বাঁকুড়া, 7 নভেম্বর : ভোটের হট্টগোলের মধ্যেই আচমকা হাজির হয়েছিলেন অমিত শাহ । মাটির দুয়ারে বসেই পাতপেড়ে খেয়ে গিয়েছিলেন । প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন । অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার ভার নেবেন । কিন্তু সে সব শুধু কথার কথা ছিল বলেই মনে করছেন বাঁকুড়ার বিভীষণ হাঁসদা । প্রথম প্রথম সাহায্য এলেও, দীর্ঘদিন ধরে নিজেরাই কষ্ট করে অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার খরচ চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি ।
তখন সবে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে । হঠাৎই খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আদিবাসী দিনমজুর বিভীষণের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ করবেন । নির্ধারিত দিনে, 2020-র ৫ নভেম্বর পৌঁছেও যান তিনি । দলের নেতাদের পাশে নিয়ে পাত পেড়ে খাওয়া-দাওয়া সারেন । সেখানেই জানতে পারেন, বিভীষণের স্কুলপড়ুয়া মেয়ে রচনা, সুগার এবং থাইরয়েডে ভুগছে । তাই বিভীষণকে মেয়ের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করা এমনকি দিল্লির এইমস-এ নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করার প্রতিশ্রুতি দেন শাহ ।
তারপর অনেক ঝড়ঝাপটা বয়ে গিয়েছে । শেষ হয়ে গিয়েছে ভোটও । বিজেপি নয়, ক্ষমতায় এসেছে সেই তৃণমূলই । আর সেই একই রয়ে গিয়েছে বিভীষণের সংসার । স্বামী-স্ত্রী মিলে দিনমজুরের কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালান । তার উপর মেয়ের রোজকার ইনসুলিনের খরচ । পেটে কিল মেরে তা চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁদের ।
আরও পড়ুন: Political Murder : বাঁকুড়ায় খুন তৃণমূল কর্মী, ফের প্রকাশ্যে গোষ্ঠীকোন্দল
কিন্তু এত যে প্রতিশ্রুতি পেলেন তার কী হল, বিভীষণের জবাব, ‘‘রাজনীতির শিকার হয়েছিলাম ৷’’ তাঁর কথায়, ‘‘মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে অমিত শাহ বলেছিলেন, চিকিৎসা, ওষুধপত্রের ভার নেবেন ৷ দিল্লির এইমস-এ নিয়ে গিয়ে মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে দেবেন বলেছিলেন ৷ প্রথম কিছু দিন সাহায্যও মিলেছিল ৷ তার পর বন্ধ হয়ে যায় ৷ এখন নিজেরাই কষ্ট করে চালাচ্ছি ৷’’ শুধু বিজেপিই নয়, তৃণমূলের তরফেও আশ্বাস মিলেছিল বলে জানান বিভীষণ ৷ কিন্তু কথাই সার ৷ প্রথম প্রথম কিছু দিন চালিয়ে, সরবরাহ নেই বলে হাত তুলে নেওয়া হয় ৷
কিন্তু বিভীষণ নিজের সমস্যার কথা জানালেও, তাঁর দাবি মানতে চাইছেন না কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার ৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘চিকিৎসার দায় নিয়েছি এবং পালনও করছি । মিডিয়া মিথ্যে প্রচার করছে ৷ ওঁর মেয়ের অসুখ ছোটবেলা থেকে ৷ সারাজীবন ইনসুলিন নিতে হবে ৷ তার জন্য কোন দোকানে যেতে হবে, কোন প্যাথলজিতে পরীক্ষা করাতে হবে, কোন চিকিৎসকের কাছে দেখাতে হবে, সব ব্যবস্থা করা আছে ৷ কিন্তু কেউ যদি না যায়, কী করতে পারি আমরা !’’
তৃণমূলকেও সে ভাবে পাশে পাননি বলে অভিযোগ করেছিলেন বিভীষণ ৷ কিন্তু বাঁকুড়া জেলায় তৃণমূলের চেয়ারপার্সন শ্যামল সাঁতরা বিজেপি এবং শাহকেই বেঁধেন ৷ তাঁর কথায়, ‘‘দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেই বিশ্বাস করা যাচ্ছে না । বাঁকুড়ায় আদিবাসী পরিবারের বাড়িতে কবজি ডুবিয়ে খাওয়া-দাওয়া করলেন ৷ সঙ্গে ছিলেন সুভাষবাবুও ৷ আদিবাসীদের মন কাড়তেই এত কাণ্ড ৷ ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি ৷ কিন্তু বিজেপি যে মিথ্যাচার করেছে, তাঁদের অপমান করেছে, এখন তা বুঝতে পারছেন বিভীষণবাবু ৷ বিজেপি কত নীচে নামতে পারে, বিভীষণবাবুর প্রতি তাদের প্রতারণাই তার প্রমাণ ৷’’
আরও পড়ুন: Kali Puja : মায়ের স্বপ্নাদেশে মন্দির প্রতিষ্ঠা, তিনশো বছরের ঐতিহ্যশালী বাঁকুড়ার হটনগর কালী
রাজনৈতিক টানাপড়েন বোঝার মতো এখনও বয়স হয়নি বিভীষণের ছোট্ট মেয়ে রচনার ৷ তবে তাকে লেখাপড়া শেখাতে, তার চিকিৎসা চালাতে বাবা-মা যে হিমশিম খাচ্ছে, তা বোঝার মতো বোধশক্তি রয়েছে তার ৷ তাই সরকার যদি একটু সাহায্য করে, তাদের এত কষ্ট সইতে হয় না বলে মত মেয়েটির । কেউ কথা রাখেনি বলে কোনও আক্ষেপ নেই বিভীষণ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের । শুধু মেয়ের চিকিৎসার একটা হিল্লে হয়ে গেলেই নিশ্চিন্ত হন । তবে আশা হারাচ্ছেন না তাঁরা । তাই ঔজ্জ্বল্য হারালেও, বাড়ির দেওয়ালে লেখা ‘ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহাজি স্বাগতম’ লেখাটি এখনও স্পষ্ট ৷