আলিপুরদুয়ার, 28 এপ্রিল : লকডাউনের নিয়মকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভারত থেকে ভুটানে অবাধে রপ্তানি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার অনাবশ্যকীয় ব্যাবসায়িক সরঞ্জাম । এই বিষয়কে কেন্দ্র করে দোষ ঠেলাঠেলির পালা শুরু হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যে সরকারের আধিকারিকদের মধ্যে ।
ভুটানে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের তরফে প্রতিদিন একটি তালিকা প্রকাশ হয় । সেই তালিকায় গাড়ির নম্বর, চালকের নাম, কী পণ্য, কতটা ওজন, কোন মালিকের গোডাউন থেকে পন্য বোঝাই হবে, ভুটানে কোন জায়গায় সেই পণ্য নামানো হবে তার বিস্তারিত বিবরণ সীমান্তে পাহারারত জওয়ানদের দেওয়া হয় । ওই তালিকা দেখে ভুটানে যাবার অনুমতি দেওয়া হয় পণ্য বোঝাই লরিগুলোকে । কিন্তু, বর্তমানে লকডাউনের ফলে অনাবশ্যকীয় পণ্যের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে । শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ক্ষেত্রেই ছাড় দেওয়া হয়েছে । অথচ অভিযোগ, সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভারত-ভুটান সীমান্ত সংলগ্ন জয়গাঁ থেকে প্রতিদিন গড়ে কয়েকশো অনাবশ্যকীয় পণ্যের লরি ভুটানে প্রবেশ করছে । কলকাতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য নিয়ে ভুটানে যায় এই লরিগুলো ।
লকডাউনের নিয়মকে উপেক্ষা করে কীভাবে, কোন পথে, কী উপায়ে এই অনাবশ্যকীয় পণ্য ভুটানে প্রবেশ করছে তার সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি কোনও পক্ষের থেকেই । জয়গাঁর স্থানীয় ব্যাবসায়ী মহলের একাংশের অভিযোগ এই বিষয়ে বেশ কিছু রাঘব বোয়াল জড়িত । তাদের ইশারায় অবৈধভাবে কনসুলেট জেনেরাল অফিস থেকে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে অনাবশ্যকীয় পণ্যের গাড়ির নম্বর জুড়ে দেওয়া হচ্ছে তালিকায় । তারপর বিনা বাধায় সেই গাড়িগুলো প্রবেশ করছে ভুটানে ।
জয়গাঁ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রামাশংকর গুপ্তা বলেন, "আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না । এই লকডাউনের মাঝে কোন আইনে ভুটানে অনাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে তা জানি না । কলকাতা, শিলিগুড়ি, রানিনগর-সহ রাজ্যের একাধিক জেলার গাড়ি জয়গাঁ দিয়ে ভুটানে প্রবেশ করছে । এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ভুটানে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃপক্ষের এবং জেলা প্রশাসনের ।
ভুটানে অবস্থিত ভারতের কনসুলেট জেনেরাল আশিস মিধা বলেন, "কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের গাইড লাইন মেনে যে সমস্ত পণ্যসামগ্রী রপ্তানির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেই সমস্ত পণ্যকে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে ভুটানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে । মূলত চাল, ডাল, আটা, তেল, ময়দা-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ভুটানে পাঠানো হচ্ছে । তা ছাড়া অন্য কোনও সামগ্রী কেউ যদি ভুটানে রপ্তানি করে থাকে তা নিজেদের দ্বায়িত্বে করছেন না হলে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পাঠাচ্ছেন । বিশেষ চিঠির মাধ্যমে ভুটানের কোনও দোকান বা গোডাউনে অনাবশ্যকীয় সামগ্রী পাঠানোর কোনও নির্দেশ আমাদের কাছে নেই । যদি বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্য বাদে অন্য কোনও সামগ্রী ভুটানে পাঠাতে হয় তবে তাদের তরফে সেকথা চিঠি মারফত আমাদের জানাতে হবে । স্থানীয় স্তরে আমরা কোনও কাজ করি না । তারপর আমাদের আ্যম্বাসির তরফে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারকে সেকথা জানানো হবে । এরপর রাজ্য ও কেন্দ্র তাদের সিদ্ধান্ত নেবে ।
আলিপুরদুয়ার জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা বলেন, "কেন্দ্র সরকার এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে । আমাদের এই বিষয়ে কোনও হাত নেই ।"
সীমান্তে পাহারারত 53 নম্বর ব্যাটেলিয়ানের ফালাকাটার কমান্ডার অরবিন্দ কুমার জানান, "ভুটানে অবস্থিত কনসুলেট জেনেরালের দপ্তর থেকে যে সমস্ত গাড়ির তালিকা আমাদের কাছে আসছে সেই গাড়িগুলোকে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছি ।"