কলকাতা, 22 জুলাই: শ্রাবণ মাসের শনিবারের বিকেলের কলকাতা ময়দান যেন জবাব দেওয়ার মঞ্চ। কলকাতা লিগে মুখোমুখি হয়েছিল মহমেডান স্পোর্টিং এবং ডায়মন্ড হারবার। সাধারণভাবে দেখলে ম্যাচটি ময়দানের এক প্রধানের বিরুদ্ধে নবাগত একটি দলের ম্যাচ। কিন্তু তলিয়ে দেখলে ম্যাচটি অঘটনের ম্যাচ। ম্যাচটি উপেক্ষিত নায়কদের জবাব দেওয়ার ম্যাচ। ম্যাচের ফল ডায়মন্ড হারবারের পক্ষে 2-1। জয়ী দলের পক্ষে জোড়া গোল রাহুল পাসোয়ানের। মহমেডানের হয়ে গোল বেনস্টোন ব্যারেটোর।
সাদা-কালোকে হারানো দলটি যে তৃণমূলের 'যুবরাজ' অর্থাৎ, ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি, সে কথা অজানা নয় ৷ শনিবারের ম্যাচের আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন দলকে। শেষ পর্যন্ত জিতে মাঠ ছাড়তে পারায় দলও খুশি। ম্যাচের শেষে তাঁকে জয় পাওয়ার খবর জানিয়েছেন ক্লাবের সহসভাপতি আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত দু'বছর ধরে যত্ন নিয়ে ক্লাবটিকে পেশাদারী মনোভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন ডিএইচএফসির কর্তারা। কোচ নির্বাচন থেকে দল গঠন সবকিছুতেই পরিকল্পনার ছাপ। কোচের চেয়ারে কিবু ভিকুনার মত আই লিগ জয়ী কোচ রয়েছেন। কোচিং স্টাফে দীপক মণ্ডল, সন্দীপ নন্দীরা রয়েছেন। পাশাপাশি দলে ময়দানের পোড়খাওয়া ফুটবলাররা যেমন আছেন, তেমনই আছেন রাহুল পাসোয়ানের মত উঠতি প্রতিভা। ছোট দলের জন্য হাজার দুয়েক দর্শক জার্সি পড়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে গলা ফাটাচ্ছে, এমন দৃশ্যও দেখা যায় না। সবমিলিয়ে ছোট ক্লাব হলেও ডিএইচএফসি'র দৃষ্টিভঙ্গি বড় ৷
যে জিতবে সেই গ্রুপের শীর্ষে চলে যাবে এই প্রেক্ষাপটে মহমেডান এবং ডায়মন্ড হারবার মুখোমুখি হয়েছিল এদিন। প্রথমার্ধে মহমেডান ম্যাচের রাশ পায়ে রাখলেও পালটা আক্রমণে সাদা-কালো রক্ষণকে অস্বস্তিতে রেখেছিল কিবু ভিকুনার ছেলেরা। চারবছর কলকাতা ময়দানে কিবু ভিকুনা কোচিং করাচ্ছেন। ময়দানের জল, হাওয়ার সঙ্গে পরিচিত স্প্যানিয়ার্ড। তাই দলকে তথাকথিত বড় দলের আক্রমণে দিশেহারা না-হয়ে চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের কথা বলেছিলেন। গতবছর মহমেডানের কোচ ছিলেন কিবু ভিকুনা। সাদা-কালো শিবিরে কর্তারা তাঁকে রাখেনি। ফলে ডায়মন্ড হারবারের ডাগআউটে বসে সেই উপেক্ষার জবাব দেওয়ার তাগিদ ছিল তাঁর। সেই কাজটি তাঁকে করতে সাহায্য করলেন মহমেডান বিতাড়িত আরেকজন রাহুল পাসোয়ান।
আরও পড়ুন: আতঙ্কিত মণিপুরী ফুটবলারদের পরিবারের থাকার ব্যবস্থা করল মহামেডান স্পোর্টিং
দলের জয়ে জোড়া গোল এল রাহুলের পা থেকে। ম্যাচের 62 মিনিটে ব্যারেটোর গোলে এগিয়ে যায় মহমেডান। টানা তিন জয়ের পরে ফের প্রথম গোল করে এগিয়ে যাওয়ায় চতুর্থ জয়ের স্বপ্ন তখন সাদা-কালো সমর্থকদের মনে। কিন্তু পিছিয়ে পড়ে দিশেহারা হয়ে যায়নি ডায়মন্ড হারবার। গোলের ধাক্কা সরিয়ে ধীরে ধীরে চাপ বাড়াতে থাকে। ফলশ্রুতিতে 66 মিনিটে সমতায় ফেরে। পেনাল্টি থেকে গোল করেন রাহুল পাসোয়ান। 74 মিনিটে ফের গোল। এক্ষেত্রেও গোলদাতা রাহুল পাসোয়ান।
যে ব্যারেটো-ডেভিড-বিকাশদের গত তিনটি ম্যাচে অপ্রতিরোধ্য মনে হয়েছিল। শনিবার তারাই এমন কিছু ভুল করলেন যা, মহামেডানকে পরাজয়ের অন্ধকারে ঠেলে দিল। চার ম্যাচে 9 পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে মহমেডান স্পোর্টিং। পাঁচ ম্যাচে 13 পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাব। কিবু ভিকুনা জানান, কঠিন ম্যাচে জয় পেয়ে খুশি। দল পিছিয়ে পড়েও ফিরে এসে যেভাবে জিতল তাতে ফুটবলারদের কৃতিত্ব দিতে চান। তবে রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছে দল, দাবি ডায়মন্ড হারবার কোচের।