ETV Bharat / state

প্রথা ও ঐতিহ্যে অমলিন বাঁকুড়ার মুখোপাধ্যায় পরিবারের পুজো - বাঁকুড়া

জমিদারি না থাকলেও পারবারিক পুজো টিকিয়ে রেখেছে বাঁকুড়ার মুখোপাধ্যায় পরিবার ৷ প্রথা ও ঐতিহ্য তাদের কাছে সম্বল ৷

পুজো
author img

By

Published : Sep 30, 2019, 6:01 AM IST

জয়পুর : কালের নিয়মে বিলীন হয়ে গেছে জমিদারি ৷ ভগ্নপ্রায় দশা বাড়িরও ৷ ধসে পড়েছে একটা অংশ ৷ চারপাশে ফোকলা দাঁতের মতো বেরিয়ে আছে ইট ৷ তারই মধ্যে অমলিন হয়ে রয়েছে প্রথা, পরম্পরা ও ঐতিহ্য ৷ আর তাকেই সম্বল করে এখনও পুজোর চারটে দিন আলোয় ঝলমল করে ওঠে বাঁকুড়ার জয়পুরে ব্লকের ময়নাপুর গ্রামের মুখোপাধ্যায় বাড়ি ৷

একসময় মল্ল রাজাদের দাপট ছিল বিষ্ণুপুরে ৷ শেষ মল্ল রাজা চৈতন্য সিংয়ের দেওয়ান ছিলেন ময়নাপুরের চণ্ডীচরণ মুখোপাধ্যায় ৷ কিন্তু, অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি থেকে মল্ল রাজাদের ক্ষমতা ক্রমশ কমতে থাকে ৷ ব্রিটিশদের চাপানো অতিরিক্ত করে জর্জরিত হয়ে পড়েন তাঁরা ৷ একের পর এক তালুকের নিলাম শুরু হয় ৷ আর তখন ময়নাপুরের জমিদারি পায় মুখোপাধ্যায় পরিবার ৷ কথিত আছে, একদিন স্বপ্নাদেশ পান চণ্ডীচরণ ৷ পরিবারের এক সদস্য শোনালেন সেই কাহিনি ৷ তিনি বলেন, "একদিন চণ্ডীচরণ না কি স্বপ্ন পান দেবী দুর্গার ৷ তিনি বলেন, তুই পাকা বাড়িতে আছিস আর আমি কাঁচা বাড়িতে ! চণ্ডীচরণ বলেন, আজ থেকে যা রোজগার করব তা দিয়ে তোমার জন্য মণ্ডপ করব ৷ সেদিনই তিনি যে টাকা পান তা দিয়ে দুর্গা দালান তৈরি করেন ৷ 1791 সাল থেক শুরু হয় দুর্গাপুজো ৷ " পরে চণ্ডীমণ্ডপ তৈরি হয় ৷ সেখানেই পুজো হতে থাকে ৷

ওই সদস্য জানান, সেই সময় পুজোতে জাঁকজমকের শেষ ছিল না ৷ পুজোর চারদিন গমগম করত চণ্ডীমণ্ডপ ৷ চলত যাত্রাপালা , রামায়ণ গান ৷ প্রতিদিন বসত ভোজসভা ৷ পুরো ময়নাপুর গ্রাম ছাড়াও নিমন্ত্রিত থাকত তালুকের প্রজারা ৷ কিন্তু, কালের অমোঘ নিয়মে জমিদারি গেছে ৷ এক সময় ফুলে ফেঁপে ওঠা কোষাগারে টান পড়েছে ৷ কমে গেছে পুজোর জৌলুস ৷ পাশপাশি, পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন ৷ ফলে পরিচর্যার অভাবে ভেঙে পড়েছে বাড়ির একটা অংশ ৷ এককালের লাল ইটের দেওয়ালে এখন সবুজ শ্যাওলার বাড়বাড়ন্ত ৷ আষ্টেপৃষ্টে রয়েছে গাছের ডাল ৷ তারই মধ্যে পরিপাটি করে সাজানো চণ্ডীমণ্ডপ যেন একটুকরো পরম্পরার মন ভালো করে দেওয়া ছবি ৷

বাঁকুড়ার ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই পুজো । পরিবারের এক সদস্য জানান, আগে অষ্টমীর পুজো শুরুর আগে মল্ল রাজারা তোপ দাগতেন ৷ তা শুনে তোপ দিয়ে শুরু হত মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজো ৷ একইভাবে সন্ধি পুজোর সময় তোপ দেওয়া হত ৷ এখন যদিও তা আর হয় না ৷ আগের মত দশমীর দিন ওড়ানো হয় না নীলকণ্ঠ পাখিও ৷ 2004 সালের আগে পর্যন্ত ছাগ বলিও দেওয়া হত ৷ ওই সদস্য বলেন, "আগে সপ্তমী ও নবমীতে বলি দেওয়া হত ৷ এভাবেই পরম্পরা মেনে আসতাম ৷ 2004 সালে এই প্রথা বন্ধ করে দিতে বলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য রমারঞ্জন মুখোপাধ্যায় ৷ তখন অবশ্য সপ্তমীর বলি হয়ে গেছিল ৷ তাঁর কথামতো সেই বছর নবমী থেকেই বলি প্রথা উঠে যায় ৷ "

