আলিপুরদুয়ার, 5 মে : আলো ঝলমলে প্যান্ডেল । সঙ্গে সানাইয়ের সুর । ভিতরে কন্যাপক্ষ, পাত্রপক্ষ ও আগন্তুকদের আনাগোনা । কাজির সামনে মিঞাঁ-বিবি একে অপরকে করলেন কবুল । নিকাহপর্ব মিটল ভালোভাবেই । কিন্তু বিদায় বেলায় পাত্রপক্ষের আচরণে বেঁকে বসলেন পাত্রী । নিকাহের আসর মুহূর্তে হয়ে উঠল রণাঙ্গন । সানাইয়ের সুরের জায়গায় বাধল হাঙ্গামা ।
নিকাহের আসবাবপত্রের গাড়ি ভাড়া নিয়ে মূলত উভয়পক্ষের মধ্যে গন্ডগোলের সূত্রপাত । গন্ডগোল থেকে শুরু হল হাতাহাতি । হাতাহাতি এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে নতুন বিবিকে খাটের স্ট্যান্ড দিয়ে মারতে উঠল শওহরের ভগ্নিপতি । এর পরই পাত্রীপক্ষ ক্ষেপে গিয়ে আটকে রাখল পাত্র সহ 40 জন বরযাত্রীকে । টানা তিনদিন পাত্রীর বাড়িতেই আটকে থাকলেন বরযাত্রীরা । ঘটনাটি আলিপুরদুয়ারের পশ্চিম মাদারিহাটে । পরে পুলিশ এসে বরযাত্রীদের 35 জনকে উদ্ধার করে । পাত্রীপক্ষের দাবি, নিকাহের অনুষ্ঠানে যে টাকা খরচ হয়েছে তা না মেটানো পর্যন্ত বর ও বরের পাঁচ জন সঙ্গীকে ছাড়া হবে না । শেষমেশ পুলিশ ও পঞ্চায়েতের মধ্যস্থতায় আজ তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয় ।
শুক্রবার (3 এপ্রিল) সন্ধ্যায় বসেছিল নিকাহের আসর । পাত্রীর আব্বা আনোয়ার হোসেন বলেন, মাস চারেক আগে কোচবিহারের শুকটা বাড়ির নুর হোসেনের বড় ছেলে আবুবক্কর সিদ্দিকির সঙ্গে তাঁর কন্যার নিকাহ ঠিক হয় । নগদ বাবদ 60 হাজার টাকা দাবি করে পাত্রপক্ষ । সেইসঙ্গে দুই ভরি সোনার গহনা ও আসবাবপত্রও দাবি করে । পাত্রপক্ষের দাবি মতো প্রাথমিকভাবে নগদ 46,500 টাকা দেওয়া হয় । বাকি 13,500 টাকা জোগাড় করতে না পারায় বলা হয়েছিল নিকাহের দিন সাতেকের মধ্যেই দিয়ে দেওয়া হবে । মূল ঝামেলার শুরু সেই থেকেই । তিনি আরও বলেন, "এরপর বিদায় বেলায় আসবাবপত্রের গাড়ি ভাড়া নিয়ে যুদ্ধ বাধিয়ে দেয় পাত্রপক্ষ । আমার মেয়েকে খাটের স্ট্যান্ড দিয়ে মারতে ওঠেন বরের ভগ্নিপতি। আমার ভাইপো রহুল আমিনকে গলা টিপে ধরেন পাত্রপক্ষের একজন । আমার মেয়ে জানিয়ে দিয়েছে, ওই পাত্রের সঙ্গে ঘর বাঁধবে না । আমরাও ওখানে মেয়েকে পাঠাব না । এই বিষয়ে পাত্রপক্ষের সঙ্গে আমাদের আলোচনাও হয়ে গেছে । কিন্তু নিকাহ বাবদ যে টাকাটা পাত্রপক্ষকে দেওয়া হয়েছে সেটা আমরা ফেরত চাইছি । সেই টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত পাত্র ও তাঁর সঙ্গীদের আমরা এখানেই আটকে রাখব ।"
এই প্রসঙ্গে পাত্রের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "আমি তো বসেছিলাম। আমি কী ভাবে দেখব কারা কী করেছে? আমার ভুল হয়ে গেছে । "
মাদারিহাট থানার OC অনির্বাণ মজুমদার বলেন, "পাত্র বা পাত্রীপক্ষের থেকে কোনও অভিযোগ পাইনি । তবে এলাকার বাসিন্দাদের কাছে এই কথা শুনে শনিবার রাতে গিয়ে আটক বরযাত্রীদের উদ্ধার করে নিয়ে আসি । বর ও পাত্রপক্ষের আরও চার থেকে পাঁচ জন এখনও মেয়ের বাড়িতে আছে । লিখিত অভিযোগ না পেলে কী করব?"
পশ্চিম মাদারিহাটের পঞ্চায়েত প্রধান স্বরূপ উপাধ্যায় বলেন, " আমরা ঘটনার কথা শুনে বিষয়টির মীমাংসা করতে গেছিলাম । পাত্রীপক্ষ খুবই গরিব । তাঁদের দাবি, নিকাহের জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে তা ফেরত না দিলে তাঁদের ছাড়া হবে না । এরপরে আমরাই পুলিশে খবর দিই ।"
তবে শেষমেশ পুলিশ ও পঞ্চায়েতের মধ্যস্থতায় পাত্রপক্ষ পাত্রীপক্ষের দাবি মতো টাকা ফেরত দিতে রাজি হয় । অবশেষে মুক্তি পান বর ও আটক বরযাত্রীরা ।