কলকাতা, 24 এপ্রিল: বিশ্ব ক্রিকেটের মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকর আজ 50-শে পা দিলেন ৷ জানেন কি তাঁর প্রিয় বাঙালি রান্নার পদগুলি কী কী ? মারাঠি পরিবারের ছেলে সচিনের বাঙালি রান্নার প্রতি দুর্বলতা শুনলে অবাক হবেন আপনিও ৷ কলকাতায় এলেই মাস্টার ব্লাস্টারের প্রথম পছন্দ চিংড়ি মাছের মালাইকারি । তবে সেটা কোনও হোটেল বা রেস্তোরাঁয় তৈরি করা নয় । হতে হবে খাঁটি বাঙালি বাড়িতে তৈরি করা চিংড়ি মাছের মালাইকারি ।
বিশ্ব ক্রিকেটের এই কিংবদন্তিকে চিংড়ির মালাইকারি রান্না করে খাওয়াতেন সিএবির প্রাক্তন যুগ্মসচিব সমর পালের স্ত্রী শুক্লা পাল ৷ তাঁর হাতের রান্না করা চিংড়ি মাছের মালাইকারি ভীষণ পছন্দ সচিনের । আজ 24 এপ্রিল ৷ পঞ্চাশে পা দিলেন ক্রিকেট ঈশ্বর । সচিনের পঞ্চাশ বছরের জন্মদিনে অধুনা সল্টলেক নিবাসী সমর পাল এবং তার স্ত্রী শুক্লা আপ্লুত । ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে রাজ্য ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থার যুগ্মসচিবের দায়িত্ব সামলেছেন সমর পাল । কলকাতা ময়দানের অন্যতম পুরানো ক্লাব এরিয়ানের শীর্ষকর্তা তিনি । মাঠ ময়দানের লোক সমর পাল । ক্রীড়া প্রশাসনে থাকার কারণে ক্রীড়াবিদদের দেখেছেন খুব কাছ থেকে । কিন্তু সমরবাবু আপ্লুত সচিনের আন্তরিকতায় ।
তাঁর কথায়, "1987 সালে দিলীপ বেঙ্গসরকারের সঙ্গে আমাদের শ্যামবাজারের বাড়িতে এসেছিল সচিন । তখন রঞ্জি ট্রফি খেলছে । সেবার কলকাতায় খেলতে এসে একদিন রাতে ওরা দু'জন আমার বাড়িতে নৈশভোজ সেরেছিল । সেই নৈশভোজেই প্রথমবার বাগদা চিংড়ির মালাইকারি খেয়েছিল সচিন। রান্না করেছিল আমার স্ত্রী শুক্লা । খেয়ে খুব তৃপ্তি পেয়েছিল ওরা । সেদিন প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত গল্পগুজব করেছিল ওরা দু'জন। তারপর হোটেলে ফিরে গিয়েছিল ৷"
আরও পড়ুন : জন্মদিনে ফিরে দেখা সচিনের অবিস্মরণীয় কিছু ইনিংস
নস্টালজিক সমর পাল । তাঁর স্ত্রী শুক্লা পালকে সচিন ভাবী বলে সম্বোধন করেন । পরবর্তী সময়ে ক্রিকেট কিংবদন্তি হলেও সচিন আজও কলকাতার এই পাল পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে গিয়েছেন ৷ যা আজও অটুট । সালটা 1988 । ভারত কেনিয়া সিরিজ খেলতে তখন কলকাতায় সচিন । এসেই ম্যাচের আগের দিন সমরবাবুর কাছে সচিনের আবদার ছিল চিংড়ি মাছের মালাইকারি খাওয়ার । সেটা দিয়েই মধ্যাহ্নভোজ সারবেন তাঁর বাড়িতে । সচিনের সেদিনের প্রস্তাবে চমকে গিয়েছিলেন সমরবাবু ।
স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি বলেন, "আমি তো টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম । পরের দিন ম্যাচ আর সচিন চিংড়ি মাছের মালাইকারি খেতে চাইছে । কোনওরকম গন্ডগোল হলে সবাই আঙুল তুলবে আমার দিকে । কিন্তু সচিন নাছোড়বান্দা । বলেছিলাম ম্যাচের পরের দিন খেতে । কিন্তু সচিন অরাজি । কারণ ভারতীয় দল ম্যাচের পরদিন খুব সকালে শহর ছাড়বে । তাই ম্যাচের আগের দিন না খেলে আর খাওয়া হবে না । অবশেষে রাজি হতেই হল । বড় বাগদা চিংড়ি আর নারকেলের দুধ দিয়ে আমার স্ত্রী রান্না করেছিলেন মালাইকারি ৷"
আরও পড়ুন : জন্মদিনে ক্রিকেটঈশ্বর, জীবনের বাইশ গজে অর্ধ-শতরান সচিনের
প্রায় একই সঙ্গে বললেন,"সেদিন একটু বেশি খেয়ে ফেলেছিল । সেটা নিজেই বলেছিল । তবে তাতে যে পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়বে না সে ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছিল । সেই আশ্বাস যে মিথ্যা ছিল না তা মাঠে প্রমাণিত হয়েছিল । সেবার দুরন্ত সেঞ্চুরিতে ভারতকে সহজ জয় পেতে সাহায্য করেছিল সচিন ।"
মাস্টার ব্লাস্টার তারপর একটি ছবি সই করে উপহার দিয়েছিল পাল পরিবারকে । যেখানে লিখেছিলেন,'কিপ স্মাইলিং'। সেদিনের সচিন তেন্ডুলকর এখন ক্রিকেট ঈশ্বর । পঞ্চাশে পা দিলেন । সমর পাল বলছেন, তাঁরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবেন এভাবেই সাফল্যের চূড়ায় থেকে শতায়ু হন সচিন । লিটল মাস্টার ছাড়াও সুনীল গাভাসকারের মিষ্টি দইয়ের প্রতি অনুরাগ সম্পর্কে আমরা জানি । কলকাতায় তিনি যখনই এসেছেন মিষ্টি দই তার চাই-ই চাই । খেলোয়াড় জীবনে কলকাতায় খেলতে এলে তাঁকে মিষ্টি দইয়ের হাঁড়ি পাঠাতেন তদানীন্তন সিএবি সচিব এবং সৌরভ ও স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের বাবা প্রয়াত চণ্ডী গঙ্গোপাধ্যায় । সানি গাভাসকার নিজেই তাঁর দই প্রেমের কথা বলেছেন ।
আরও পড়ুন : এ টু জেড... সচিনের জীবনের সঙ্গে যেভাবে জড়িয়ে ইংরেজি বর্ণমালার সবক'টি অক্ষর