যেন প্রাণ পাচ্ছে স্লেট, কাঠ (69 year old teacher makes wooden crafts ) ৷
বাঁকুড়ার সোনামুখীর নীল বাড়ি এলাকায় বাস বিকাশ রায়ের ৷ দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করার সুবাদে এলাকায় মাষ্টারমশাই নামেই পরিচিত ৷ সোনামুখীর এই মাস্টারমশাই অবশ্য বরাবরই শিল্পমনস্ক ৷ বাড়িতে গানবাজনার পরিবেশ রয়েছে ৷ নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে ভালোবাসেন ৷ আবার হাতুড়ি, বাটালির সাহায্যে কাঠের উপর খোদাই করে নানা কারুকার্য করেন ৷ শিক্ষকতার পাশাপাশি পছন্দের কাঠ, স্লেট দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেন ৷ মায়ানমার থেকে গ্রামার কাঠ আনান বিকাশবাবু ৷ সেই কাঠ দিয়ে তৈরি করেছেন পরিবার-সহ দুর্গা, গণেশ, শিব ইত্যাদির মূর্তি ৷ কাঠের ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন নাগরিক জীবনের ছবি ৷ নয় বছর আগে অবসর নেওয়ার পর দিন রাত এই কাজেই ব্যস্ত থাকেন বিকাশবাবু ৷
আরও পড়ুন : Durga Idol with Match Box: দেশলাই কাঠির দুর্গা প্রতিমা বানিয়ে রেকর্ড লাইব্রেরিয়ানের
আদতে বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীর মানুষ বিকাশ রায় ৷ কিন্তু ছেলেবেলার অনেকটা সময় কেটেছে কলকাতার বাগবাজারে ৷ সেখান থেকে কুমোরটুলির সামনে হওয়ায় সেখানে চলে যেতেন । সেখান থেকেই হস্তশিল্পের প্রতি ঝোঁক শুরু ৷ এখন বাড়ির বৈঠকখানা লাগোয়া একটি ছোট্ট স্টুডিও বানিয়ে ফেলেছেন ৷ বিকাশবাবু জানান, তাঁর ভাল থাকার রসদ হল বাটালি-হাতুড়ি, হাওয়াইন গিটার, বেহালা ৷ এদের জন্যই হয়তো অবসর জীবন কিছুটা হলেও রঙিন হয়ে উঠেছে । স্ত্রী, দুই ছেলে, এক বৌমা এবং নাতিকে নিয়ে বিকাশবাবুর পরিবার ৷ তিনি আরও জানান, তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তাঁর ছেলেরাও শিল্প সৃষ্টির মধ্যেই পথ চলছে ।
শিল্পী বলেন, "আমি দেখেছি অবসর গ্রহণের পর বন্ধুবান্ধব অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ৷ কিন্তু অবসাদগ্রস্ত হওয়ার দূরের কথা আমি সারাদিন সময়ই পাই না ৷" বাকি জীবনটা হস্তশিল্প ও গানবাজনা নিয়ে কাটিয়ে দিতে চান বিকাশবাবু । পাশাপাশি অবসাদ রুখতে সমবয়সী মানুষদের সৃষ্টিশীল কাজে নিয়োজিত হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : Handloom Weavers of Bankura : যন্ত্রের দাপটে কর্মহীন তাঁতিরা, ধুঁকছে বাঁকুড়ার রাজগ্রাম
