হায়দরাবাদ, 11 অক্টোবর: দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বুধবার বিশ্বকাপের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও আফগানিস্তান ৷ দিল্লিতে এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল 35 ডিগ্রি, যেন গরম তরল হয়ে গলে পড়ছিল রাজধানীতে ৷ এই ম্যাচকে ঘিরে উত্তেজনা ছিল স্টেডিয়ামের ভিতরেও ৷ ম্যাচ দেখতে সাকেতের খিড়কি গ্রাম থেকে ও লাজপত নগর ও সংলগ্ন বিভিন্ন রাস্তা ধরে রঙবেরঙের পোশাক পরে স্টেডিয়ামে হাজির হয়েছিলেন আফগান সমর্থকরাও ৷ ভারতীয় দলের সেরা বোলারদের কিছুটা বিধ্বস্ত করে এদিনের ম্যাচে আফগান ক্রিকেটাররা দারুণ খেলেছেনও ৷ প্রেস বক্সে এদিন উপস্থিত দেশ বিদেশের 40 জনের বেশি সাংবাদিক, যাঁরা নিজ নিজ দেশের হয়ে ভারতে বিশ্বকাপের রিপোর্টিং করতে এসেছেন ৷
এদিনের ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন 24 বছরের আফগান গুল ৷ তিনি বলেন, "ভারতে আমি পড়তে এসছি, এই ম্যাচ দেখার জন্য আমি 2টি টিকিট পেয়েছিলাম, এটা আমার কাজে দারুণ মুহূর্ত ৷ আমি এখানে আসতে পেরে খুব উচ্ছ্বসিত, গরম কোনও ব্যাপার নয় ৷ আমরা চাই হাসমাতুল্লাহ শাহিদির নেতৃত্বে আমাদের দলের জয় ৷" ভারতীয় সমর্থকরাও এদিন বিরাট কোহলিদের টিম ইন্ডিয়ার জার্সি পরে প্রিয় দলের সমর্থনে গলা ফাটিয়েছেন ৷ স্টেডিয়ামের স্ট্যান্ডের 31 হাজার দর্শকের উপস্থিতি এদিন ম্যাচের উত্তজনাকে নয়া মাত্রায় পৌঁছে দেন ৷
ভিসা পেলেন পাক সাংবাদিকরা
এদিনের আরও একটি বড় খবর হল, ভারতে আসার ভিসার জন্য যেসব পাক সাংবাদিকরা অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা প্রত্যে এদিন তাঁদের ভিসা পেয়ে গিয়েছেন ৷ ফলে শনিবার আমেদাবাদে যখন মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান তখন সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবেন পাক সাংবাদিকরাও ৷ সম্ভবত এবারই প্রথম এরকম ঘটনা ঘটল, যখন পাক ক্রিকেট দলকে কোনও প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে সাংবাদিকদের ছাড়াই সেই দেশে যেতে হল ৷ তবে ভিসা পাওয়ায় এবার পাকিস্তানের সাংবাদিক-সহ প্রায় 60 জন সাংবাদিক শনিবার মোতেরার ম্যাচ দেখতে উপস্থিত থাকবেন স্টেডিয়ামে ৷ আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা এএফপি-এর সাংবাদিকও আছেন সেই দলে ৷
পাকিস্তানের খেলের সময় স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে সেদেশের সাংবাদিকদের উপস্থিতি গোটা পরিবেশে অন্য মাত্রা এনে দেয় ৷ ভারত-পাক ম্যাচের সময় যা বরাবর অন্য মাত্রা পায় ৷ এবার যখন প্রেসবক্সে সীমান্তপারের সাংবাদিকরাও যোগ দেবেন তখন ম্যাচের পরিবেশও স্বাভাবিকভাবে চিত্তাকর্ষক হয়ে উঠবে ৷
আমেদাবাদে পাক দলের জন্য নিরাপত্তার কড়া ব্যবস্থা
ইতিমধ্যেই আমেদাবাদে পৌঁছে গিয়েছে পাকিস্তানের ক্রিকেট দল ৷ বৃহস্পতিবার থেকে তারা সেখানে অনুশীলন শুরু করবে ৷ দেশের সাংবাদিকরা ভিসা পাওয়ায়, স্বাভাবিকভাবেই খুশি হবেন পাক ক্রিকেটারকরা ৷ শনিবার নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের দিন দেশের সাংবাদিকদের উপস্থিতিতি পাক ক্রিকেটারদের মনোবল বাড়াতে সহায়ক হতে পারে ৷ বুধবার মোতেরায় তাপমাত্রা ছিল প্রায় 34 ডিগ্রি ৷ এদিন 'মেন ইন গ্রিন' বিকেল 4টের সময় আমেদাবাদে পৌঁছয়, কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে পাক ক্রিকেট দলকে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয় ৷
শেষবার মোতেরার স্টেডিয়ামে পাকিস্তান খেলেছিল সেই 2012 সালের 28 ডিসেম্বর, সেদিন ভারত 11 রানে তাদের হারিয়ে একদিনের ম্যাচটি জিতেছিল ৷ এবার শহরে পাক ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার কড়া ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ শহরের নিরাপত্তা ও শহরের আইন-শৃঙ্খলার স্বার্থে মোতায়েন করা হয়েছে প্রকায় 12 হাজার পুলিশ ৷ এছাড়াও রয়েছে এনএসজি, র্যাফ ও হোমগার্ড ৷ 1 লক্ষ 32 হাজার দর্শকাসন বিশিষ্ট নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে ৷ শনিবার আমাদাবাদের সব পথ যে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে গিয়ে মিশবে তা বলাই যায় ৷
রিজওয়ানের বিতর্কিত পোস্ট
এরইমধ্যে পাক ক্রিকেটার মহম্মদ রিজওয়ানের একটি সোশাল মিডিয়া পোস্টকে ঘিরে বিতর্ক ছড়িয়েছে ৷ হায়দরাবাদে মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচে 131 রান করেছিলেন এই পাক ক্রিকেটার ৷ যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের তাঁর এই রান উৎসর্গ করেন রিজওয়ান ৷ এই পোস্ট ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক ৷ এই মুহূর্তে ইজরায়েল ও গাজার জঙ্গি সংগঠন হামাসের যুদ্ধ ঘিরে উত্তাল বিশ্ব কূটনীতি ৷ তারই মাঝে এই পোস্ট নতুন করে আইসিসি এর মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে ৷ আইসিসি'র নিয়ম অনুযায়ী, খেলোয়াররা সোশাল মিডিয়াতে কোনও কোনও রাজনৈতিক বিবৃতি দিতে পারেন না ৷ যদিও এই বিষয়ে এখনও আইসিসি বা পাক ক্রিকেট বোর্ডের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি ৷ 2014 সালে ভারতের বিরুদ্ধে সাউথাম্পটনে তৃতীয় টেস্ট ম্যাচ খেলার সময় 'সেভ গাজা' ও 'ফ্রি প্যালেস্তাইন লেখা' রিস্টব্যান্ড পরায় ইংল্যান্ডের অল-রাউন্ডার মোয়িন আলিকে নিষিদ্ধ করেছিল আইসিসি ৷ পরে অবশ্য ইংল্যান্ডের তরফে বিষয়টিকে মানবিক বার্তা বলে ব্যাখা করা হয়েছিল ৷