ETV Bharat / state

Handloom Weavers of Bankura : যন্ত্রের দাপটে কর্মহীন তাঁতিরা, ধুঁকছে বাঁকুড়ার রাজগ্রাম

ক্রমশ দৈন্য গ্রাস করছে ৷ কারণ চলতি বাজার আর নেই ৷ পড়েছে ব্যবসা ৷ একটা সময় কাপড় বোনা হত ৷ পাওয়ারলুম চালু হওয়ায় কাজ হারিয়েছেন বহু তাঁতি ৷ একটা সময় চলত তিন-চারশো হস্তচালিত তাঁত ৷ এখন বেঁচে আছে মাত্র পঞ্চাশটি ৷ এমনই দুর্দশার সময় বাঁকুড়া শহর থেকে মাত্র 2 কিলোমিটার দূরে রাজগ্রামে তাঁতিপাড়া ঘুরে দেখল ইভিটি ভারত ৷

কর্মহীন বাঁকুড়ার রাজগ্রামের তাঁতিরা
কর্মহীন বাঁকুড়ার রাজগ্রামের তাঁতিরা
author img

By

Published : Jul 24, 2021, 5:17 PM IST

বাঁকুড়া, 22 জুলাই : প্রত্যহ তাঁতের আওয়াজেই ঘুম ভাঙত গঞ্জবাসীর । সে ছিল একটা সময় ৷ শিল্পীর তৈরি কাপড় রফতানি হত ভিনরাজ্যে ৷ লরি ভর্তি কাঁচামাল আমদানি হত নিয়মিত ৷ বরাতের কাপড় জোগান দিতে গিয়ে নাওয়া-খাওয়ার সময় হত না শিল্পীদের ৷ দিনরাত এক করে কাজ তুলতে হয়েছে ৷ এখন সে সব অতীত ! বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি তাঁত চলছে নমো নমো করে । কোনওরকমে দিন গুজরান হচ্ছে শিল্পীদের । পরিবারের পেট চালানোর দায়ে সরকারি সাহায্যের কাতর আর্তি জানাচ্ছেন তাঁতিরা৷

বাঁকুড়ার রাজগ্রামে সারি সারি হস্তচালিত তাঁতে তৈরি হত শাড়ি, বিছানার চাদর, গামছা ৷ রাজগ্রাম জুড়ে ছিল 300টি ছোট-বড় গামছা তৈরির কারখানা ৷ এখানকার গাছমার বাজারে বেশ ভাল চাহিদাও ছিল ৷ গামছা তৈরির উপর নির্ভর করেই রাজগ্রামের শিল্পীদের জীবন-জীবিকা চলত । এলাকার দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ তা করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন । এই শিল্পই তাঁদের ঘর-সংসারের খরচ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, স্বাদ-আহ্লাদ, পূজা-পার্বণ, আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করত ।

কিন্তু এখন সময় বদলেছে ৷ তিনশো তাঁত থেকে বন্ধ হতে হতে এখন ঠেকেছে 50টি-তে ৷ সেগুলিতেও প্রতিদিন কাজ হয় না । যাঁরা একটু পুঁজিপতি, তাঁরাই সপ্তাহে দু-তিনদিন কাজ করান । আর বাকিদের সকালবেলা তাঁতঘর খুলে ঠাকুরকে ধূপ, ফুল-বাতাসা দিয়ে ফের বন্ধ করে দেওয়া- এটাই রোজনামচা ৷

কাঁচামাল মানে সুতোর দাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া এবং যন্ত্রচালিত তাঁত মানে পাওয়ারলুমের ব্যবহার ক্রমশ ছবিটি বদলে দিয়েছে ৷ কম সময়ে, অল্প শ্রমিক দিয়ে যন্ত্র যত তাড়াতাড়ি এবং যে খরচে একটি গামছা তৈরি করতে পারছে, তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছেন না হস্তচালিত তাঁতের শিল্পীরা ৷ তাই তাঁদের গামছা তৈরির দিন শেষ হয়ে আসছে ৷ এর সঙ্গেই রয়েছে আবার করোনার ঠেলা ৷ সব মিলিয়েই ধুঁকছে গ্রামবাংলার প্রাচীন এই জনপদটি ৷

