বিষ্ণুপুর, 7 জুলাই : রেশমের ওপর হালকা মসৃণ ও সুদৃশ্য কারুকাজ । একসময় বিষ্ণুপুরের রানিদের পরিধান ছিল বালুচরী শাড়ি । প্রচারের অভাব আর মহাজনদের কৌশলে পড়ে একপ্রকার ধুঁকছেন বালুচরী শাড়ির শিল্পীরা । তাঁদের সাহায্য করতে
যৌথ উদ্যোগ নিল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন ও তন্তুজ । আয়োজন করা হল দু'দিন ব্যাপী বালুচরী হাট । বিক্রি হল প্রায় 55 লাখ টাকার বালুচরী শাড়ি ।
গতকাল বিষ্ণুপুরের পুলিশ চৌকি সংলগ্ন গ্রামীণ এই হাটের সূচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক মানস মণ্ডল, তন্তুজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রবীন্দ্রনাথ রায় সহ মহকুমা প্রশাসনের আধিকারিকরা । আয়োজকদের তরফে জানানো হয়েছে, শিল্পীদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যে বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যবাহী এই বালুচরী শাড়ি সরাসরি কিনতে পারবেন মানুষ । পাশাপাশি এই হাটেই মিলবে বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী সিল্ক ।
আয়োজকরা জানান, এই হাটের শিল্পীদের কাছ থেকেই রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা তন্তুজ তাঁদের তৈরি বালুচরী সরাসরি কিনবে । পরে সেই শাড়িগুলি নির্দিষ্ট বিক্রয়কেন্দ্র থেকে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে ।
তন্তুজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রবীন্দ্রনাথ রায় বলেন, "এই হাটের মাধ্যমে তন্তুজের সঙ্গে শিল্পীদের সরাসরি যোগসূত্র তৈরি হচ্ছে । সরাসরি শিল্পীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট মূল্যে তাঁদের তৈরি শাড়ি কিনে নেওয়া হচ্ছে । পাশপাশি নতুন ডিজ়াইন, রং সহ অন্যান্য বিষয়ে শিল্পীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে । রাজ্যে জামদানি, টাঙ্গাইল সহ অন্যান্য শাড়ির সঙ্গে বালুচরী শাড়ির ক্ষেত্রেও ডিজ়াইন প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।" এই প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীকে 'তাঁতের হাটে' পুরস্কৃত করা হয় বলে জানান তিনি । একইসঙ্গে জানান, গতবছরে এখান থেকে তন্তুজের বালুচরী শাড়ি সংগ্রহের সংখ্যা ছিল 400 । এবছর সেই সংখ্যা পৌঁছেছে 700-তে । এখনও পর্যন্ত 55 লাখ টাকার শাড়ি বিক্রি হয়েছে ।
মহকুমাশাসক মানস মণ্ডল বলেন, "এই হাটে 70 জনের বেশি শিল্পী অংশ নিয়েছেন । আশা করছি এই হাটে অংশ নেওয়া শিল্পীদের বেশিসংখ্যক শাড়ি তন্তুজ সংগ্রহ করবে ।" তিনি জানান, বর্ষার সময়ে বিক্ষিপ্তভাবে আসা পর্যটকরা বালুচরী কেনাকেটা করেন । তার বাইরে সেভাবে বিক্রি হয় না । আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মহাজনরা শিল্পীদের কাছ থেকে কম দামে শাড়ি সংগ্রহ করে আগামী পুজোর মরশুমে চড়া দামে বিক্রি করেন । সেকারণেই গরিব শিল্পীদের মহাজনী খপ্পর থেকে বাঁচাতে তন্তুজের মতো সরকারি সংস্থাকে নির্দিষ্ট মূল্যে বালুচরী শাড়ি বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । এর ফলে আর্থিক দিক থেকে বালুচরী শিল্পীরা লাভবান হবেন ।
জনমুখে প্রচারিত, মুর্শিদাবাদের নবাব বালুচর গ্রামের শিল্পীদের দিয়ে সিল্কের শাড়ি তৈরি করাতেন । এই খবর বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের কানে পৌঁছালে রানিদের জন্য ওই শাড়ি তৈরি করাতে বালুচর গ্রাম থেকে শিল্পীদের নিয়ে আসা হয় বিষ্ণুপুরে । তখন থেকেই বিষ্ণুপুরে তৈরি হয় এই শাড়ি । বালুচরের শিল্পীরা তৈরি করতেন বলে নাম দেওয়া হয় বালুচরী ।