বাঁকুড়া, 16 জুন: অভয় কালিন্দী দামী গাড়ি চড়ে ঘোরেন না ৷ দামী পোশাকও পড়েন না ৷ এমনকি পাকা বাড়ি বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরেও থাকেন না ৷ তবুও, বাঁকুড়া জেলার ওন্দা ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত নিকুঞ্জপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তিনি ৷ হাজারো দুর্নীতি ও বিতর্কে ঘেরা শাসকদলে অভয় কালিন্দী যেন ‘পাঁকে পদ্মফুল’ ৷ যিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজে নয়, বরং তাঁর পঞ্চায়েত এলাকার উন্নতি করেছেন ৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তাই নিকুঞ্জপুরের মানুষের কাছে গর্ব অভয় কালিন্দী ৷
তবে, 12 বছর আগে একটি অসুখের কারণে অভয় কালিন্দীর একটা পা কেটে বাদ দিতে হয় ৷ সেই থেকে ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলাফেরা করতে হয় তাঁকে ৷ আর শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও, সেটা তাঁর কাজে কোনওদিন প্রভাব ফেলেনি ৷ বরং আর পাঁচজনের থেকে থেকে অনেক বেশি সক্ষম তিনি ৷ দুই ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে সংসার তাঁর ৷ 75 বছরের মা বেতের ঝুড়ি তৈরি করেন ৷ মাকে সেই কাজেই সাহায্য করেন অভয় কালিন্দী ৷ আর তারপর সারাদিন পঞ্চায়েতে সাধারণ মানুষের নানান সমস্যা মেটানো ও তাঁদের নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার কাজ করেন ৷
আরও পড়ুন: বোমা-গুলি-লাঠি নয়, চা'য়ে পে চর্চায় সম্প্রীতির বার্তা মনোনয়নে
একটি পঞ্চায়েতের প্রধান হলেও, তাঁর বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই ৷ বিল মেটাতে না পারায় কয়েকবছর আগেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে ৷ পঞ্চায়েতের প্রধান হওয়ার পর চাইলেই নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে সব স্বাভাবিক করে দিতে পারতেন ৷ কিন্তু, সততার সঙ্গে আপোশ নয় ৷ এটাই তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র ৷ তাই হাজারও অভাব থাকলেও, গত পাঁচ বছরে নিজের স্বার্থে পদ ও তার ক্ষমতাকে ব্যবহার করেননি অভয় কালিন্দী ৷ তাই নিকুঞ্জপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রতিটি মানুষের বিশ্বাস ও ভরসা অর্জন করেছেন ৷ গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরি করেছেন ৷ বিদ্যুৎ সংযোগ এনে দিয়েছেন ৷ জলের ব্যবস্থা করেছেন ৷ ন্যুনতম নাগরিক পরিষেবার সবটাই তিনি দিয়েছেন গ্রামবাসীদের ৷
আরও পড়ুন: বিরোধী দলের মনোনয়নপত্র পেশ করা প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিচ্ছেন গ্রামবাসীরা
নিকুঞ্জপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ট্যাক্স কালেক্টর হলেন সুশান্ত দাস ৷ তিনি জানান, অভয়বাবুর সততার জন্যই তিনি মানুষের কাছে সম্মানীয় ৷ কখনও নিজের জন্য ভাবেননি ৷ তাই পঞ্চায়েত প্রধান অভয় কালিন্দীকে রোজ নিজের বাইকে করে দফতরে নিয়ে আসেন ও বাড়ি পৌঁছে দেন পঞ্চায়েতের ট্যাক্স কালেক্টর ৷ গ্রামবাসীদের কাছেও তিনি আশা ও ভরসা ৷ যে কোনও প্রয়োজনে তাঁকে পাওয়া যায় ৷ অভয় কালিন্দীও এভাবেই মানুষের সেবা করে যেতে চান ৷