কলকাতা, 4 সেপ্টেম্বর: কথামতো তিলোত্তমায় পা দিলেন গ্র্যান্ডমাস্টার রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ ৷ যিনি ভারতীয় খেলাধুলোর জগতে নতুন পোস্টার বয়। আঠারোর এই কিশোরের নৈপুণ্যের সামনে থমকে দাঁড়াতে হয় ম্যাগনাস কার্লসেনর মতো কিংবদন্তিকে। সম্প্রতি আজারবাইজানের বাকুতে আয়োজিত ফিডে বিশ্বকাপে সোনা জিততে না-পারলেও ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন দক্ষিণী দাবাড়ু। কলকাতায় টাটা আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন এই কিশোর। সোমবার সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে এসেই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন প্রজ্ঞানন্দ। উঠে এল তার আপাত দাবাড়ু জীবনের অনেক অজানা কথা। সেখানে তাঁর পছন্দের বিষয়গুলিও জানালেন ৷ আর কী কী বললেন তিনি?
প্রজ্ঞানন্দ বললেন, "এখন আমি যেখানে রয়েছি সেখান থেকেও উপরে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে আমার। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষমতা আমার মধ্যে রয়েছে,"
বৃষ্টিস্নাত সোমবারের সকালে তাঁর মুখে এই কথাগুলো শুধুই শব্দগুচ্ছ নয়, যেন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর কিশোরের লক্ষ্যপূরণের অঙ্গীকার।
চলতি টাটা আর্ন্তজাতিক দাবা প্রতিযোগিতা:
- প্রজ্ঞানন্দ- "এই প্রতিযোগিতা নিয়ে আমি বেশি ভাবছি না। আমাদের দল খুবই শক্তিশালী। আমি আপাতত রিল্যাক্স করছি।"
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে ভাবনা:
- প্রজ্ঞানন্দ- "আমার মধ্যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সবরকম দক্ষতা রয়েছে। আশা করি, কয়েক বছরের মধ্যেই এই প্রতিযোগিতা জিততে পারব ৷"
সমর্থকদের প্রত্যাশা এবং সেই চাপ কীভাবে সামলান?
- প্রজ্ঞানন্দ- "সমর্থকরা পছন্দ করেন বলেই আমার প্রতি তাঁদের প্রত্যাশা বেড়েছে। আমি যদিও এতে কোনও চাপ অনুভব করি না। প্রত্যেকটি মুহূর্ত উপভোগ করার চেষ্টা করি। প্রত্যেকটি ম্যাচেই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি।"
কিংবদন্তি কার্লসেনের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা-
- প্রজ্ঞানন্দ- "অনলাইন দাবা অথবা অফলাইন দাবা, দু'টোতেই কার্লসেন মারাত্মক শক্তিশালী। ওর সামনাসামনি বসে খেললে তবুও বোঝার চেষ্টা করা যায় যে ও কী চাল দিতে পারে। কার্লসেনের থেকে সব সময় শেখার চেষ্টা করি। শেষ 10 বছর দাবার দুনিয়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ও কী চাল দিচ্ছে, কী ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে খেলছে সব কিছু জানার চেষ্টা করি। ওকে একাধিক প্রশ্ন করি। তাতে একেবারেই বিরক্ত হয় না।"
টানা খেলার ক্লান্তি কতটা প্রভাব ফেলেছিল?
- প্রজ্ঞানন্দ- "এ বারের বিশ্বকাপে আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল ছিলাম। একেবারেই নিজের সেরা ছন্দে ছিলাম না। তাই অনেকটাই পিছিয়ে পড়ি। দাবায় দুর্বল হলে চলে না।"
তাঁকে বলা হচ্ছে বিশ্বনাথন আনন্দের উত্তরসূরী-
- প্রজ্ঞানন্দ- "ভিসি স্যরের অ্যাকাডেমিতে আমি বহুদিন ছিলাম। তাঁর থেকে অনেক কিছু শিখেছি। দাবাকেন্দ্রিক সব বিষয় নিয়েই আমাদের আলোচনা হয়। ম্যাচের আগের দিন আমার কী করা উচিত। কী ডায়েট প্রয়োজন। শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকতে গেলে কী করা উচিত, সে বিষয়ও কথা হয়। ওর খেলা দেখে এখনও অনুপ্রাণিত হই।"
দাবার বাইরে কোন খেলা ভালো লাগে?
- প্রজ্ঞানন্দ- "দাবার পাশাপাশি ক্রিকেট খুব পছন্দ করি। ভারতীয় দলের ম্যাচ খুব একটা মিস করি না। আমার প্রিয় ক্রিকেটার আর.অশ্বিন। ওর খেলা থাকলে দেখার চেষ্টা করি।"
সামনে এশিয়ান গেমস, কতটা তৈরি ভারতীয় দল?
- প্রজ্ঞানন্দ- "আমি, গুকেশ, অর্জুন, নিহাল রয়েছি দলে। ভারতীয় দল নিঃসন্দেহে শক্তিশালী। আমাদের প্রস্তুতি খুব ভালো হয়েছে। শিবির থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আশা করি, এই প্রস্তুতি আমরা কাজে লাগাতে পারব।"
কলকাতা শহর তাঁর কাছে কতটা আকর্ষণীয়?
- প্রজ্ঞানন্দ- "এই শহর আমাকে টানে। 2018 সালে এই শহরে এসেই বুঝেছি দাবা কতটা কঠিন হতে পারে। টাটা স্টিল দাবা প্রতিযোগিতা দেশের অন্যতম সেরা।"
ভারতের দাবার ভবিষ্যৎ এবং নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
- প্রজ্ঞানন্দ- "আমি আরও উন্নতি করতে চাই। উঠতি দাবাড়ুদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে চাই। আমাকে দেখে যেন বাকিরা দাবা খেলতে আসে।"
মায়ের ভূমিকা-
- প্রজ্ঞানন্দ- "আমি যেখানে যাই, আমার মা ইনডাকশান কুকার নিয়ে ঘোরেন। বিভিন্ন রান্না করে দেন। পছন্দের খাবার না-পেলে আমার কষ্ট হয়। আমার মুখ দেখেই মা বুঝে যান ভালো খেলছি না খারাপ খেলছি।"
মনসংযোগের জন্য বিশেষ কিছু করেন কী?
- প্রজ্ঞানন্দ- "নিয়মিত যোগাসন ও মেডিটেশন করি। কখনও ভিডিয়ো গেম খেলি না। ভিডিয়ো গেম খেললে অনেক সমস্যা হয়। রিল্যাক্স করার জন্য ভালো সিনেমা দেখি। ডায়েট নিয়ে আমি ভাবি না। ভারতীয় খাবার এনজয় করি।"
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের মুহূর্ত-
- প্রজ্ঞানন্দ- "কথা বলে খুবই ভালো লেগেছে। আমার ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে জানতেন চান। বাবা, মায়ের সঙ্গে কথা বলেন।"
আরও পড়ুন: চেন্নাইয়ে প্রজ্ঞানন্দকে রাজকীয় সংবর্ধনা, 30 লক্ষ টাকার পুরস্কার মুখ্যমন্ত্রীর