কলকাতা, 30 ডিসেম্বর: চিরঘুমে পাড়ি দিয়েছেন ফুটবল সম্রাট। শোকস্তব্ধ গোটা বিশ্ব । আর এই আবহে তাঁর জীবন দর্শন থেকে কসমসের বিরুদ্ধে স্কোরশিটে প্রায় নাম তুলে ফেলা-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে (Interview of Former Footballer Md Akbar about Pele) নস্টালজিয়ার ঝুলি উপুড় করলেন কলকাতা ময়দানের ছোটে মিয়াঁ, 'বাদশা' আকবর । পেলের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন বাংলার ফুটবলের আরেক আইকন চুনি গোস্বামীও ।
কলকাতা লিগের ইতিহাসে দ্রুততম গোল (45 বছর যেই রেকর্ড অটুট) কিংবা একাধিক ম্যাচে খাদের কিনারা থেকে তিন প্রধানকে তুলে আনা আকবরের ফুটবল কেরিয়ারে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত কসমসের বিপক্ষে মাঠে নামা । কার্লোস আলবোর্তো, ফ্র্যাঙ্ক বেকেনবাওয়ার, জুয়ান কান্তিলিয়া, জর্জিয়ো চিনাগলিয়া এবং সর্বোপরি পেলে । 1977-এর কসমসে তখন আক্ষরিক অর্থেই চাঁদের হাট ।
আগের বছরই মোহনবাগানে এসেছেন দুই ভাই, হাবিব-আকবর । বড়ে মিয়াঁ-ছোটে মিয়াঁ জাদুতে মুগ্ধ আপামর কলকাতা ৷ তাঁদের দাপটেই দীর্ঘদিন পর কলকাতা লিগ জিতেছে মোহনবাগান । ফলে গঙ্গাপাড়ের তাঁবুতে সেবছর উৎসবের আমেজ । অগাস্ট মাস, কলকাতাজুড়ে বৃষ্টির দাপট চলছে । তার মধ্য়েই তৎকালীন সচিব ধীরেন দে জানান, কসমসকে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে । সবকিছু ঠিক থাকলে আর একমাসের মধ্যে পেলের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে । স্মৃতিচারণা করতে করতে ছোটে মিয়াঁ ফিরে গিয়েছেন সাড়ে চার দশক আগে । আকবর বলেন, "অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ । 24 সেপ্টেম্বর ওই ম্যাচের কয়েকদিন আগে পেলে-সহ কসমস দল কলকাতায় এসে গিয়েছে । ওদের রাখা হয়েছে গ্র্যান্ডে । আর অন্যদিকে আমরা জোরকদমে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি । হোক না প্রস্তুতি ম্যাচ, বিশ্বসেরাদের বিরুদ্ধে তো নিজেদের সেরাটাই দিতে হবে । কিন্তু তাতে বাধ সাধল বৃষ্টি । ম্যাচে তিনদিন আগে থেকে লাগাতার বৃষ্টিতে ইডেন গার্ডেন্সে তখন এক হাঁটু কাদা । মাঠের অবস্থা দেখে বেঁকে বসলেন কসমসের অফিসিয়ালরা । সাফ জানিয়ে দিলেন, খেলোয়াড়দের পায়ের ইনস্যুরেন্স করা রয়েছে । এই মাঠে কিছুতেই ওদের নামতে দেওয়া যাবে না । আমাদের তো তখন হাতে চাঁদ পেয়েও হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা ।" পঁয়তাল্লিশ বছর পরেও রীতিমতো গলা কাঁপছে ময়দানি বাদশার ।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেলে তো খেলেছিলেন, ইতিহাসও গড়েছিল গঙ্গাপাড়ের ক্লাব । আকবর বলেন, "সমস্ত কৃতিত্বটাই ধীরেন দে'র । শুনেছি গ্র্যান্ডে গিয়ে ওদের কর্ম-কর্তাদের রীতিমতো হাতে-পায়ে ধরেছিলেন উনি । ওনার অনুরোধেই শেষ পর্যন্ত মাঠে নামেন পেলে ।" কিন্তু কসমসকে রুখে দেওয়া । এর রহস্য কী ? "আমরা সত্যিই প্রথমে ভেবেছিলাম ভাল খেললেও পাঁচ গোল খাব । তাই পেলের বিরুদ্ধে খেলাটা উপভোগ করা যাক । কিন্তু মাঠে নেমেই সব ভুলে গেলাম । পেলে, কসমস, প্রদর্শনী ম্যাচ সব কিছুই । আমাদের বলা হয়েছিল ওদের কাউকে জোরে ট্যাকল করা যাবে না । আর দাদা (পড়ুন হাবিব) নেমেই পেলেকে 'টাফ' ট্যাকল করে বসল ।" ফুটবল সম্রাট কটমট করে তাকাতেই বড়ে মিয়াঁর সেই বিখ্যাত সংলাপ, 'ইউ পেলে, আই হাবিব' ।
আরও পড়ুন: হাসপাতালে তুলসীদাস বলরাম, দেখা করলেন ক্রীড়ামন্ত্রী