বাঁকুড়া, 15 সেপ্টেম্বর : করোনা আবহেই উমাকে আবাহনের তোড়জোড় শুরু করেছে আপামর বাঙালি ৷ দশভুজা শুধুমাত্র শক্তির প্রতীক নন ৷ তিনি সংগ্রামের পরিচায়ক ৷ জীবনযুদ্ধে এমন সংগ্রাম চালাতে হয় বহু মেয়েকেই ৷ তেমনই দুই বোনের দেখা মিলল বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে ৷ স্থনীয় হলুদমণি গ্রামে তাঁদের এক চিলতে চায়ের দোকান ৷ সকাল থেকে রাত, সেই দোকানেই বেঁচে থাকার, টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মান্টু নন্দী আর তাঁর বোন ঝর্না নন্দী ৷
আরও পড়ুন : Burdwan Kumartoli: সামনেই দুর্গাপুজো, অন্ধকারেই দিন কাটছে বর্ধমানের মৃৎশিল্পীদের
নন্দী পরিবারের সদস্য সংখ্যা সব মিলিয়ে পাঁচ ৷ দুই দিদি, তাঁদের ছোট দুই ভাই আর বৃদ্ধা মা ৷ আজকের বাজারে দু’বেলা পাঁচজনের পেট ভরানো সহজ কথা নয় ৷ কথা হচ্ছিল মান্টু-ঝর্নার চায়ের দোকানেই ৷ তাঁরা জানালেন, বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন, তখন কিছুটা হলেও ভার কম ছিল ৷ তখনও অবশ্য এই চায়ের দোকানই ভরসা ছিল গোটা পরিবারের ৷ মান্টুর বাবা সারা দিন চা বিক্রি করতেন ৷ আর তাঁকে সাহায্য করতে দুই বোন ৷ যা হোক করে চলছিল ছ’জনের সংসার ৷
কিন্তু, বিধি বাম ৷ সংসারে সাচ্ছন্দ্য কোনও দিনই ছিল না ৷ তার উপর থাবা বসাল মৃত্যু ৷ হঠাৎই স্ট্রোকে প্রাণ গেল পরিবারের কর্তার ৷ একমাত্র রোজগেরেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে যায় গোটা নন্দী পরিবার ৷ তবে শোক করে যে দিন কাটবে না, পেটও ভরবে না, সেকথা বুঝতে বেশি সময় লাগেনি মান্টু আর তাঁর বোন ঝর্নার ৷ দুই বোন ঠিক করেন, বাবা যেভাবে দোকান চালিয়ে সংসারের খরচ জোগাতেন, তাঁরাও সেটাই করবেন ৷ সেই শুরু ৷ তারপর থেকেই মান্টু, ঝর্নার ঘড়ির কাঁটায় বাঁধা রোজের নামচা ৷
দোকানের জন্য জিনিসপত্র কেনা, প্রতিদিন নিয়ম করে সাত সকালে দোকান খোলা, আর দিনভর ক্রেতাদের ফরমায়েশ মাফিক লিকার, দুধ চায়ের জোগান দিয়ে যাওয়া ৷ সব শেষে রাত নামলে দোকান বন্ধ করে ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফেরা ৷ সারাদিনের রোজগারে পাঁচ পেটের ভাতের বন্দোবস্ত পাকা করা ৷ পুজো আসে, যায় ৷ কিন্তু মান্টু, ঝর্নাদের দিন বদলায় না ৷ পুজোয় নতুন পোশাক তাঁদের কাছে অলীক স্বপ্ন ৷ বরং ভরা পেটে রাতে ঘুমোতে পারলেই খুশি এই আটপৌড়ে দুর্গারা ৷
আরও পড়ুন : Durga Puja : বাগুইআটির বন্ধুমহলে এবার থিম সং গাইছেন আফগানিরা, থাকছে বেলি ডান্সও
দুই বোনের এমন লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও ৷ তাঁরাও চান, ভালো থাকুন হতদরিদ্র এই পরিবারের সক্কলে ৷ তাই নিয়ম করে রোজ মান্টু, ঝর্নার দোকানে চা খেতে আসেন তাঁরা ৷ আবার একটা পুজো এসে গেল ৷ আর কিছুদিন পরেই শুরু হবে দেবীপক্ষ ৷ দশভুজার আরাধনায় ভরে উঠবে আকাশ, বাতাস ৷ চায়ের গন্ধে ম-ম করবে হলুদমণি গ্রামের ছোট্ট এই চায়ের দোকানও ৷