দুর্গাপুর, 18 মার্চ: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে বিভিন্ন ভাতা দেওয়ার ঘোষণার পরে রাজনৈতিক বিতর্ক দেখা দিয়েছিল রাজ্যজুড়ে । কিন্তু আজ থেকে বহু বছর আগে থেকে বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুরে (Mukutmanipur) পরেশনাথ শিব মন্দিরের পুরোহিতরা সরকারি ভাতা ও বেতন পাচ্ছেন । বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে খরা কবলিত রাঙ্গামাটি বাঁকুড়াতে কাঁসাই ও কংসাবতী নদীর জলকে ধরে রেখে তা সেচের কাজে লাগানোর জন্য তৈরি হয়েছিল মুকুটমণিপুর জলাধার । কথিত ইতিহাস অনুযায়ী, সেই সময় এই জলাধার নির্মাণের কারণে প্রায় 157টি গ্রামের বাসিন্দাদের বিভিন্ন জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছিল । তারপরেই শুরু হয়েছিল বাঁধ নির্মাণের কাজ । আর সেই সময় মাটির নীচ থেকে বেরিয়ে আসে জৈন সভ্যতার বহু নিদর্শন ।
ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাটির বাঁধটি মুকুটের আকৃতির রহস্যময় টিলা দ্বারা বেষ্টিত । এই টিলার ওপরেই রয়েছে পরেশনাথ শিবলিঙ্গ (Mukutmanipur Pareshnath Temple)। জৈন সভ্যতার যে নিদর্শনগুলি মাটির নীচ থেকে বেরিয়ে এসেছিল, তার গুটিকতক এই পরেশনাথ শিব মন্দিরের রাখা হলেও বাকিগুলি সেই সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে চলে যাওয়া হয়েছিল ।
কাঁসাই ও কংসাবতী এই দুটি নদীর সঙ্গমে অবস্থিত এই মুকুটমণিপুর । সবুজ অরণ্য এবং বেলেপাথরের টিলা ঘেরা এক অপরুপ প্রাকৃতিক সম্পদ । মুকুটমণিপুর বাঁধটি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঁধ হিসাবে লিপিবদ্ধ । আশপাশে উপজাতীয় সংস্কৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে । তার টানেই আজ পর্যটকরা ভিড় জমান এই মুকুটমণিপুরের জলাধারে ।
বর্তমানে ঢেলে সাজানো হয়েছে মুকুটমণিপুরকে । ‘বাঁকুড়ার রানি’বলে পরিচিত এই মুকুটমণিপুর আজ বহু মানুষের কাছে একঘেয়েমি জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার এক অন্যতম ঠিকানা । রাজ্য সরকারের সেচ দফতরের অর্থানুকুল্যে পরেশনাথ মন্দিরের পুরোহিতদের বেতন ও ভাতা প্রদান অনেকের কাছেই অজানা । বাঁধ নির্মাণকালে তৎকালীন সেচ দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এই পুরোহিতদের বংশানুক্রমিকভাবে ভাতা ও বেতন প্রদানের যে রীতি চালু করেছিলেন, আজও তা বজায় আছে ।