বাঁকুড়া, 3 ডিসেম্বর : শীতকাল মানেই নলেন গুড় ৷ আর সেই গুড় থেকে তৈরি নানান সুস্বাদু খাবারের সময় ৷ আর হেমন্তের শেষে শীত পড়তেই গ্রামেগঞ্জে খেজুরের রস পাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন শিউলিরা (যাঁরা খেজুরের গাছ থেকে রস পাড়েন) ৷ বাঁকুড়ার শিউলিরাও খেজুরের রস দিয়ে নলেন গুড় তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছেন (Bankura Nolengur Story) ৷ এমনকি খেজুরের রসের জোগানও পরিমাণ মতো হচ্ছে ৷ কিন্তু, লাভের মুখ দেখছেন না তাঁরা ৷ আর এর জন্য দায়ী করেছেন বাজারে ভেজাল গুড় বা সেন্ট মেশানো সস্তার নলেন গুড় চলে আসাকে ৷
ভোর তিনটের সময় ঘুম থেকে উঠে খেজুর গাছে ওঠা ৷ সেখানে আগের দিনের ঝুলিয়ে রাখা রসের হাঁড়ি নামিয়ে, নতুন হাঁড়ি ঝোলানো ৷ দীর্ঘ পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে রস পাড়া এবং সেই রস নামিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সেই রসকে আগুনের আঁচে ফুটিয়ে খেজুরের গুড় বা নলেন গুড় তৈরি করেন শিউলিরা ৷ কিন্তু, এত পরিশ্রমের দাম সেভাবে তাঁরা পাচ্ছেন না বলেই অভিযোগ ৷ এক শিউলি জানাচ্ছেন, বাজারে গুড় বিক্রি করতে গেলে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না ৷ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম দাম পাচ্ছেন তাঁরা ৷ এর মূল কারণ বাজারে ভেজাল নলেন গুড়ের জোগান ৷
আরও পড়ুন : শীত না পড়ায় খেজুর রসে টান, তৈরি হচ্ছে না গুড়
শিউলিদের কথায়, বাজারে নলেন গুড়ের সেন্ট মেশানো নকল গুড় ছেয়ে গিয়েছে ৷ যার দাম অনেক কম ৷ ফলে তাঁদের খেজুরের রস দিয়ে তৈরি গুড়ের দাম উঠছে না ৷ আর দাম পাওয়ায় তৈরি করা গুড় কোথায় বিক্রি করবেন শিউলিরা, তা বুঝে উঠতে পারছেন না ৷ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁরা খেজুরের রস থকে নলেন গুড় তৈরি করছেন ৷ কিন্তু, বাজার থেকে দাম না পাওয়ায় সমস্যা বেড়েছে তাঁদের ৷
শিউলিদের আপশোস, শীত এসে গিয়েছে ৷ কিন্তু, খাদ্যরসিক বাঙালির পাতে আসল নলেন গুড় বা তার তৈরি মিষ্টি পৌঁছবে না নকল গুড়ের রমরমার কারণে ৷ আর সেই সঙ্গে তাঁদেরও লোকসান ৷ তবে, এতে তাঁরা হতাশ নন ৷ ন্যায্য দাম না পেলেও, পূর্বপুরুষের দেখানো পথেই হাঁটবেন তাঁরা ৷ তাঁদের আশা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি বদলাবে এবং নলেন গুড়ের ন্যায্য দামও পাবেন ৷