সোদপুর, 22 অগাস্ট : বাবা অজয় আচার্য পুজো করে বেড়ান । মা রীতা আচার্য পরিচারিকার কাজ করে সংসারের সাহায্য করেন । এই ভাবেই চলত জাতীয় পর্যায়ের দৌড়বিদ সোদপুর ঘোলার সাগর আচার্যের ৷ কিন্তু কোরোনা ভাইরাস প্যানডেমিকে এখনও লকডাউন চলছে । ফলে সাগরের বাবার যজমানি এখন বন্ধ । কাজ হারিয়েছেন মা রীতা আচার্যও ৷ তাই লকডাউনের ধাক্কায় বেজায় সমস্যায় সাগর আচার্যের পরিবার ৷
2015 সাল থেকে রাজ্য পর্যায়ের একাধিক প্রতিযোগিতায় পদক জয় অভ্যাস করে ফেলেছেন সাগর ৷ বারবারই প্রতিকূলতা সরিয়ে এগিয়ে চলা অভ্যাসে পরিণত করেছেন । লকডাউনের সময় পরিবারের অভাবের ছবি দূর করতে পথে নেমেছিলেন সাগর । জামাইবাবুর সঙ্গে মাছ বিক্রি শুরু করেন । দিনের শেষে কিছুটা উপায় মিলেছিল । কিন্তু সাগর চাইলেই তো সব কিছু তাঁর মতো করে হবে না । পাড়ায় ঘুরে তাঁর মাছ বিক্রি করার চেষ্টায় বাধা দেন বাসিন্দারা । অভিযোগ, এভাবে কোরোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে । ‘‘বেশ চলছিল জানেন । আমরাও খেয়ে পরে বাঁচছিলাম । কিন্তু পাড়ার লোকেরা বলল কোরোনা ভাইরাস না কি এভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে । আর পাড়ায় ঢুকতে দিল না৷’’ চোখের কোনায় জল নিয়েই নিজের গল্প শোনাচ্ছিলেন সাগর ৷
এই সময় সাহায্যের হাত বাড়ান সাগরের কোচ সীতাংশু আচার্য ও কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব । তাঁদের আর্থিক সাহায্য এবং ধার করে এখন ভাত মুখে তোলার লড়াই । ‘‘স্যার না থাকলে আমার এই অবধি আসা হত না । স্যার আমাকে বাবার মতো করে আগলে রেখেছেন । যা কিছু করছি সব এই মানুষটির জন্যে ৷’’ বলেন সাগর ৷ বাংলার ক্রীড়াদুনিয়ায় এমন কিছু মানুষ আছেন যাঁরা অজ্ঞাত প্রতিভাদের তুলে এনে জীবনের রাজপথে দাঁড় করিয়ে দেন । আপাত দৃষ্টিতে তাঁদের এই কাজ ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো মনে হতে পারে ।’ কিন্তু মতি নন্দীর, ‘ক্ষিদ্দারা’ আছেন বলেই তো আজ ‘কোনিদের’ সাফল্যের মঞ্চে দেখা যায় । দিনের শেষে মূল্য পায় সংগ্রাম ।
সীতাংশু আচার্য সেই বাস্তবের ‘‘ক্ষিদ্দা’’ । পরিবহন দপ্তরের চাকুরি থেকে ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট নিয়ে প্রতিভা অন্বেষণে ব্যস্ত । এইকাজে তাঁর দোসর সহধর্মিণী । আচার্য দম্পতির এই প্রতিভা অন্বেষণ করে তাঁদের গড়ে তোলার খবর সোদপুরের নাটাগড়ের কদমতলা অটোস্ট্যান্ডের কাছের পাড়া চন্দ্রলোকের সবাই জানেন । ‘‘সাগরের মধ্যে বড় হওয়ার খিদেটা রয়েছে । সাফল্য পাচ্ছে । তবে আত্মতুষ্ট হলে চলবে না । রাজ্য পর্যায়ে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ধাপে সাফল্য পেয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সফল হয়েছে । সম্প্রতি জাতীয় পর্যায়ে এবং ক্রশ কান্ট্রিতেও সফল হয়েছে । তাই ওকে নিয়ে আশায় আছি৷’’ বলছিলেন সীতাংশু আচার্য ৷
2015 সালে রাজ্য অ্যাথলেটিকসে অনূর্ধ্ব 16 বিভাগে 800 মিটারে সোনা জেতেন সাগর । তারপর তাঁর পায়ে পায়ে সাফল্য নিয়ম করে দৌড়েছে । বাংলার হয়ে পূর্বাঞ্চল মিট, স্কুল দলের হয়ে জাতীয় স্কুল অ্যাথলেটিকস, সব জায়গাতেই সাগরের নামের পাশে পদকের আলো । সীতাংশু আচার্য ছাড়াও সুখেন মণ্ডলের কাছে কোচিং করেন সাগর । 800 এবং 1500 মিটারে দৌড়ে জাতীয় রেকর্ড গড়ার স্বপ্ন বছর কুড়ির সাগরের চোখে । লকডাউনে মাঠে অনুশীলনের সুযোগ নেই । তাই সীতাংশু আচার্যের বাড়ির ছাদের জিমে ফিটনেস বজায় রাখার কঠোর পরিশ্রম করে চলেন সাগর ।