আলিপুরদুয়ার , 18 মে : সোমবার দুপুর বারোটা । কোরোনা আতঙ্কে ও লকডাউনের প্রভাবে প্রায় স্তব্ধ জেলা শহর । মাথার উপর প্রখর রোদ ।প্ল্যাকার্ড হাতে মুখে মাস্ক, কোলে বাচ্চা, নিয়ে বক্সা ফিডার রোড ধরে হাঁটছেন কয়েকজন মহিলা । সঙ্গে রয়েছেন জনা কয়েক অশীতিপর বৃদ্ধ , বৃদ্ধা । তাঁদের গন্তব্য আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ সুপারের অফিস । উদ্দেশ্য , জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তরের সামনে ধরনা , অবস্থান বিক্ষোভ ।
এঁরা প্রত্যেকেই রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ কনস্টেবলদের পরিবারের সদস্য। তাঁদের মধ্যে কেউ কনস্টেবলের স্ত্রী , সন্তান কিংবা বাবা, মা । তাঁরা প্রত্যেকেই মৌন মিছিলে সামিল হয়েছেন ৷ কিন্তু, কেন এই মৌন মিছিল ? তাঁদের দাবি , তাঁদের ঘরের, ছেলে, স্বামী, পিতা যাতে কোরোনার কবলে না পড়ে । তাঁরা পুলিশের কর্তব্যও করুক আবার পরিবারকেও সময় দিক । এই দাবিতেই আজ তাঁরা জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তরে অবস্থান বিক্ষোভ করেন ৷ অবস্থান বিক্ষোভে আসা ওই মহিলাদের সরাসরি অভিযোগ , মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে অমান্য করে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশে কর্মরত কনস্টেবলদের বাইরে পোস্টিংয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ যখন ভিন রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাচ্ছে রাজ্য সরকার , তখন রাজ্য সরকারের পুলিশদের পোস্টিং দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে । জেলার গণ্ডি পেরিয়ে 250-300 কিলোমিটার দূরে পাঠানো হচ্ছে এই পুলিশ কর্মীদের । কোরোনা আবহে এই সশস্ত্র পুলিশ কনস্টবলদের বাইরের জেলায় পোস্টিং আটকাতে আজ কনস্টবলদের পরিবারের তরফ থেকে আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয় । তবে জেলা পুলিশ সুপার উপস্থিত না থাকায় সেই স্মারকলিপি গ্রহণ করেন মহকুমা পুলিশ সুপার কুতুবউদ্দিন খান ।
এক পুলিশ কর্মীর স্ত্রী মৌসুমি মিত্র বলেন , ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসছে রাজ্য সরকার । অথচ আমাদের বাড়ির মানুষদের পোস্টিং দিয়ে জেলা থেকে 250-300 কিলোমিটার দূরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে । মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন , পুলিশ কর্মীদের নিজের জেলা থেকে 40-50 কিলোমিটারের মধ্যে পোস্টিং দিতে । যাতে তাঁরা পরিবারের দেখভাল করতে পারেন । আবার পুলিশের কর্তব্যও করতে পারেন । কিন্ত, তা না করে তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে অনেক দূরে । ’’ তাঁর করুণ আবেদন , ‘‘ এই কোরোনা সময়কালে স্বামীর মুখ দেখতে পারিনি । কোলের বাচ্চাটির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই । সবসময় একটা অজানা ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে । মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন তিনি যেন আমাদের বিষয়টি চিন্তা করে দেখেন ।’’
অন্য এক পুলিশ কর্মীর স্ত্রী সোনালি দাস বলেন , ‘‘কোলে বাচ্চা রয়েছে , বাড়িতে শ্বশুর, শাশুড়ি অসুস্থ ৷ একা হাতে সব কিছু করতে হয় । বাচ্চাকে কোলে নিয়ে শ্বশুরের ওষুধ কিনতে রাস্তায় যেতে হয় । অথচ দশ বছরেও কোনওদিন দূরে পোস্টিং হয়নি । আর এখন জেলা থেকে প্রায় 200 কিমি দূরে পোস্টিং হয়েছে । তাই দিদির কাছে অনুরোধ আমাদের বাড়ির মানুষদের পোস্টিং যেন জেলার মধ্যেই করে ।
আলিপুরদুয়ার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কুতুবউদ্দিন খান জানান , বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে ।