কলকাতা, 27 অগস্ট: অক্টোবর মাসে ভারতের মাটিতে মহিলাদের অনূর্ধ্ব-17 ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনে আর বাধা রইল না ৷ অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার (FIFA Lifts Ban on AIFF) করে নেওয়ার পর মহিলাদের অনূর্ধ্ব-17 ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের ক্ষেত্রে যে সংশয় দেখা দিয়েছিল, তা পুরোপুরি কেটে গেল (India to Host Under 17 Women World Cup) ৷ সুপ্রিম কোর্ট তাঁর নিযুক্ত করা কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার পরেই এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল দে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ৷
প্রসঙ্গত, গত 14 অগস্ট তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের কারণে, ভারতীয় ফুটবলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ফিফা ৷ যা 16 অগস্ট ঘোষণা করা হয় ৷ মূলত, এ বছর 18 মে সুপ্রিম কোর্ট এআইএফএফ-এর বোর্ড ভেঙে দিয়ে 3 সদস্যের প্রশাসক কমিটি বসিয়ে দেয় ৷ সেই সঙ্গেই অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সংবিধান সংস্কারের নির্দেশ দেয় ৷ এই পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে ফিফার আপত্তি ছিল ৷ কারণ, ফিফার সংবিধান অনুযায়ী, স্ব-শাসিত সংস্থা হিসাবে সদস্য দেশগুলির বোর্ডে তৃতীয় পক্ষ হস্তক্ষেপ করা যাবে না ৷
এর পরেই অক্টোবর মাসে ভারতে আয়োজিত অনূর্ধ্ব-17 মহিলা ফুটবল বিশ্বকাপ (Under 17 Women World Cup) আয়োজন নিয়েও সংশয় দেখা দেয় ৷ তবে, এদিন ফিফার তরফে এআইএফএফ এর অ্যাক্টিং জেনারেল সেক্রেটারি সুনন্দ ধরকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘25 অগস্ট ব্যুরো অফ কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই মুহূর্ত থেকে এআইএফএফ এর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হল ৷ আর পূর্ব পরিকল্পনা মতো, 11-30 অক্টোবর ভারতে অনূর্ধ্ব-17 মহিলা বিশ্বকাপ আয়োজিত হবে ৷’’
- কিন্তু, এই জটিল পরিস্থিতি কেন এল ভারতীয় ফুটবলে ?
এর শুরুটা হয়েছিল 2020 সালের নভেম্বর মাসে প্রফুল প্যাটেলের নেতৃত্বাধীন বোর্ডের সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও নির্বাচন না হওয়ায় ৷ তার পরেই নির্বাচন না হওয়ায় প্রফুল প্যাটেল এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন বোর্ডের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয় ৷ যা নিয়ে আদালত 12 মে প্রফুল প্যাটেলের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে সভাপতি পদে বসে থাকার অভিযোগে পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তাঁকে সরিয়ে দিয়ে বোর্ড ভেঙে দেয় সুপ্রিম কোর্ট ৷ এর পর 18 মে এআইএফএফ পরিচালনার ভার প্রশাসক কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয় ৷ যা স্বভাবতই ফিফা মেনে নেয়নি ৷
তবে, ফিফা সেই সময় তৎক্ষণাত নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটেনি ৷ দ্রুত নির্বাচন করে নতুন বোর্ড গঠনের জন্য প্রশাসক কমিটিকে সাহায্য করা হয় ৷ তার জন্য ফিফা একটি প্রতিনিধি দল ভারতে পাঠায় ৷ যে প্রতিনিধি দল এআইএফএফ এর সব সদস্য রাজ্য সংস্থাগুলির সঙ্গে 21-23 জুন বৈঠক করে ৷ এর পর প্রশাসক কমিটিকে 31 জুলাইয়ের মধ্যে সংবিধান চূড়ান্ত করতে সময় দেয় এবং অগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তা কার্যকর করতে নির্দেশ দেয় ৷ তার পর নির্বাচন করে 15 সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন বোর্ড গঠন করতে বলা হয় ৷ কিন্তু, প্রশাসক কমিটি 31 জুলাইয়ের সময়সীমার মধ্যে সংবিধান সংস্কার করতে ব্যর্থ হয় ৷
আরও পড়ুন: গলায় লাল সিং চাড্ডা স্তুতি, সেনকোর নয়া কমার্শিয়ালে আলিবাবার অবতারে সৌরভ
অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্ট 3 অগস্ট সংবিধান সংস্কার না করেই নির্বাচনের নির্দেশ দেয় ৷ এমনকি 36 জন প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলারকে ভোটাধিকার দেয় ৷ যা সম্পূর্ণভাবে ফিফার নিয়ম বহির্ভূত ৷ এর পরেই বেঁকে বসে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ৷ 5 অগস্ট অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনকে শেষবারের মধ্যে সতর্ক করে কয়েকটি প্রশ্নের জবাব চাওয়া হয় ৷ যার জবাব দিতে ব্যর্থ হয় এআইএফএফ ৷ মূলত ফিফার রোষের প্রধান কারণ ছিল, তাদের নিয়মের বাইরে গিয়ে 36 জন প্রাক্তন ফুটবলারকে ভোটাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্তে ৷ আর তার জেরে 16 অগস্ট এআইএফএফ-এর উপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে ফিফা ৷
আরও পড়ুন: আড়াই বছর পর ডার্বি শহরে, কড়া নিরাপত্তা বলয়ে যুবভারতী
এর পরেই ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায় ৷ তবে, এখানেই আসরে নামে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক ৷ আদালতের সঙ্গে সহযোগিতার পাশাপাশি, ফিফার সঙ্গেও সমানভাবে সমন্বয় স্থাপন করে কেন্দ্র সরকার ৷ এর পর গত 18 অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট তার শুনানিতে ক্রীড়ামন্ত্রকের ভূমিকার প্রশংসাও করে ৷ সব শেষে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসক কমিটির ক্ষমতা কেড়ে নির্বাচন ঘোষণা করতেই, ফিফার তরফেও ভারতীয় ফুটবলের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে ৷