কলকাতা, 20 জুন : অ্যাথলেটিক্সের বড় আসর অলিম্পিককে আমরা গুরুত্ব দিলেও, আলাদাভাবে অ্যাথলেটিক্সকে ভারতে কার্যত আমল না দেওয়ার অভিযোগ বরাবরই উঠেছে ৷ অথচ অ্যাথলেটিক্স থেকে সাঁতার, কুস্তি, বক্সিং, টেবিল টেনিস, তিরন্দাজি, ব্যাডমিন্টন গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থের আসরে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করছে । বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল শুরু হয়েছে । ইউরো এবং কোপা আমেরিকার মধ্যে দিয়ে ফুটবল জমে উঠেছে । আমরা রাত জাগছি, পাড়া সাজাচ্ছি, পরিসংখ্যানে চোখ বোলাচ্ছি । কিন্তু আমাদের রাজ্যের বক্সিং, সাঁতার, টেবিল টেনিস, কুস্তির অবস্থা এই করোনা আবহে ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে তা আমরা জানি না । 16 জুন দর্শকশূন্য গ্যালারিতে খেলাধুলো আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার । এই নির্দেশ পাওয়ার পরে রাজ্য ফুটবল নিয়ামক সংস্থা আইএফএ ময়দানে কলকাতা লিগ এবং শিল্ড শুরু করার পরিকল্পনা সাজাচ্ছে । অন্যান্য খেলা একইভাবে চিন্তা করলেও গণপরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় কীভাবে শুরু করা সম্ভব হবে ? তা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে । অ্যাথলেটিক্স, কুস্তি, বক্সিং, টেবিল টেনিস, সাঁতার এর পরিকল্পনার হালহকিকত জেনে নেওয়া যাক ।
বেঙ্গল স্টেট টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক শর্মি সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘দেখুন আমরা আনলক পর্বে, অর্থাৎ, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলাম । সেখানে কোভিডের বিধিনিষেধ মেনেই সবকিছু হচ্ছিল । পরবর্তী সময়ে বিধিনিষেধ এবং নির্দেশর কারণে কিছু প্রতিযোগিতা মাঝপথে থামাতে হয়েছে । এবার সেগুলো শেষ করে নতুন করে চালু করার কথা ভাবছি আমরা । একটি প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলা বাকি রয়েছে । মে মাস থেকে আমাদের খেলা বন্ধ । এবার আবার দ্রুত শুরু করার চেষ্টা করব । খেলোয়াড়দের টিকা দিয়ে বোর্ডে নামানোর চেষ্টা করব । বিশেষ করে যাঁরা আঠারো বছর বয়স পার করেছেন । আশা করছি দ্রুত সবকিছু শেষ করতে পারব । তার পর নতুন মরসুমের পরিকল্পনা সাজাতে হবে । প্রতিযোগিতা শুরু করতে হবে । এই দেড় বছরে খেলোয়াড়দের খুব ক্ষতি হল । বিশেষ করে যাঁরা বয়সভিত্তিক পর্যায়ে রয়েছেন । তবে এটা এমন একটা পরিস্থিতি, যার নিয়ন্ত্রণ কারও হাতে নেই ৷’’
রাজ্য সাঁতার সংস্থায় জল যন্ত্রণা । বিশেষ করে প্রশাসনিক পর্যায়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রবল । তা সত্ত্বেও রাজ্য সাঁতার সংস্থার সচিব স্বপন আদক বলছেন, ‘‘রাজ্য সরকার অনুমতি দিলেই শুরু করা যাবে না । সাঁতারের তো স্টেডিয়াম নেই । পুলগুলোকে প্রতিবছর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় । কলেজ স্কোয়ারে একটি মাত্র ক্লাবের ইনডোর পুল রয়েছে । তাও সেটা বাচ্চাদের জন্য । এই পরিস্থিতিতে কলকাতা পৌরনিগমের অনুমতি জরুরি । যা মিলছে না । তবে শুধু অনুমতি নয়, আরও সমস্যা রয়েছে । বর্ষা এসে যাওয়ার পুলগুলির সংস্কার করা যায়নি । অনেক ক্লাব সংস্কারের কাজ শুরু করেও পরিস্থিতির কারণে শেষ করতে পারেনি । জলের পরিশোধন দরকার । তার ওপর গণপরিবহণ নেই । কোচ, সাঁতারুদের যাওয়া আসার সমস্যা রয়েছে । ফলে এই বছরও কোনও প্রতিযোগিতা হয়তো করা যাবে না ৷’’