পাওয়ারলুমে দাপটে ক্রমশই কর্মহীন হয়ে পড়ছেন বাঁকুড়ার রাজগ্রামের তাঁতিরা ৷

এক দশক আগেও রাজগ্রামের গামছার বহুল ব্যবহার ছিল জেলা এবং জেলার সীমানা পেরিয়ে রাজ্যে, দেশের বাজারে । বাড়িতে আত্মীয়-কুটুম্ব-জামাই এলে তাঁদের একখানা নতুন গামছা বের করে দেওয়ার একটা রেওয়াজ ছিল গ্রামবাংলায় । কিন্তু সেসব আজ অতীত । বর্তমানে হাতে বোনা গামছার জায়গা নিয়ে নিয়েছে আধুনিক যন্ত্রে তৈরি গামছা, তোয়ালে ৷ আজ এই গামছা কাজে লাগে শুধুমাত্র ঠাকুর পুজোয় কিংবা বিয়েতে তত্ত্ব সাজাতে ৷ কিন্তু করোনার প্রভাবে কার্যত লকডাউনের জেরে নমো নমো করে হচ্ছে বিয়েবাড়ি, উপনয়ন, অন্নপ্রাশনের মতো সামাজিক অনুষ্ঠান । পুজো-পার্বণের অনুষ্ঠানও প্রায় বন্ধই বলা চলে ৷ তাই গত বছর দেড়েকে এই গামছার চাহিদা নেই বললেই চলে । এর মধ্যেই করোনায় লকডাউনে পরিবহণ খরচও বেড়েছে ৷ তাই গত দু'বছরে কাঁচামালের দাম বেড়েছে আরও ৷

শেষের মুখে বাঁকুড়ার ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা রাজগ্রামের গামছা শিল্প । এই প্রজন্মের কেউ আর এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে চান না । প্রচণ্ড কষ্ট, চাহিদা নেই, পুঁজির অভাব- সব মিলিয়েই মুখ ফিরিয়েছে নতুন প্রজন্ম । তাঁদের অনেকেই লেখাপড়া শিখে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন । খালি বয়স্করা বাপ-ঠাকুরদা সৃষ্ট এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে আঁকড়ে ধরে বসে রয়েছেন ভাল দিন ফেরার আশায় । রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপের কাতর আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা ৷ যদি সরকার সাহায্য করে, তবে আবার স্বমহিমায় ফিরতে পারে অবস্থা ৷ বাঁচবেন শিল্পী, বাঁচবে শিল্প- এমনটাই দাবি শিল্পীদের ।

আরও পড়ুন : করোনায় বন্ধ অনুষ্ঠান, কেমন আছেন পুরুলিয়ার ছৌ শিল্পীরা ?

বাঁকুড়া, 22 জুলাই : প্রত্যহ তাঁতের আওয়াজেই ঘুম ভাঙত গঞ্জবাসীর । সে ছিল একটা সময় ৷ শিল্পীর তৈরি কাপড় রফতানি হত ভিনরাজ্যে ৷ লরি ভর্তি কাঁচামাল আমদানি হত নিয়মিত ৷ বরাতের কাপড় জোগান দিতে গিয়ে নাওয়া-খাওয়ার সময় হত না শিল্পীদের ৷ দিনরাত এক করে কাজ তুলতে হয়েছে ৷ এখন সে সব অতীত ! বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি তাঁত চলছে নমো নমো করে । কোনওরকমে দিন গুজরান হচ্ছে শিল্পীদের । পরিবারের পেট চালানোর দায়ে সরকারি সাহায্যের কাতর আর্তি জানাচ্ছেন তাঁতিরা৷

বাঁকুড়ার রাজগ্রামে সারি সারি হস্তচালিত তাঁতে তৈরি হত শাড়ি, বিছানার চাদর, গামছা ৷ রাজগ্রাম জুড়ে ছিল 300টি ছোট-বড় গামছা তৈরির কারখানা ৷ এখানকার গাছমার বাজারে বেশ ভাল চাহিদাও ছিল ৷ গামছা তৈরির উপর নির্ভর করেই রাজগ্রামের শিল্পীদের জীবন-জীবিকা চলত । এলাকার দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ তা করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন । এই শিল্পই তাঁদের ঘর-সংসারের খরচ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, স্বাদ-আহ্লাদ, পূজা-পার্বণ, আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করত ।

