বাঁকুড়া,11 অগাস্ট: চলতি বছরে অন্য বছরের তুলনায় ভালো বৃষ্টিপাত হয়েছে । সেই অনুযায়ী যথেষ্ট ভালো ফসল হওয়ার কথা । তবুও চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে । কারণ কোরোনা আতঙ্কে পর্যাপ্ত শ্রমিক মিলছে না । মিললেও সেই শ্রমিকও দর হাঁকছেন দ্বিগুণ । খারিফ ফসল চাষের ক্ষেত্রে শ্রমিক সমস্যা উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে ।
বর্ষাকালে আউশ এবং আমন ধান লাগানো হয় গ্রাম বাংলায় । শুধু তাই নয়, এই ঋতুতে কিছু দানাশস্য এবং সবজি উৎপাদন করে আর্থিক লাভের মুখ দেখেন চাষিরা । বর্ষার শুরুতেই লাঙ্গল দিয়ে জমি চষা হয় । তারপর আছে ধান রোপন করার কাজ । এছাড়াও জমিতে সার দিতে হয় নির্দিষ্ট সময়ে । আর এই সব কিছু কাজের জন্য প্রয়োজন শ্রমিক । বিঘা প্রতি ধান লাগাতে ছয় থেকে সাত জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয় । তাই প্রতি বছর এই সময় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ্রমিকরা হাজির হন গ্রাম বাংলার সেই সমস্ত এলাকায় যেখানে চাষবাস যথেষ্ট ভালো হয় । এই বছর এই চিত্রটা অনেকটাই আলাদা জেলার বিভিন্ন এলাকায় । কোরোনা সংক্রমণের আতঙ্ক রয়েছে, তার সঙ্গে রয়েছে লকডাউন । আর এই সব মিলিয়ে শ্রমিকদের আনাগোনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে । তাই এখন খারিফ চাষের ক্ষেত্রে শ্রমিক সমস্যা মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে গ্রাম বাংলার চাষিদের কাছে ।
এই বছর চাষ করতে হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে স্থানীয় শ্রমিকদের উপর নির্ভর করে । এছাড়াও চাষির পরিবারের প্রায় সকলকেই শ্রমিকদের সঙ্গে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করতে হচ্ছে মাঠে । শুধু তাই নয়, জমিতে যাঁরা শ্রমিকের কাজ করেন তাদের দৈনিক মজুরি 150 টাকা । এবছর বাইরে থেকে শ্রমিক না আসায় স্থানীয় শ্রমিকরা 250 থেকে 300 টাকা পর্যন্ত মজুরি দাবি করছেন বলে জানাচ্ছেন চাষিরা । শ্রমিকদের বক্তব্য, অন্যান্য বছর এক বিঘা জমি চাষের কাজ করতে ছয় থেকে সাত জন শ্রমিক লাগানো হয় । এই বছর সেই কাজ তিন থেকে চার জন শ্রমিককে করতে হচ্ছে । ফলে তাঁদের কাজের চাপ বেড়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায় যথেষ্ট বেশি । এই কারণেই তাঁরা বাড়তি মজুরি চাইছেন । এই বাড়তি মজুরি দিতে গিয়ে লাভের অংশ অনেকটাই কমে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চাষিরা । জমিতে লাঙল দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিক কম থাকায় ট্রাক্টর ভাড়া করে লাঙল দেওয়ার কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের । প্রতি বিঘায় লাঙল দিতে 400 থেকে 500 টাকা নিচ্ছেন ট্রাক্টর মালিকরা । এরপর অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ধান রোয়া হচ্ছে । সব মিলিয়ে প্রতি বিঘাতে প্রায় সাত কুইন্টাল ধান পাওয়া যাবে ফলন শেষে । তাই এই ফসল ফলিয়ে বিক্রি করার পর যে পরিমাণ টাকা মিলবে তাতে কোনও মতে চাষের খরচটুকু উঠবে বলেই বলছেন তাঁরা ।
বাঁকুড়ায় 3 লাখ 82 হাজার হেক্টর জমিতে খারিফ ফসল চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে আউশ ধান হয় 25 থেকে 30 হাজার হেক্টর জমিতে । তিন থেকে চার হাজার হেক্টর জমিতে ডাল এবং অন্যান্য সবজির চাষ হয়ে থাকে । বাকি জমিতে আমন ধানের উৎপাদন হয় । এবছর চাষের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অন্যান্য বছরের চাইতে বেশি । তবে চাষ করতে যে খরচ একজন চাষিকে সাধারণত করতে হয় তা এই বছর অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে শ্রমিক সমস্যার জেরে । তাই হাড়ভাঙা পরিশ্রম করার পরও কতটা লাভের মুখ দেখতে পাওয়া যাবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন চাষিরা ।