কলকাতা, 21 এপ্রিল : চাঁদিফাটা গরমে যখন শহর পুড়ছে তখন বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে হয়ে গেল জাতীয় ব্রিজ চ্যাম্পিয়নশিপ । 18 এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে এই প্রতিযোগিতা । বাহাত্তরটি দল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল । চারদিনের এই টুর্নামেন্টে হেমন্ত জালান, সুভাষ গুপ্তা, অশোক গোয়েল, শিবনাথ দে সরকার, দেবাশিষ রায়, দেবব্রত মজুমদার, সুমত মুখার্জির মত খেলোয়াড়রা অংশ নেন । খেলতে এসেছিলেন হেমা দেওড়া, মোনিকা জাজোর মতো মহিলা তাসুড়েরাও ।
তাস খেলা এখন আর কটাক্ষের চোখে দেখা খেলা নয় । দেশের হয়ে এশিয়ান গেমসে দুই বাঙালির সোনা জয় খেলাটি সম্পর্কে সম্ভ্রম সৃষ্টি করেছে । সময় কাটানোর খেলা নয় । বরং অনেক বেশি মাইন্ড গেম । তাই তাস খেলাটি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । ইউরোপের স্কুলে তাস খেলা শেখানো হয় । কলকাতায় বেশ কয়েকটি স্কুলেও তাস খেলা শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে । খেলাটি সম্পর্কে যে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে তা মানছেন হেমা দেওরা ও মোনিকা জোজোর মতো মহিলা তাসুড়েরা । প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা মুরলী দেওরার স্ত্রী হেমা দেওরা কলকাতায় গত তিনদিন ছিলেন । এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেই এ শহরে আসা । এশিয়ান গেমসে প্রণব বর্ধন ও শিবনাথ দে সরকারের সোনা জয় তাস সম্পর্কে মানুষের মনে নতুন ধারণা তৈরি করেছে । 2018 সালে এশিয়ান গেমসে তাসের মিক্সড টিম ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন হেমা দেওরা । সময় কাটানোর ছলে শুরু করা খেলা যে তাঁকে সাফল্যের পথ দেখবে তা ভাবেননি । এখন তাসের জন্য টুর্নামেন্ট খেলার ব্যস্ততা উপভোগ করেন । তাস খেলাকে ঘিরে গড়ে ওঠা উৎসাহ দেখে নতুন খেলোয়াড়দের এই খেলায় আসার সম্ভাবনাও দেখছেন তিনি ।
হেমা দেওরার মতো মোনিকা জাজোও তাসের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী । গলফার জীব মিলখা সিংয়ের আত্মীয় মোনিকা 2015 সালের প্যারা অলিম্পিকে গলফের মিক্সড ইভেন্টে সোনা জিতেছেন । চলতি বছরে ওয়ার্ল্ড গেমসে রণবীর সিংয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে রুপো পেয়েছেন মোনিকা । জাতীয় গলফ অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত থাকা মোনিকা তাস খেলায় তৃপ্তি পান । দুটো খেলার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে কোনও অসুবিধা হয় না । গলফ ও তাস দুটো খেলাতেই মনোসংযোগ প্রয়োজন । তাই তাস মাইন্ড গেম বলতে কোনও সংশয় নেই মোনিকা, জোজোর ।
শিবনাথ দে সরকার ইতিমধ্যেই তাসের অ্যাকাডেমি খুলেছেন । ইতিমধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় দলের কোচ হয়েছেন । সেখানেও তাস খেলাকে ঘিরে উন্মাদনা বাড়তে দেখেছেন । এশিয়ান গেমসে সোনা জয়ী শিবনাথ দে সরকার বলছেন তাস খেলা অঙ্কের উপর দাঁড়িয়ে । তাই মনোসংযোগ, অধ্যাবসায় দরকার । তাস খেলার জন্য বিভিন্ন সংস্থা দল তৈরি করছে । তাই তাস খেলে বহুজাতিক সংস্থা, কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থায় চাকরি পাওয়া কঠিন নয় । তাস এখন আর সর্বনাশা নয়, নতুনভাবে জীবনের দিশা পাওয়ার খেলা । বিশ্ব বাংলা কনভেশনের মঞ্চে তাসুড়েদের অংশগ্রহণ আলোচনা সেই বার্তা দিয়ে গেল শহরে ।