বাঁকুড়া, 29 মার্চ: নেট কোয়ালিফাই করেছেন ? না নামের পাশে পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে ? চোখে অধ্যাপনা করার স্বপ্ন ? আপনার কয়েক বছরের কঠিন অধ্যবসায় প্রতি মাসে বিকোবে মাত্র 4800 টাকায় । আরও বিশদে বললে, প্রতি ক্লাসপিছু আপনার জন্য বরাদ্দ 300 টাকা । এই বিজ্ঞপ্তিই প্রকাশ করেছে বাঁকুড়া ইউনিভার্সিটি । তাদেরই আরেক বিজ্ঞপ্তি বলছে, সাফাইকর্মীদের জন্য বরাদ্দ সাম্মানিকের অংকটা এর চেয়ে বেশি (Guest Lecturer at Rs 300 per class in Bankura University)।
গত 24 তারিখ বাঁকুড়া ইউনিভার্সিটি'র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চুক্তিভিত্তিক অধ্যাপক নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় । ইলেকট্রনিক্স, ন্যানো-সায়েন্স এবং অন্য দুই বিভাগে অধ্যাপক চেয়ে দেওয়া ওই বিজ্ঞপ্তিতেই উল্লেখ রয়েছে, ক্লাস পিছু 300 টাকা করে দেওয়া হবে । এই ভিত্তিতেই অধ্যাপক নিয়োগ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে । এই বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরেই সরগরম হয়েছে নেটমাধ্যম (Ad to hire Temporary Lecturer at Rs 300 per class triggers uproar in West Bengal)।
কী বলছে ইউজিসি গাইডলাইন (UGC Guidelines about Guest Lecturer) ?
ইউজিসির যে গাইডলাইন রয়েছে, তাতে স্পষ্ট করে বলা আছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্ট লেকচারাররা ক্লাসপ্রতি ন্যূনতম 1500 টাকা এবং মাসিক সর্বোচ্চ 50 হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাবেন । বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসির গাইডলাইনকেও অবমাননা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠে আসছে ।
রাজ্যকে বিঁধছে বিরোধীরা:
রাজ্য সরকারকে একহাত নিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি টুইটে লেখেন, "এই রাজ্যে চাকরির বেহাল দশার ছবি এই ঘটনাতে প্রমাণিত হলো । একজন কলেজে অধ্যপনা করবেন যার সাপ্তাহিক বেতন 1200 টাকা । অর্থাৎ মাসিক বেতন মাত্র 4800 টাকা ।" পালটা দিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও । মাইক্রো-ব্লগিং সাইটে শুভেন্দুর উদ্দেশ্যে তিনি লিখেছেন, "একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের একটি সামান্য বিজ্ঞাপনে তাড়াহুড়ো করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি ।" বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার । তিনি জানান, একজন অধ্যাপক হিসেবে এই ধরনের সিদ্ধান্ত খুব তাঁর কাছে খুব অপমানজনক ।
রাজ্যকে বিঁধেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডা: সুভাষ সরকারও । তিনি বলেন, "যেখানে ইউজিসি'র গাইডলাইন রয়েছে যে প্রত্যেক ক্লাসের জন্য ন্যূনতম 1500 টাকা এবং সর্বোচ্চ 50 হাজার টাকা পর্যন্ত পাবেন এই অতিথি অধ্যাপকরা । সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার 300 টাকা প্রতি ক্লাস ধার্য করে চরম বৈপরীত্যের ছবি সামনে আনল । পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভাড়ার এতটাই শূন্য হয়ে গেল ? এতো সিভিক ভলেন্টিয়ার এর মতো সিভিক অধ্যাপক নিয়োগ চলছে ।"
মুখ খুলতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ:
যদিও এই বিষয়ে মুখ খুলতে চায়নি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার সৌরভ দত্তকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয় । এই বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা না-বলে কোনও কিছুই বলতে পারবেন না । ঘটনায় কোনও মন্তব্য করেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও ।
আরও পড়ুন: অঙ্ক-ইংরেজি পড়াবেন সিভিক ভলান্টিয়াররা, 'পশ্চিমবঙ্গের লজ্জা' দাবি সুভাষ সরকারের