আলিপুরদুয়ার, 27 মে: যুবনেতার আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল কার্যালয় নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় করা 'অভিমানী' পোস্টে দানা বাঁধল বিতর্ক। জেলা যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মৃদুল বসাক তাঁর ফেসবুকে প্রোফাইলে মন্তব্য করেন, দলীয় কর্মী হওয়া সত্ত্বেও, যদিও তাঁদের হাতেই তৈরি কার্যালয়, তবু তৃণমূলের বর্তমান কার্যালয়ে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা ব্রাত্য। ঘটনায় রাজনৈতিক জল্পনা শুরু হলেও বিষয়টিকে প্রকাশ্যে গুরত্ব দিতে চায়নি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
সম্প্রতি যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মৃদুল বসাক একটি ফেসবুক পোস্ট করেন। যেখানে তিনি লেখেন, "আমাদের রক্তঝরা পরিশ্রম, আমাদের সংঘশ্রী, বর্তমানে আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি অফিস। কিন্তু আমরাই ব্রাত্য। এটাই বাস্তব।" এরপরই শুরু হয় জল্পনা। যেহেতু মুহুর্তে ভাইরাল হয় সেই পোস্ট। দলের যুবনেতার সোশাল মিডিয়ায় এহেন পোস্ট ঘিরে বিতর্ক শুরু হয় তৃণমূলের অন্দরে। সুযোগ বুঝে তৃণমূলের যুবনেতার পোস্টে বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করেন জেলা BJP নেতা নেপাল সাহা, জেলা কংগ্রেস নেতা অরিন্দম সেন, CP(I)M নেতা সুমিত ভট্টাচার্য প্রমুখ। এছাড়াও যুবনেতার পোস্টে মন্তব্য করেন পুলিশ আধিকারিক নীলয় ঝা, বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীর দিদি শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী সহ জেলার বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
তাঁর পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তৈরি হলেও নতুন করে এই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি মৃদুল বসাক। তিনি জানান, যা লেখার পোস্টে লিখে দিয়েছি। এর বেশি কিছু মন্তব্য করতে চাই না।
এই প্রসঙ্গে জেলার প্রাক্তন সভাপতি তথা আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, আমি ওঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওদের কী অভিমান হয়েছে তা জেনে জেলা নেতৃত্বকে জানাব। জেলা পার্টি অফিসে একটি রক্তদান শিবির হয়। সেখানে ওঁদের ডাকা হয়নি। তাই ওঁদের অভিমান হয়েছে। সমস্যা মিটে যাবে।
দলের বর্তমান জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামীর মন্তব্য, আমি ওই পোস্ট দেখিনি। সুতরাং এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।
তৃণমূলের বর্তমান জেলা অফিসটির যে জায়গায় এক সময় সেখানে সংঘশ্রী নামের একটি ক্লাব ছিল। সেই ক্লাবের অধিকাংশ সদস্য তৎকালীন রাজ্য ছাত্রপরিষদ সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর অনুগামী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। 2011 সালে তৃণমূল সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় এলে রাজ্য ছাত্রপরিষদের সভাপতি শাসক দল তৃণমূলে যোগদান করেন। যার পর সৌরভ চক্রবর্তীর সঙ্গে সঙ্গে প্রায় গোটা সংঘশ্রী ক্লাব তৃণমূলে যোগদান করে। সেই সময় আলিপুরদুয়ারে তৃণমূলের নিজস্ব জেলা কার্যালয় বলে কিছু ছিল না। ক্লাবের সদস্যদের অধিকাংশ সৌরভ চক্রবর্তীর অনুগামী হওয়ায় সংঘশ্রী ক্লাবটিকে সৌরভ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে তৃণমূলের জেলা পার্টি অফিস হিসেবে গড়ে তোলা হয়। একই সময়ে জেলায় সৌরভ চক্রবর্তীর অনুগামী হিসেবে পরিচিত মদন ঘোষ, মৃদুল বসাক, সঞ্জীব বর্মনরা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেয়। অন্যদিকে 2011 থেকেই জেলা তৃণমূলের প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন সৌরভ চক্রবর্তী। সৌরভের ডান হাত হিসেবে উঠে আসে মৃদুল, মদন, সঞ্জীবদের নাম। সৌরভ চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে জেলায় বাড়তে থাকে তাঁর অনুগামীদের ক্ষমতাও। তবে বেশিদিন স্থায়ী হয়নি সৌরভ এবং তাঁর অনুগামীদের "সুসময়"।
প্রথমে রাজ্য নেতৃত্ব দুই জেলার সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয় সৌরভ চক্রবর্তীকে। একে একে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের পদ থেকেও সৌরভকে সরিয়ে দেয় নেতৃত্ব। ধীরে ধীরে প্রভাব কমতে থাকে সৌরভের। সেই সঙ্গে তার অনুগামীদেরও। সৌরভ চক্রবর্তীর পর আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূলের সভাপতি হন কালচিনির মোহন শর্মা। মোহন শর্মার পর বর্তমান সভাপতি মৃদুল গোস্বামী। জেলার রাজনৈতকি মহলের বক্তব্য, ক্ষমতার এই পালা বদলে দলে কতকটা ব্রাত্য হয়ে পড়ে সৌরভের সঙ্গীরাও। এদিকে, যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মৃদুল বসাক ও তাঁ সঙ্গীদের অভিমান, বর্তমানে দলে তাঁরা এতটাই অপ্রাসঙ্গিক যে জেলা পার্টি অফিসে অনুষ্ঠিত রক্তদান শিবিরেও তাঁদের ডাকা হয় না!
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাসক দলের এক জেলা নেতারা মন্তব্য, যার যা সুবিধা ভোগ করার তারা তা করে নিয়েছে। এখন সুবিধা করতে না পেরে দলের জেলা কার্যালয় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছে।
এই বিষয়ে দলের প্রাক্তন সভাপতি মোহন শর্মা জানান, এভাবে সোশাল মিডিয়ায় দলের জেলা কার্যালয় নিয়ে পোস্ট করা অনুচিত। কারও অভিমান থাকলে জেলা নেতৃত্বকে জানাতে পারত।