আরও পড়ুন : করোনা ও যশ বিধ্বস্তদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়াল বাংলার ক্রীড়া মহল
রাজ্য অ্যাথলেটিক্স সংস্থার সচিব কমল মৈত্র আরও বলেন, ‘‘আমরা তো খেলা সবসময়ই শুরু করতে চাই । এই সময়ে অন্যান্য বার আমাদের রাজ্য মিট হয় । গত বছর করোনার কারণে হয়নি । এবছরও করা যাবে কি না জানি না । নভেম্বর বা ডিসেম্বরে একটা চেষ্টা করব ৷ কিংবা নতুন বছরের জানুয়ারিতে । কিন্তু ফাঁকা স্টেডিয়ামে খেলা শুরুর কথা বললে তো হবে না । অ্যাথলিটরা আসবেন কীভাবে ? বিভিন্ন জেলা থেকে বাস ভাড়া করে বা গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছনোর যা খরচ, তা আমাদের মত গরিব সংস্থার পক্ষে বহন করা অসম্ভব । তাই এখনই প্রতিযোগিতা শুরু করার কথা বলতে পারছি না । সবকিছু ঠিক হলে আমরা চালু করে দেব ৷’’ তাই সর্বভারতীয় মিটে বাংলার দল নির্বাচন কিভাবে হবে বা অ্যাথলিটদের প্রস্তুতি নিয়ে যাবতীয় উত্তর বিশ বাঁও জলে ।
আরও পড়ুন : প্রতিভাবান শুটারের ক্যানসার চিকিৎসায় অর্থ সাহায্যের আবেদন মায়ের
রাজ্য বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অসিত সাহা জাতীয় বক্সিং সংস্থার কার্যকরী কমিটিতে রয়েছেন । কীভাবে এই অবস্থায় বক্সিং শুরু হবে তা তিনিও জানেন না । বক্সাররা শ্যাডো প্র্যাকটিস করে চলেছেন । তিনি মানছেন দিনের পর দিন এইভাবে অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় । তিনি বলেন, ‘‘বক্সিং এর সময় প্রতিদ্বন্দ্বীরা সবচেয়ে কাছাকাছি আসেন । করোনা পরিস্থিতি ঠিক হয়ে গিয়েছে এখনই বলা যাবে না । তাই ঝুঁকি নিতে পারছি না । এই বছর কোনও টুর্নামেন্ট আয়োজন করা সম্ভব হবে না । পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছি । উন্নতি হলে শুরু করব ৷’’
আরও পড়ুন :ভ্যাকসিনেটেড অ্যাথলিটদের তালিকা চেয়ে পাঠাল ভারতীয় অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন
বাংলার কুস্তি এখন টিমটিমে প্রদীপ । গোবর গোহর কথা এখন গল্প কথায় । কলকাতা শহরে ছ’টি আখড়া রয়েছে । বড়বাজারে কুস্তির লড়াই দেখতে মানুষ ভিড় করেন । জোড়াবাগানের পঞ্চান্ন ব্যায়াম সমিতির আখড়ায় 1948 সালের লন্ডন অলিম্পিক্স-এর আগে কুস্তিগীর কে ডি যাদব প্রস্তুতি সেরেছিলেন । অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী এই ক্লাবে অনুশীলন করে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন । এখন সে সবই গৌরবময় অতীত । রাজ্য কুস্তি সংস্থার সচিব অসিত সাহা জানিয়েছেন, ‘‘কুস্তির ক্ষেত্রে দূরত্ববিধি মানা সম্ভব নয় । তবে, আরও কিছু দিন অপেক্ষা করলে বাংলার কুস্তি শেষ হয়ে যাবে । আমরা রাজ্যস্তর বা জাতীয় পর্যায়ের কুস্তিগীরদের টিকাকরণ করিয়েছি । বাকি যাঁরা আছেন তাঁদেরও টিকাকরণ করিয়ে ফেলা হবে । সবকিছু ঠিক থাকলে আমরা আগামী সপ্তাহ থেকে কুস্তি শুরু করে দেব ৷’’ ফলে সরকারের অনুমতি মিললেও এ রাজ্যে অলিম্পিক্স স্পোর্টস নানা সমস্যায় বিদ্ধ ।