বাঁকুড়া, 27 জুলাই : এক সদ্যোজাতকে ব্রিজ থেকে নদীতে ছুড়ে ফেলল বাড়ির লোকজন । অভিযুক্তদের হাতেনাতে ধরে ফেলে পথচলতি মানুষ । কেন তারা সদ্যোজাতকে নদীতে ফেলে দিল, জবাব চেয়ে তিন অভিযুক্তকে ঘেরা করা হয় । পুলিশ এসে অভিযুক্তদের আটক করে নিয়ে যায় । তবে তাদের নাম জানা যায়নি । ঘটনাটি বাঁকুড়া শহরের বাইপাস গন্ধেশ্বরী ব্রিজের । পুলিশ সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের আরাবারি এলাকায় তাদের বাড়ি । প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জীবিত অবস্থায় সদ্যোজাতকে ব্রিজ থেকে নদীতে ছুড়ে ফেলা হয় । বাঁকুড়া থানার পুলিশ নদী থেকে সদ্যোজাতকে উদ্ধারের চেষ্টা করছে ।
গতকাল রাত ন'টা । বাইপাস গন্ধেশ্বরী ব্রিজের কাছে এক মহিলাসহ তিনজনকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে স্থানীয় লোকজন । মহিলার কোলে এক শিশু ছিল । ওই ব্রিজের কাছেই চায়ের দোকান রয়েছে সুমন্ত লোহার । তাঁর চোখের সামনে ঘটে গোটা ঘটনা । তিনি বলেন, "আমি দোকানে বসেছিলাম । দোকান থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম অনেকক্ষণ ধরে ব্রিজের কাছে ঘোরাঘুরি করছিল এক মহিলা, যুবক ও ওই ভদ্রলোক । আমি প্রথমে অতটা পাত্তা দিইনি । কিন্তু, অনেকটা সময় কেটে গেলেও ওরা যাচ্ছিল না । এদিক সেদিক করছিল । তা দেখে আমার সন্দেহ হয় । মহিলার কোলে একটি কাপড় ছিল । দেখে মনে হচ্ছিল কোনও বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আছে । দোকান থেকে ওদের দিকে এগিয়ে এলাম । আমার সন্দেহই ঠিক ছিল । ওই কাপড়ের ভিতর থেকে এক বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাচ্ছিলাম । এত রাতে এখানে কী করছে? মনে প্রশ্ন জাগে আমার । এবারে ওরা ব্রিজের মুখ থেকে একটু এগিয়ে যেতে শুরু করে । আমিও পিছু নিই । তখনও কেঁদে চলেছে ওই শিশু । কিছুটা যাওয়ার পর দেখি ওই লোকটি টর্চ বের করে নদীর জল দেখছে । তার কয়েক মুহূর্ত পর দেখলাম, চারদিকে তাকিয়ে ওই মহিলা কোলের বাচ্চাকে ব্রিজ থেকে ছুড়ে ফেলে দিল । তখনও কান্নার আওয়ার পাচ্ছিলাম ।"
বাচ্চাকে নদীতে ছুড়ে ফেলার দৃশ্য দেখে ততক্ষণে চিৎকার করতে শুরু করেছেন সুমন্ত । চিৎকার শুনে আরও অনেকেই সেখানে জড়ো হয়েছেন । সুমন্তর মুখে ঘটনা শুনে হতবাক পথচলতি লোকজন । তাঁরা অভিযুক্তদের ঘেরাও করেন । খবর পেয়ে কিছুক্ষণে মধ্যে এলাকায় আসে বাঁকুড়া থানার পুলিশ । তবে পুলিশকেও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় । সদ্যোজাতকে খোঁজার কাজ শুরু করার দাবি ওঠে । পুলিশকর্মীরা জানান, শিশুকে উদ্ধারের কাজ শিগগিরই শুরু হবে ।
যে মহিলা শিশুকে ছুড়ে ফেলেছিল তাকে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করতে থাকেন । অভিযুক্ত মহিলা প্রথমে বলে, ওই শিশুকে মৃত অবস্থায় তারা এখানে এনেছিল । সদ্যোজাতর শারীরিক অবস্থা একেবারেই ভালো ছিল না । চিকিৎসকরা জবাব দিয়েছিলেন । সেকারণে তারা শিশুকে ফেলে দেয় । যদিও চাপের মুখে পরে স্বীকার করে, ওই শিশু জীবিত ছিল ।
অভিযুক্তদের মধ্যে ছিল একজন ব্যক্তি । সে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলে, "গতকাল PG হাসপাতালে জন্ম হয় ওই শিশুর । চিকিৎসকরা জানান, বাচ্চাটির অবস্থা খারাপ । তাকে বাঁচানো কঠিন । কোমরের হাড় নেই । বাচ্চার মায়ের অবস্থাও খারাপ । বাচ্চাকে ওই অবস্থায় দেখলে সে কষ্ট পাবে । আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে । সেকারণে সদ্যোজাতকে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।"
অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ । বাঁকুড়া থানা সূত্রে খবর, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে । বাচ্চার খোঁজ চলছে । অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে । তারা কেন জীবিত শিশুকে নদী থেকে ছুড়ে ফেলল তা খতিয়ে দেখা হবে ।