ETV Bharat / sports

কোরোনার জের, মিস্টার অলিম্পিয়ার স্বপ্নে ধাক্কা মিস্টার ইন্ডিয়া সুমিতের

লকডাউনের ফলে খেলার দুনিয়ায় এখন তালা। জিমনাসিয়াম খোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় এখন সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় বেজায় মুশকিলে । এখন চলতি মাসের পাঁচ তারিখ থেকে জিমের দরজা খোলার নির্দেশ আসলেও তার জন্য কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে তা নিয়ে কিছুই বলা হয়নি । ফলে দোটানায় সুমিত ৷

সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
author img

By

Published : Aug 2, 2020, 10:41 PM IST

Updated : Aug 3, 2020, 7:50 AM IST

কলকাতা, 2 অগাস্ট : গুণময় বাগচীর সতেরো ইঞ্চি বাইসেপ দেখে যাদের চোখ কপালে উঠেছিল তারা সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে আশ্বস্ত হতে পারেন । হাতিবাগান অঞ্চলের বছর ছত্রিশের সুমিতের উচ্চতা ছয় ফুট । এক সময়ের সংবাদমাধ্যমের কর্মী এখন মিস্টার ইন্ডিয়া । গুণময় বাগচি ওরফে মলয় রায়ের সতেরো ইঞ্চি বাইসেপের মাপ টপকে সুমিতের বাইসেপ আঠারো ।

লকডাউনের ফলে খেলার দুনিয়ায় এখন তালা। জিমনাসিয়াম খোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় এখন সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় বেজায় মুশকিলে । এখন চলতি মাসের পাঁচ তারিখ থেকে জিমের দরজা খোলার নির্দেশ আসলেও তার জন্য কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে তা নিয়ে কিছুই বলা হয়নি । ফলে জিমের দরজা খোলার অনুমতি পাওয়ার আনন্দ খোলা মনে নিতে পারছেন না সুমিত ।

সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
মিস্টার ইন্ডিয়ার মঞ্চে

মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে লকডাউন শুরু হয়েছিল । কোরোনা ভাইরাসের প্রকোপ এড়াতে এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকরী তা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন সুমিত । তাঁর মাথায় শুধু প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপ । কোচ হ্যারি সান্ধুর ছাত্র গত পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন বডি বিল্ডিংয়ে দেশকে সাফল্য এনে দেওয়ার লক্ষ্যে । "আমি এবং স্যার বিদেশে একটি প্রতিযোগিতায় নামার পরিকল্পনা করেছিলাম । প্রস্তুতি চলছিল । সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা ছিল । তাছাড়া অক্টোবরে মিস্টার অলিম্পিয়া হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু অবস্থাটা এমনই যে আমাদের মতো অ্যাথলিটদের মন ভেঙে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট, ’’বৃষ্টি ভেজা সকালে নিস্তব্ধ জিমে বসে মনখারাপের কথা বলছিলেন সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় ।

সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
মিস্টার ইন্ডিয়া সুমিত

2011সালে শরীর গড়ার নেশায় মেতে ছিলেন সুমিত । সেই সময় একটি সংবাদমাধ্যমে কাজ করতেন । নিজেকে ফিট রাখাই ছিল জিম করার প্রাথমিক উদ্দেশ্য । এভাবেই শরীরচর্চা করতে করতে শরীরকে "ওয়ার্ক অফ আর্টে" বদলে ফেলার নেশা পেয়ে বসেছিল । ‘‘2012 সালে আমি প্রথম প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম । সেই সময় প্রতিযোগিতায় সফল হওয়ার কৌশল জানা ছিল না । কিছুটা আনকোরা ভাবেই অংশ নিয়েছিলাম । তবে রেজাল্ট খারাপ হয়নি । আর সেই সাফল্য আমাকে আরও বেশি করে শরীরচর্চার দিকে ঠেলে দেয়," বলছিলেন সুমিত ।

