বাঁকুড়া, 20 মে : আমফানের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে খোলা মাঠে তাঁবুর ভিতর দিন কাটাচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের একটি দল । 15 মে ওড়িশা থেকে বাঁকুড়ার লক্ষ্মীসাগর এর ডাঙাপাড়ার 6 জন সাইকেলে করে ফিরে আসেন জেলায় । ডাক্তারি পরীক্ষার পর তাঁদের হোম কোয়ারানটিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় । কিন্তু এলাকাবাসী তাঁদের গ্রামে ঢুকতে না দেওয়ায় গত 6 দিন তাঁরা খোলা মাঠে তাঁবুতে দিন কাটাচ্ছেন ।
পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের তরফে আমফানের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতেও তাঁদের জোটেনি কোনও মাথা গোঁজার আশ্রয় । এক পরিযায়ী শ্রমিক বাপ্পাদিত্য লোহার বলেন, " কয়েক মাস হল ওড়িশার কটক শহরে একটি অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় কাজ করতে যাই । লকডাউনের জেরে বন্ধ হয়ে যায় সেই কারখানা । এরপর দেখা দেয় আর্থিক সংকট । এই অবস্থায় না খেতে পেয়ে মারা যাব ভেবে আমরা ওখানে সাইকেল কিনি এবং সেই সাইকেল নিয়ে রওনা দিই বাড়ি ফেরার জন্য । আমরা কোনও পাস পাইনি রাজ্যে ফেরার । যদিও এই জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলাম। এরপর 12 মে বেরিয়ে পড়ি সাইকেল নিয়ে । বাংলা ও ওড়িশা বর্ডার জামাশলায় পুলিশ আমাদের আটক করে। কিন্তু আমাদের অবস্থা দেখে তারা ছেড়ে দেয় এবং নির্দেশ দেয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আমরা যেন গন্তব্যস্থানে পৌঁছাই । এরপর স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি । 15 মে রাত 10 টা নাগাদ গ্রামে ফিরি। পরের দিন সিমলাপাল থানায় যাই । সেখান থেকে আমাদের সিমলাপাল গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর আমাদের হোম কোয়ারানটিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় । কিন্তু গ্রামের মানুষ আমাদের বাড়িতে ঢুকতে দেননি। ফলে, আমরা খোলা মাঠে স্থানীয় কয়েকজনের সহযোগিতা নিয়ে তাঁবু খাটিয়ে রয়েছি ।"
বাপ্পাদিত্য লোহারের দাবি, বিষয়টি তাঁদের পরিবার থেকে ব্লক প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ব্লক প্রশাসন এই নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি । আমফানের আতঙ্কে যখন সবাই সুরক্ষিত জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন ঠিক তখন এইসব পরিযায়ী শ্রমিক ফাঁকা মাঠে অস্থায়ী তাঁবুতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন ।