কলকাতা, 2 মার্চ : কিছু কিছু খেলা থাকে যা ময়দানে সবার অলক্ষ্যে হয়ে থাকে । সেপাক টাকরো খেলাটা সেরকমই । যাঁদের ময়দানে যাতায়াত আছে, তাঁরা হয়ত জানেন । নামটাও অনেকেই শুনে থাকবেন । কিন্তু বর্তমানে ময়দানেও আর সেভাবে দেখা যায় না এই খেলা ৷ সেপাক টাকরোর রাজ্য সংস্থার নতুন সভাপতি ড. পার্থসারথি গঙ্গোপাধ্যায় অবলুপ্তপ্রায় এই খেলাকে বাংলায় ফেরাতে মরিয়া ৷
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একটি জনপ্রিয় খেলার নাম সেপাক টাকরো । চিন, থাইল্যান্ডে যা খুব জনপ্রিয় । সেপাক টাকরো আসলে হল কিক ভলিবল । হাতের পরিবর্তে পা, হাঁটু, বুক ও মাথা ব্যবহার করে খেলা হয় ৷ খেলার বলটি নরম কাঠের তৈরি ৷ অনেকটা পা দিয়ে ভলিবল খেলার মতো । অর্থাৎ, ভলিবল খেলতে হবে কিন্তু পা-এর সাহায্যে । এই খেলার কোর্ট অনেকটা ব্যাডমিন্টনের আকারে হয় । আর নেট অনেকটা ভলিবলের কোর্টের মতো । তবে উচ্চতা কম ৷ 5 ফুটের একটু বেশি । চারটি ইভেন্টে হয় খেলা । গেম হয় 21 পয়েন্টের । 1990 সালে বেজিং এশিয়ান গেমসে দিয়ে এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়া আসরে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেপাক টাকরো । অনেকেই জানেন না 2018 জাকার্তা এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জিতে ইতিহাস গড়েছিল ভারতীয় সেপাক টাকরো টিম ৷ এটাই ছিল এশিয়ান গেমসে সেপাক টাকরোয় ভারতের প্রথম পদক জয় ৷
পশ্চিমবঙ্গে সেপাক টাকরোর পথচলা শুরু 1983 সালের পর । ততদিনে সেপাক টাকরো ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া তৈরিও হয়ে গিয়েছিল । এ রাজ্যে সেপাক টাকরো একটা সময় ( আটের দশকে শেষ থেকে ও নয়ের দশকের শেষ দিক পর্যন্ত ) মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করেছিল । প্রসঙ্গত, বাংলায় অরূপ ঠাকুর ও সুকৃতি দত্তর হাত ধরে সেপাক টাকরোর চর্চা শুরু হয় । শেষবারের মতো বাংলায় সেপাক টাকরো ন্যাশানালের আসর বসেছিল 1989 সালে । তারপর 31 বছরে কলকাতায় আর এই খেলার জাতীয় পর্যায়ের আসর বসেনি । কর্তাদের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে 2002 সাল থেকে মুখ থুবড়ে পড়ে সেপাক টাকরো । ময়দানে আর সেভাবে খেলাও হয় না ৷ ঠিক এমন পরিস্থিতি থেকে সেপাক টাকরো রাজ্য সংস্থার নতুন সভাপতি ড. পার্থসারথি গঙ্গোপাধ্যায় এই খেলাকে ফেরাতে মরিয়া ।
আরও পড়ুন : ফাইট রিতিকা ফাইট
পার্থসারথি গঙ্গোপাধ্যায় আইএফএ-র সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন । সম্প্রতি ডালহৌসি ক্লাব নির্বাচনে সহ-সভাপতির পদে লড়াই করে সব থেকে বেশি ভোট পেয়ে জিতেছেন । তাঁর কথায়, "আমরা সবাই সেপাক টাকরোকে ফিরিয়ে আনতে চাই । এখনও সময় আছে । সবাই মিলে চেষ্টা করলে খেলাটা ফিরে আসবে । আজ আমরা সব সদস্যরা মিলে মিটিং করেছি । মার্চ মাসেই টুর্নামেন্ট আয়োজন করছি ।" সংস্থার সচিব বিমলকান্তি পাল জানান, "একটা সময় আমাদের রাজ্য থেকে প্রচুর খেলোয়াড় দেশের হয়ে খেলেছেন । স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, রাজ্যে সেপাক টাকরো অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে । পার্থবাবু আমাদের সভাপতি হয়েছেন । আশা করছি এবার ভাল কিছু হবে ।" ফেডারেশনের অনুমোদন পেলেও বিওএ-র অনুমোদন পায়নি রাজ্যের সেপাক টাকরো । হয়তো সেই কারণেই সরকারের 5 লাখ টাকা পাননি বলে জানান বিমলকান্তি পাল । কিন্তু সেইসব বিতর্ক ভুলে সেপাক টাকরোকে স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনাটাই এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য ।
আরও পড়ুন : ভারতের 'উসেইন বোল্ট' হতে চায় সোদপুরের রোহন
নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা ছেলেরা সেপাক টাকরোয় আসছে । ময়দানে সেভাবে এতদিন খেলাটি নজরে পড়েনি । তাই প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই খেলাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশনের সচিব বিমল কান্তি পাল । মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপ করার পরিকল্পনা থাকলেও আসন্ন নির্বাচনের কারণে তা পিছিয়ে দিতে হয়েছে । তবে সব কিছু মিটলে দ্রুত আয়োজনের কথা বলছেন তিনি । প্রেসিডেন্ট পার্থসারথি গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নতুনভাবে খেলাটিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে ।
অতীতে বাংলা থেকে নিয়মিত খেলোয়াড়রা ভারতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করত । এখন সেই সংখ্যাটা 1-এ এসে ঠেকেছে । বিমল কান্তি পাল বলছেন, সংখ্যাটা বাড়ানোই তাদের পাখির চোখ । ময়দানে পার্সি ক্লাবের পাশের মাঠে খুব তাড়াতাড়ি অনুশীলন শুরু হবে । নিয়মিত বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট এবং স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপ করা হবে । হারিয়ে যাওয়া খেলাকে মূল স্রোতে ফেরানোই লক্ষ্য ।