আর এই প্রথা ও পরিবর্তনের মেলবন্ধনের মধ্যে দিয়েই পুজো করে আসছেন মুখোপাধ্যায় পরিবারের বর্তমান সদস্যরা ৷ সারা বছর বাইরে থাকলেও ঐতিহ্যের স্বাদকে চেটেপুটে নিতে এই কদিন চলে আসেন বাড়িতে ৷ ঐতিহ্যই যে তাঁদের চালিকাশক্তি তা অকপটে বলেন পরিবারের এক সদস্য ৷ তাঁর কথায়, "পারিবারিক পুজো বলে টিকিয়ে রেখেছি ৷"

জয়পুর : কালের নিয়মে বিলীন হয়ে গেছে জমিদারি ৷ ভগ্নপ্রায় দশা বাড়িরও ৷ ধসে পড়েছে একটা অংশ ৷ চারপাশে ফোকলা দাঁতের মতো বেরিয়ে আছে ইট ৷ তারই মধ্যে অমলিন হয়ে রয়েছে প্রথা, পরম্পরা ও ঐতিহ্য ৷ আর তাকেই সম্বল করে এখনও পুজোর চারটে দিন আলোয় ঝলমল করে ওঠে বাঁকুড়ার জয়পুরে ব্লকের ময়নাপুর গ্রামের মুখোপাধ্যায় বাড়ি ৷

একসময় মল্ল রাজাদের দাপট ছিল বিষ্ণুপুরে ৷ শেষ মল্ল রাজা চৈতন্য সিংয়ের দেওয়ান ছিলেন ময়নাপুরের চণ্ডীচরণ মুখোপাধ্যায় ৷ কিন্তু, অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি থেকে মল্ল রাজাদের ক্ষমতা ক্রমশ কমতে থাকে ৷ ব্রিটিশদের চাপানো অতিরিক্ত করে জর্জরিত হয়ে পড়েন তাঁরা ৷ একের পর এক তালুকের নিলাম শুরু হয় ৷ আর তখন ময়নাপুরের জমিদারি পায় মুখোপাধ্যায় পরিবার ৷ কথিত আছে, একদিন স্বপ্নাদেশ পান চণ্ডীচরণ ৷ পরিবারের এক সদস্য শোনালেন সেই কাহিনি ৷ তিনি বলেন, "একদিন চণ্ডীচরণ না কি স্বপ্ন পান দেবী দুর্গার ৷ তিনি বলেন, তুই পাকা বাড়িতে আছিস আর আমি কাঁচা বাড়িতে ! চণ্ডীচরণ বলেন, আজ থেকে যা রোজগার করব তা দিয়ে তোমার জন্য মণ্ডপ করব ৷ সেদিনই তিনি যে টাকা পান তা দিয়ে দুর্গা দালান তৈরি করেন ৷ 1791 সাল থেক শুরু হয় দুর্গাপুজো ৷ " পরে চণ্ডীমণ্ডপ তৈরি হয় ৷ সেখানেই পুজো হতে থাকে ৷

ওই সদস্য জানান, সেই সময় পুজোতে জাঁকজমকের শেষ ছিল না ৷ পুজোর চারদিন গমগম করত চণ্ডীমণ্ডপ ৷ চলত যাত্রাপালা , রামায়ণ গান ৷ প্রতিদিন বসত ভোজসভা ৷ পুরো ময়নাপুর গ্রাম ছাড়াও নিমন্ত্রিত থাকত তালুকের প্রজারা ৷ কিন্তু, কালের অমোঘ নিয়মে জমিদারি গেছে ৷ এক সময় ফুলে ফেঁপে ওঠা কোষাগারে টান পড়েছে ৷ কমে গেছে পুজোর জৌলুস ৷ পাশপাশি, পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন ৷ ফলে পরিচর্যার অভাবে ভেঙে পড়েছে বাড়ির একটা অংশ ৷ এককালের লাল ইটের দেওয়ালে এখন সবুজ শ্যাওলার বাড়বাড়ন্ত ৷ আষ্টেপৃষ্টে রয়েছে গাছের ডাল ৷ তারই মধ্যে পরিপাটি করে সাজানো চণ্ডীমণ্ডপ যেন একটুকরো পরম্পরার মন ভালো করে দেওয়া ছবি ৷