মিস্টার অলিম্পিয়াডের স্বপ্নে ধাক্কা মিস্টার ইন্ডিয়া সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের

75 কেজি বিভাগে চারবার মিস্টার বেঙ্গল এবং একবার কলকাতা শ্রী হয়েছেন । 2015 সাল থেকে মেনস ফিজিক এবং ফিটনেস ক্যাটাগরিতে অংশ নিতে শুরু করেন । পূর্বাঞ্চলে সুমিতের আগে বডি বিল্ডিং-এর এই বিভাগ সম্বন্ধে বেশিরভাগেরই কোনও ধারণা ছিল না । 2017 সালে এই মেনস ফিজিক এবং ফিটনেস ক্যাটাগরির ওভার অল বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মিস্টার ইন্ডিয়া শিরোপা অর্জন করেন সুমিত । 2018 সালে জার্মানির ফ্র্যাঙ্কফুট শহরে ডেনিস জেমস ক্লাসিকে অংশ নিয়ে ষষ্ঠ হয়েছিলেন । কোরিয়াতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন সুমিত ৷ বডি বিল্ডিংয়ের নিয়মিত সাফল্য এ বছর হাতিবাগানের ছেলেকে মিস্টার অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার ছাড়পত্র এনে দিয়েছে । যা বাংলা থেকে সুমিত ছাড়া কোনও বডি বিল্ডার অর্জন করতে পারেননি ।

সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
মায়ের সঙ্গে সুমিত

মন্দিরসম শরীরকে রক্ষা করতে জিমে কসরত যেমন জরুরি তেমনই খাদ্যাভ্যাস সঠিক রাখা প্রয়োজন । কেমন খাদ্যাভ্যাস মিস্টার ইন্ডিয়ার? দিনে দশটি ডিমের সাদা অংশ, এক কেজি মুরগির মাংস, চারশো গ্রাম চালের ভাত, সমপরিমাণ সবজি এবং কেজি খানেক দই শরীর রাখতে খেয়ে থাকেন সুমিত ।

সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
ঘরেরে রান্নাশালায় সুমিত

প্রত্যহ ঘণ্টা দুয়েক কসরত করেন সুমিত । অনুশীলনের সময় হিসেবে দুপুর কিংবা বেশি রাত পছন্দ । নির্জনে শরীরচর্চা মনোযোগ সহকারে করা যায়, জানালেন তিনি । মিস্টার ইউনিভার্স এবং হলিউডের তারকা আর্নল্ড সোয়াৎজেনেগারকে আদর্শ করে এগিয়ে চলতে চায় সে ।

2003 সালে ছোটখাটো হার্ট অ্যাটাক হয়ে গিয়েছে । তারপর থেকে রক্তচাপের অসম্ভব ওঠা নামার অসুখে ভুগছে সে । চিকিৎসকরা তাকে শরীরচর্চা করতেই বারণ করেছিলেন । বডি বিল্ডিং তো দূরের ব্যাপার । সাংসারিক সুমিত সেই সমস্যাকে "বাপি বাড়ি যা" করে মিস্টার অলিম্পিয়াড হতে চায় । সেই লক্ষ্যেই প্রস্তুতি চলছে । "আমাদের বডি বিল্ডাররা এই একটি দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকি । পৃথিবীর গোটা পঁচিশ দেশের বডি বিল্ডাররা অংশ নিয়ে থাকেন । কিন্তু, অবস্থা এমন যে সব পরিকল্পনা শেষ হল কোরোনার কারণে, "বলছিলেন চারবারের মিস্টার বেঙ্গল ।