কিন্তু এখন সময় বদলেছে ৷ তিনশো তাঁত থেকে বন্ধ হতে হতে এখন ঠেকেছে 50টি-তে ৷ সেগুলিতেও প্রতিদিন কাজ হয় না । যাঁরা একটু পুঁজিপতি, তাঁরাই সপ্তাহে দু-তিনদিন কাজ করান । আর বাকিদের সকালবেলা তাঁতঘর খুলে ঠাকুরকে ধূপ, ফুল-বাতাসা দিয়ে ফের বন্ধ করে দেওয়া- এটাই রোজনামচা ৷

কাঁচামাল মানে সুতোর দাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া এবং যন্ত্রচালিত তাঁত মানে পাওয়ারলুমের ব্যবহার ক্রমশ ছবিটি বদলে দিয়েছে ৷ কম সময়ে, অল্প শ্রমিক দিয়ে যন্ত্র যত তাড়াতাড়ি এবং যে খরচে একটি গামছা তৈরি করতে পারছে, তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছেন না হস্তচালিত তাঁতের শিল্পীরা ৷ তাই তাঁদের গামছা তৈরির দিন শেষ হয়ে আসছে ৷ এর সঙ্গেই রয়েছে আবার করোনার ঠেলা ৷ সব মিলিয়েই ধুঁকছে গ্রামবাংলার প্রাচীন এই জনপদটি ৷

পাওয়ারলুমে দাপটে ক্রমশই কর্মহীন হয়ে পড়ছেন বাঁকুড়ার রাজগ্রামের তাঁতিরা ৷

এক দশক আগেও রাজগ্রামের গামছার বহুল ব্যবহার ছিল জেলা এবং জেলার সীমানা পেরিয়ে রাজ্যে, দেশের বাজারে । বাড়িতে আত্মীয়-কুটুম্ব-জামাই এলে তাঁদের একখানা নতুন গামছা বের করে দেওয়ার একটা রেওয়াজ ছিল গ্রামবাংলায় । কিন্তু সেসব আজ অতীত । বর্তমানে হাতে বোনা গামছার জায়গা নিয়ে নিয়েছে আধুনিক যন্ত্রে তৈরি গামছা, তোয়ালে ৷ আজ এই গামছা কাজে লাগে শুধুমাত্র ঠাকুর পুজোয় কিংবা বিয়েতে তত্ত্ব সাজাতে ৷ কিন্তু করোনার প্রভাবে কার্যত লকডাউনের জেরে নমো নমো করে হচ্ছে বিয়েবাড়ি, উপনয়ন, অন্নপ্রাশনের মতো সামাজিক অনুষ্ঠান । পুজো-পার্বণের অনুষ্ঠানও প্রায় বন্ধই বলা চলে ৷ তাই গত বছর দেড়েকে এই গামছার চাহিদা নেই বললেই চলে । এর মধ্যেই করোনায় লকডাউনে পরিবহণ খরচও বেড়েছে ৷ তাই গত দু'বছরে কাঁচামালের দাম বেড়েছে আরও ৷

শেষের মুখে বাঁকুড়ার ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা রাজগ্রামের গামছা শিল্প । এই প্রজন্মের কেউ আর এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে চান না । প্রচণ্ড কষ্ট, চাহিদা নেই, পুঁজির অভাব- সব মিলিয়েই মুখ ফিরিয়েছে নতুন প্রজন্ম । তাঁদের অনেকেই লেখাপড়া শিখে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন । খালি বয়স্করা বাপ-ঠাকুরদা সৃষ্ট এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে আঁকড়ে ধরে বসে রয়েছেন ভাল দিন ফেরার আশায় । রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপের কাতর আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা ৷ যদি সরকার সাহায্য করে, তবে আবার স্বমহিমায় ফিরতে পারে অবস্থা ৷ বাঁচবেন শিল্পী, বাঁচবে শিল্প- এমনটাই দাবি শিল্পীদের ।

আরও পড়ুন : করোনায় বন্ধ অনুষ্ঠান, কেমন আছেন পুরুলিয়ার ছৌ শিল্পীরা ?

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.