কলকাতা, 13 সেপ্টেম্বর : সাতসকালে চেতলার রাস্তায় বাবার সাইকেলের পাশে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলেছেন এক মেয়ে । আগে এভাবে ওঁর দৌড় দেখে অনেকেই থমকে যেতেন । এখন এই ছবিতে সকলে অভ্যস্ত । আর ইতিমধ্যেই এলিট মেন অ্যান্ড ওম্যান রাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপে বক্সিংয়ে সোনাও জিতেছেন নেহা সাউ ।
বঙ্গবাসী কলেজের সান্ধ্য বিভাগের কলা বিভাগে পাঠরত বছর কুড়ির নেহা ৷ তবে বক্সিংয়ে আসার জন্য পরিবারের অবদান রয়েছে । বাবা সুরেশ সাউ প্রথম জীবনে তিনবার রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন । ফুটবলেও তিনি প্রথম ডিভিশন ক্লাবে খেলতেন । দিদি দেবিকা সাউ বাংলার টেবিল টেনিসের উজ্বল মুখ । বাবা ও দিদির নিয়মিত খেলাধূলা চর্চার মাঝেই একটু অন্য পথে নেহা ।
নেহার একমাত্র পছন্দ বক্সিং রিং ৷ 5 থেকে 7 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হওয়া এলিট মেন আন্ড ওম্যান রাজ্য বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে রাজ্যের 100জন বক্সার অংশ নিয়েছিলেন । সফল পুরুষ বক্সাররা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে যাচ্ছেন । মেয়েদের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ কোথায় হবে তা এখনও ঠিক হয়নি ।
রাজ্য আসরে 48 কেজি বিভাগে সোনা জিতেছেন নেহা । এবার তিনি চান, জাতীয় আসরে বাজিমাত করতে । বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে প্রতিনিধিত্ব করার ভাবনা থাকলেও তার আগে নিজেকে তৈরি করে নিতে চান । এ ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করছেন বাবা সুরেশ সাউ এবং কোচ সঞ্জয় প্রসাদ । দিনে দু' বেলায় মোট পাঁচ ঘণ্টা অনুশীলন করেন নেহা । সকালে বাবার কাছে শারীরিক কসরত এবং মাঝে মাঝে প্যাডিং করেন । বিকেলে প্রশিক্ষকের কাছে বক্সিং অনুশীলন।
নেহার কোচের বক্তব্য, "মেয়েটার মধ্যে দম রয়েছে। পরিশ্রম করতে ভয় পায় না । রিংয়ের ভেতর শক্তিশালী প্রতিপক্ষ দেখলে দমে যাওয়ার বদলে আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠে । আমার কাছে বক্সিং করে বলে নয়, ভালো বক্সার হওয়ার গুণ নেহার মধ্যে রয়েছে," ৷ কোচের প্রশংসায় নতুন লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা নেহার চোখে ।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে চান তিনি ৷ স্কুলে পড়ার সময় রিংয়ের বাইরে একজনকে মেরেছিলেন নেহা । তবে ওটাই প্রথম, ওটাই শেষ । যাবতীয় আগ্রাসন নেহা রেখে দিয়েছেন রিংয়ের ভিতর প্রতিপক্ষের জন্য । জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়াও এশিয়ান গেমসে পোডিয়াম ফিনিশ করার জেদ রয়েছে তাঁর । ইতিমধ্যে জুনিয়র পর্যায়ে জাতীয় আসরে ও স্কুল পর্যায়ে ভালো ফল নেহাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে । রাজ্য পর্যায়ে সাম্প্রতিক সাফল্য তাঁর সেই আত্মবিশ্বাসে বাড়তি রসদ জোগাচ্ছে ।
তবে সাহসটা আরও বেড়েছে মেরি কমকে দেখে । মেরি কম তাঁর আদর্শ । ইচ্ছে রয়েছে দেখা হলে পরামর্শ নেওয়ার । তবে এজন্য কোনও শর্টকাট জানা নেই নেহার ।