এই সময় শরীর রক্ষা যেমন কঠিন তেমনই মনের জোর ধরে রাখাও চ্যালেঞ্জিং । ‘‘মানসিক জোর চিরকাল বেশি । অল্পতেই ভেঙে পড়ি না । লকডাউনের আবহে বাবার ভয়ঙ্কর অসুস্থতা সত্ত্বেও তাকে সুস্থ করে নিয়ে এসেছি । এবার নিজের বডি বিল্ডিং কেরিয়ারের লড়াই । বিশ্বাস আছে সফল হব, "আত্মবিশ্বাসী শোনায় সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলা ।

কলকাতা, 2 অগাস্ট : গুণময় বাগচীর সতেরো ইঞ্চি বাইসেপ দেখে যাদের চোখ কপালে উঠেছিল তারা সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে আশ্বস্ত হতে পারেন । হাতিবাগান অঞ্চলের বছর ছত্রিশের সুমিতের উচ্চতা ছয় ফুট । এক সময়ের সংবাদমাধ্যমের কর্মী এখন মিস্টার ইন্ডিয়া । গুণময় বাগচি ওরফে মলয় রায়ের সতেরো ইঞ্চি বাইসেপের মাপ টপকে সুমিতের বাইসেপ আঠারো ।

লকডাউনের ফলে খেলার দুনিয়ায় এখন তালা। জিমনাসিয়াম খোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় এখন সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় বেজায় মুশকিলে । এখন চলতি মাসের পাঁচ তারিখ থেকে জিমের দরজা খোলার নির্দেশ আসলেও তার জন্য কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে তা নিয়ে কিছুই বলা হয়নি । ফলে জিমের দরজা খোলার অনুমতি পাওয়ার আনন্দ খোলা মনে নিতে পারছেন না সুমিত ।

সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
মিস্টার ইন্ডিয়ার মঞ্চে

মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে লকডাউন শুরু হয়েছিল । কোরোনা ভাইরাসের প্রকোপ এড়াতে এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকরী তা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন সুমিত । তাঁর মাথায় শুধু প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপ । কোচ হ্যারি সান্ধুর ছাত্র গত পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন বডি বিল্ডিংয়ে দেশকে সাফল্য এনে দেওয়ার লক্ষ্যে । "আমি এবং স্যার বিদেশে একটি প্রতিযোগিতায় নামার পরিকল্পনা করেছিলাম । প্রস্তুতি চলছিল । সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা ছিল । তাছাড়া অক্টোবরে মিস্টার অলিম্পিয়া হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু অবস্থাটা এমনই যে আমাদের মতো অ্যাথলিটদের মন ভেঙে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট, ’’বৃষ্টি ভেজা সকালে নিস্তব্ধ জিমে বসে মনখারাপের কথা বলছিলেন সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় ।

সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
মিস্টার ইন্ডিয়া সুমিত

2011সালে শরীর গড়ার নেশায় মেতে ছিলেন সুমিত । সেই সময় একটি সংবাদমাধ্যমে কাজ করতেন । নিজেকে ফিট রাখাই ছিল জিম করার প্রাথমিক উদ্দেশ্য । এভাবেই শরীরচর্চা করতে করতে শরীরকে "ওয়ার্ক অফ আর্টে" বদলে ফেলার নেশা পেয়ে বসেছিল । ‘‘2012 সালে আমি প্রথম প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম । সেই সময় প্রতিযোগিতায় সফল হওয়ার কৌশল জানা ছিল না । কিছুটা আনকোরা ভাবেই অংশ নিয়েছিলাম । তবে রেজাল্ট খারাপ হয়নি । আর সেই সাফল্য আমাকে আরও বেশি করে শরীরচর্চার দিকে ঠেলে দেয়," বলছিলেন সুমিত ।

মিস্টার অলিম্পিয়াডের স্বপ্নে ধাক্কা মিস্টার ইন্ডিয়া সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের

