আলিপুরদুয়ার, 6 ফেব্রুয়ারি : মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ ৷ একবার নয় ৷ বারবার ৷ ঘটনা আলিপুরদুয়ার জেলার আলিপুরদুয়ার এক নম্বর ব্লকের এক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৷ স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের শিকার হয়ে একাধিকবার অন্ত:সত্ত্বা হয়ে পড়েন বছর চল্লিশের সরলা (নাম পরিবর্তিত) ৷ গত কয়েকবছরে তিনি চার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ৷ সেই চারজনের মধ্যে প্রথম তিনজন কোথায়, কেউ জানে না ৷ আলিপুরদুয়ার থানার তরফে জানা গেছে, সরলাদেবীর তরফে এখনও পর্যন্ত ধর্ষণ বা শিশু চুরির কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি ৷ সরলার আত্মীয়রা জানিয়েছে, সরলার চতুর্থ সন্তানকে উৎপল দাস নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে ভরতি করেন ৷ হাসপাতাল থেকে জানা গেছে, শিশুটিকে সরকারি হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে ৷ কিন্তু, সরলাকে কে বা কারা ধর্ষণ করেছে ? সরলার প্রথম তিন সন্তান কোথায় গেল ? তিনজনই কি চুরি গেছে ? চুরি করলে কারা করেছে ? কেউ কি দত্তক নিয়েছে ? দত্তক নিলে তা কি আইন মেনে হয়েছে? যদি কেউ দত্তক না নিয়ে থাকে তাহলে সরলার সন্তানরা কোথায় গেল? তারা শিশুপাচার চক্রের খপ্পড়ে পড়েনি তো? এরকম একাধিক প্রশ্ন তুলেছে স্থানীয়রা ৷ তবে কোনও প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারেনি স্থানীয় পঞ্চায়েত ও আলিপুরদুয়ার জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (CWC) ৷ তাদের তরফে জানানো হয়েছে, এখনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি ৷ স্থানীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে ৷
এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছে, বছর 15-16 আগে সরলার এক লটারি বিক্রেতার সাথে বিয়ে হয় ৷ বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সে ৷ এরপর বাপের বাড়িতে ফিরে আসে । কিছুদিন পরই সরলার মা মারা যান ৷ ফলে সরলা একা হয়ে যান ৷ তাকে দেখার কেউ ছিল না ৷ মানসিক ভারসাম্যহীন সরলা বাড়িতে থাকত না ৷ এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াত ৷
সরলার দিদি জানিয়েছেন, তাঁদের মা মারা যাওয়ার পর থেকেই বিপত্তি ৷ সরলা শ্বশুরবাড়ি ফিরে যায়নি ৷ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত ৷ তারই সুযোগ নিয়েছে দুষ্কৃতীরা ৷ চারবার অন্ত:সত্ত্বা হয় তাঁর বোন ৷ কারা তাঁর বোনের অসহায়তার সুযোগ নিয়েছে তা তিনি জানেন না ৷ "সরলার সন্তানরা কোথায় রয়েছে ?" প্রশ্নের উত্তরে সরলার দিদি জানান, "প্রথম সন্তান আলিপুরদুয়ার জংশনের কালীবাড়ি এলাকায় রয়েছে । আর একজন এক নম্বর ব্লকের ঘাগড়া এলাকায় রয়েছে ৷ তৃতীয় সন্তানের হদিশ জানি না ।" স্থানীয়দের একাংশের দাবি, সরলার সন্তানদের দত্তক নিয়েছে কেউ ৷ তবে সরলার দিদি বা প্রতিবেশী কেউই দত্তক নেওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি ৷
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, মাস ছয়েক আগে চতুর্থ সন্তানের জন্ম দেয় সরলা ৷ এক পরিত্যক্ত জায়গায় শিশুটি জন্ম হয়৷ কিন্তু কেউ সরলার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি ৷ সদ্যোজাত ক্রমশ অসুস্থ হতে শুরু করে ৷ সেখানে এসে শিশুটিকে উদ্ধার করেন উৎপল দাস নামে এক ব্যবসায়ী ৷ তিনি বলেন, "খবর পেয়ে ওখানে গিয়ে বাচ্চাটিকে খুব খারাপ অবস্থায় উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ সেখানেই ছিল ও ৷ আমরা বাচ্চাটিকে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করি ৷ হাসপাতাল থেকে আমাদের আইনি প্রক্রিয়ার কথা জানানো হয় ৷"
সরলার চতুর্থ সন্তানের হদিশ পাওয়া গেলও প্রথম তিন শিশু কোথায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরলার এই অবস্থার কথা স্থানীয় পঞ্চায়েত জানে ৷ কিন্তু, তাদের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ৷ পঞ্চায়েত সরলার জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করলে এই অবস্থা হতো না ৷ তিন তিন জন বাচ্চার উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও পঞ্চায়েতের জানা ৷ অথচ তারা কোনও পদক্ষেপ করেনি ৷ এনিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা শিউলি রায় জানান, সরলার চতুর্থ সন্তানের বিষয়টি তাঁর জানা ৷ প্রথম তিনজনের কথা তিনি জানেন না ৷ কারণ, সেসময় বিয়ে হয়ে এই এলাকায় আসেননি ৷ সরলার চতুর্থ সন্তানকে দত্তক নেওয়ার জন্য কয়েকজনকে তিনি জানিয়েছেন । সরলাকে কে বা কারা ধর্ষণ করেছে তাও তিনি জানেন না ৷ তবে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে ৷
এবিষয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির প্রধান ডোরা ভট্টাচার্য বলেন, "এলাকার পঞ্চায়েতের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে । এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি । কয়েকজনের কাছ থেকে ফোন পেয়ে বিষয়টি জানতে পারি ৷ আমরা তদন্ত শুরু করেছি । জানি না কেউ দত্তক নিয়েছে কি না ৷ নিলে তা আইন মেনে নেওয়া উচিত ৷ না হলে তা বেআইনি ৷ আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করছি ।"
কেউ কেউ এই ঘটনা দেখে জলপাইগুড়ি শিশুপাচারকাণ্ডের কথা স্মরণ করছেন ৷ 2015 সাল থেকে 2016 সালের মধ্যে বিমলা শিশুগৃহ থেকে বেআইনিভাবে 17টি শিশুকে দত্তক দেওয়ার অভিযোগ সামনে আসে৷ গ্রেপ্তার করা হয় ওই হোমের কর্ণধার চন্দনা চক্রবর্তীকে ৷ সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে CID-র আধিকারিকরা জানতে পারেন, গর্ভবতী কুমারীদের নিয়ে ব্যবসা চলত হোমে ৷ তাদের সেখানে রেখেই বাচ্চা প্রসব করানো হত ৷ তারপর সেই বাচ্চা বেআইনিভাবে দত্তক দেওয়া হত ৷ সরলার ক্ষেত্রেও এরকমই কিছু হয়েছে কি না সেই প্রশ্নও তুলেছে কেউ কেউ ৷