বাঁকুড়ার ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই পুজো । পরিবারের এক সদস্য জানান, আগে অষ্টমীর পুজো শুরুর আগে মল্ল রাজারা তোপ দাগতেন ৷ তা শুনে তোপ দিয়ে শুরু হত মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজো ৷ একইভাবে সন্ধি পুজোর সময় তোপ দেওয়া হত ৷ এখন যদিও তা আর হয় না ৷ আগের মত দশমীর দিন ওড়ানো হয় না নীলকণ্ঠ পাখিও ৷ 2004 সালের আগে পর্যন্ত ছাগ বলিও দেওয়া হত ৷ ওই সদস্য বলেন, "আগে সপ্তমী ও নবমীতে বলি দেওয়া হত ৷ এভাবেই পরম্পরা মেনে আসতাম ৷ 2004 সালে এই প্রথা বন্ধ করে দিতে বলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য রমারঞ্জন মুখোপাধ্যায় ৷ তখন অবশ্য সপ্তমীর বলি হয়ে গেছিল ৷ তাঁর কথামতো সেই বছর নবমী থেকেই বলি প্রথা উঠে যায় ৷ "

আর এই প্রথা ও পরিবর্তনের মেলবন্ধনের মধ্যে দিয়েই পুজো করে আসছেন মুখোপাধ্যায় পরিবারের বর্তমান সদস্যরা ৷ সারা বছর বাইরে থাকলেও ঐতিহ্যের স্বাদকে চেটেপুটে নিতে এই কদিন চলে আসেন বাড়িতে ৷ ঐতিহ্যই যে তাঁদের চালিকাশক্তি তা অকপটে বলেন পরিবারের এক সদস্য ৷ তাঁর কথায়, "পারিবারিক পুজো বলে টিকিয়ে রেখেছি ৷"

Intro:বাঁকুড়া জেলার প্রাচীন জনপদগুলির মধ্যে অন্যতম হল জয়পুর ব্লকের ময়নাপুর গ্রাম।Body:বহু প্রাচীন কাল থেকেই এই গ্রাম এলাকার একটি বর্ধিষ্ণু গ্রামের মর্যাদা পেয়ে আসছে। এই গ্রামকে কেন্দ্র করেই একসময় গড়ে উঠেছিল মুখাজ্জী পরিবারের জমিদারী। ব্রিটিশ আমলের রমরমিয়ে চলা সেই জমিদারীর এখন কনামাত্র অবশিষ্ট নেই। তবু প্রাচীন রীতি মেনে ময়নাপুর জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালানে এখনও নিষ্ঠার সাথে পালিত হয় দেবী আরাধনা।
অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের ক্ষমতা ক্রমশ কমতে শুরু করে। ব্রিটিশ শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া অতিরিক্ত করের বোঝা টানতে না পেরে মল্ল রাজত্বের একের পর এক তালুকের নিলাম শুরু হয়। আর এই সময়ই জমিদারী শুরু হয় ময়নাপুরের মুখাজ্জী পরিবারের। বিষ্ণু পুরের শেষ মল্ল রাজা চৈতন্য সিংহের দেওয়ান ছিলেন ময়নাপুরের বাসিন্দা চণ্ডীচরণ মুখোপাধ্যায়। তাঁর আমলেই ময়নাপুর তালুকের জমিদারী সত্ব লাভ করে মুখোপাধ্যায় পরিবার। জমিদারী পত্তনের সাথে সাথে জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালানে শুরু হয় দুর্গা পুজা। পরে দুর্গা মন্দির ও চণ্ডী মণ্ডপ সংস্কার করেন ওই পরিবারেরই নিধীকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় ও তারিণী প্রসাদ মুখোপাধ্যায়। কথিত আছে সে সময় জমিদারীর একদিনের আয়ে ওই বিশাল চণ্ডী মণ্ডপ ও দুর্গা মন্দির তৈরি হয়েছিল। সে সময় পুজাকে কেন্দ্র করে ধুমধামের সীমা ছিল না।  বিশাল জমিদার বাড়ির সদস্য ও তালুকের প্রজায় পুজার চারদিন গমগম করত চণ্ডী মণ্ডপ। যাত্রাপালা , রামায়ন গান এসবের পাশাপাশি চারদিন ধরে চলত ভোজসভা।পুজার সময় গোটা ময়নাপুর গ্রাম ছাড়াও নিমন্ত্রিত থাকত তালুকের প্রজারা। এখন জমিদারী না থাকায় পুজার জৌলুস কমেছে। জীবন জীবিকার তাগিদে দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছে জমিদারবাড়ির সদস্যরা।Conclusion:কিন্তু পুজা এলেই ফের তাঁরা ভিড় করেন পুরানো জমিদার বাড়ির জীর্ণ দরদালানে। পুজার সময় বাড়ির লোকেদের অংশ গ্রহনে ফের গমগম করে ওঠে পলেস্তরা খসা দেওয়ালের জমিদার বাড়ি।
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.