75 কেজি বিভাগে চারবার মিস্টার বেঙ্গল এবং একবার কলকাতা শ্রী হয়েছেন । 2015 সাল থেকে মেনস ফিজিক এবং ফিটনেস ক্যাটাগরিতে অংশ নিতে শুরু করেন । পূর্বাঞ্চলে সুমিতের আগে বডি বিল্ডিং-এর এই বিভাগ সম্বন্ধে বেশিরভাগেরই কোনও ধারণা ছিল না । 2017 সালে এই মেনস ফিজিক এবং ফিটনেস ক্যাটাগরির ওভার অল বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মিস্টার ইন্ডিয়া শিরোপা অর্জন করেন সুমিত । 2018 সালে জার্মানির ফ্র্যাঙ্কফুট শহরে ডেনিস জেমস ক্লাসিকে অংশ নিয়ে ষষ্ঠ হয়েছিলেন । কোরিয়াতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন সুমিত ৷ বডি বিল্ডিংয়ের নিয়মিত সাফল্য এ বছর হাতিবাগানের ছেলেকে মিস্টার অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার ছাড়পত্র এনে দিয়েছে । যা বাংলা থেকে সুমিত ছাড়া কোনও বডি বিল্ডার অর্জন করতে পারেননি ।

সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
মায়ের সঙ্গে সুমিত

মন্দিরসম শরীরকে রক্ষা করতে জিমে কসরত যেমন জরুরি তেমনই খাদ্যাভ্যাস সঠিক রাখা প্রয়োজন । কেমন খাদ্যাভ্যাস মিস্টার ইন্ডিয়ার? দিনে দশটি ডিমের সাদা অংশ, এক কেজি মুরগির মাংস, চারশো গ্রাম চালের ভাত, সমপরিমাণ সবজি এবং কেজি খানেক দই শরীর রাখতে খেয়ে থাকেন সুমিত ।

সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
ঘরেরে রান্নাশালায় সুমিত

প্রত্যহ ঘণ্টা দুয়েক কসরত করেন সুমিত । অনুশীলনের সময় হিসেবে দুপুর কিংবা বেশি রাত পছন্দ । নির্জনে শরীরচর্চা মনোযোগ সহকারে করা যায়, জানালেন তিনি । মিস্টার ইউনিভার্স এবং হলিউডের তারকা আর্নল্ড সোয়াৎজেনেগারকে আদর্শ করে এগিয়ে চলতে চায় সে ।

2003 সালে ছোটখাটো হার্ট অ্যাটাক হয়ে গিয়েছে । তারপর থেকে রক্তচাপের অসম্ভব ওঠা নামার অসুখে ভুগছে সে । চিকিৎসকরা তাকে শরীরচর্চা করতেই বারণ করেছিলেন । বডি বিল্ডিং তো দূরের ব্যাপার । সাংসারিক সুমিত সেই সমস্যাকে "বাপি বাড়ি যা" করে মিস্টার অলিম্পিয়াড হতে চায় । সেই লক্ষ্যেই প্রস্তুতি চলছে । "আমাদের বডি বিল্ডাররা এই একটি দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকি । পৃথিবীর গোটা পঁচিশ দেশের বডি বিল্ডাররা অংশ নিয়ে থাকেন । কিন্তু, অবস্থা এমন যে সব পরিকল্পনা শেষ হল কোরোনার কারণে, "বলছিলেন চারবারের মিস্টার বেঙ্গল ।

এই সময় শরীর রক্ষা যেমন কঠিন তেমনই মনের জোর ধরে রাখাও চ্যালেঞ্জিং । ‘‘মানসিক জোর চিরকাল বেশি । অল্পতেই ভেঙে পড়ি না । লকডাউনের আবহে বাবার ভয়ঙ্কর অসুস্থতা সত্ত্বেও তাকে সুস্থ করে নিয়ে এসেছি । এবার নিজের বডি বিল্ডিং কেরিয়ারের লড়াই । বিশ্বাস আছে সফল হব, "আত্মবিশ্বাসী শোনায় সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলা ।

Last Updated : Aug 3, 2020, 7:50 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.