বাঁকুড়া, 10 নভেম্বর: নিকাশি নালায় জমা জলের উপর ভাসছে প্লাস্টিক ও আবর্জনা । কোথাও নালায় জমে আগাছা, আবার কোথাও জল আটকে নালায় । আর তা থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধও । জমা জলে লার্ভা থেকে মশা তৈরি হচ্ছে । আর এই মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ বাঁকুড়ার মেজিয়া শিল্পাঞ্চলবাসী । এলাকায় সন্ধ্যা হলে বাড়ছে মশার উপদ্রব । মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে দিনেও মশারি টাঙাতে হচ্ছে । মেজিয়া শিল্পাঞ্চল এলাকায় নিকাশি নালার এমনই বেহাল দশা বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর (Mejia residents of Bankura in fear of Dengue)।
মেজিয়া ব্লকের 5টি পঞ্চায়েতের মধ্যে রয়েছে মোট 78টি গ্রাম । বর্তমানে প্রায় অধিকাংশ গ্রামের নিকাশি নালায় জমে রয়েছে আবর্জনা । সংস্কারের অভাবে মজে গিয়েছে বিভিন্ন নালা । ফলে দুর্গন্ধের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মশার উপদ্রব । স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গ্রামগুলিতে বিগত বৎসরগুলোয় মশার উপদ্রব তেমন বেশি ছিল না । কিন্তু বর্তমানে মশার উপদ্রবে ঘুম ছুটেছে এলাকাবাসীর । মূলত অপরিষ্কার নালা ও আবর্জনাই শিল্পাঞ্চলে মশার আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত । মশার হাত থেকে বাঁচতে অনেক বাড়ির জানলাতেই লাগানো রয়েছে জাল । তবে তাতেও অবশ্য রেহাই মেলা ভার ।
অভিযোগ, মেজিয়া ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে নিকাশি নালাগুলি দীর্ঘ প্রায় 5-7 বছর ধরে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হয়নি । ফলে দুর্গন্ধ-সহ মশার আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে এলাবাসীদের । মেজিয়ার রামচন্দ্রপুর অঞ্চলের রানীপুর গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু দাস বলেন, "দীর্ঘ 5-7 বছর ধরে আমার গ্রামের নিকাশি নালাটি পরিষ্কার হয়নি সরকারের তরফ থেকে । মাঝে বেশ কয়েকবার গ্রামবাসীদের উদ্যোগেই পরিষ্কার করা হয়েছিল নালাটি । কিন্তু গত দু'বছর ধরে করোনার জেরে তাও বন্ধ । বর্তমানে নালার জমা জল থেকে বাড়ছে মশার উপদ্রব । মশার কারণে অন্ধকার নামার পরে খোলা জায়গায় বসে থাকাই দায় । বাড়িতেও মশা মারার ওষুধ, মশারি ব্যবহার করতে হয় । বর্তমানে যেভাবে ডেঙ্গি (Dengue) বাড়ছে তাতে আমরা আতঙ্কে আছি ।"
মেজিয়া অঞ্চলের বাসিন্দা শম্পা চরণ দুবে বলেন, "মশার উপদ্রবে দিনের বেলায় মশারি টাঙাতে হচ্ছে । পঞ্চায়েত থেকে মশা মারার ঔষধ দিলেও দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে গ্রামের নালাগুলি পরিষ্কার করা হয়নি । শেষ কবে নালা পরিষ্কার হয়েছে মনে নেই । তাই বছর বছর মশার উপদ্রব বাড়ছে ।" সব মিলিয়ে বাসিন্দাদের আশঙ্কা, মশার উপদ্রব কমানোর জন্য যদি এখনই সতর্ক না হওয়া যায়, তাহলে ডেঙ্গি হানা দিতে পারে মেজিয়াতেও । অন্যদিকে মেজিয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি রবিলোচন গোপের দাবি, "নিকাশি নালা পরিষ্কার ও মশা দমনে নর্দমায় ঔষধ স্প্রে করার কাজ জোর কদমে চলছে ৷ জেলার অন্যান্য ব্লকগুলির তুলনায় মেজিয়ায় ডেঙ্গি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ।"
বাঁকুড়া জেলার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দফতর বেশ উদ্বিগ্ন ফলে পরিস্থিতি কিছুটা আয়ত্তে । তবু আতঙ্ক যেনও পিছু ছাড়ছে না । এ বিষয়ে বাঁকুড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ড. শ্যামল সরেন বলেন, "এখনও বিভিন্ন ব্লকে ব্লকে ডেঙ্গি আক্রান্তের হদিশ মিলছে ৷ প্রথম মানুষকে সচেতন থাকতে হবে এ বিষয়ে ৷ নালা-নর্দমাগুলোকেও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, যাতে লার্ভার সৃষ্টি না হয় ।"
আরও পড়ুন: ঠান্ডা পড়লে ডেঙ্গি কমে যাবে, এখন সাবধানে থাকুন; নদিয়ায় সতর্কবার্তা মমতার
ইতিমধ্যেই ছ'জন ডেঙ্গি আক্রান্তের হদিশ মিলেছে মেজিয়া এলাকায় । এই পরিস্থিতিতে যেন আতঙ্কের প্রহর গুনছে পুরো মেজিয়া শিল্পাঞ্চলের মানুষজন ৷ তারা বারবার চাইছেন প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে নালাগুলো পরিষ্কার করা হোক ৷ যাতে ডেঙ্গির মশার বাড়-বাড়ন্ত না হয় ।