ম্যানচেস্টার, 10 জুলাই : প্রথম সাতটি ম্যাচে দলে সুযোগ পাননি । রিস্ট স্পিনারদের রমরমায় ভাগ্যে শিঁকে ছেড়েনি । কিন্তু, তিনি যে ইউটিলিটি প্লেয়ার । যে কেউ চোট পেলেই ফিল্ডিংয়ে ডাক পড়ত তাঁর । এভাবেই চলছিল । শেষপর্যন্ত গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে সুযোগ পান । সেই 'ব্রাত্য' রবীন্দ্র জাদেজাই প্রায় একা হাতে ভারতকে লর্ডসে নিয়ে যাচ্ছিলেন । পারেননি । নিজের সর্বশক্তি দিয়ে, বলা যায় নিজেকে ছাপিয়ে গিয়েও দলকে ফাইনালে তুলতে পারেননি । সেজন্য 77 রানের ইনিংসটা হয়তো ক্রিকেট ইতিহাসে ঠাঁই পাবে না । কিন্তু, কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর আপামর দেশবাসীর মনে চিরকাল থেকে যাবে জাদেজার এই ইনিংস ।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচ । প্রথম দিনে পুরো খেলা হয়নি । প্রথম দিনে 45.3 ওভারে 211 রানে তোলে নিউজ়িল্যান্ড । এরপর আজ ব্যাট করতে নেমে 239 রানে শেষ হয় নিউজ়িল্যান্ডের ইনিংস । 240 রানে তাড়া করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় ভারত । একটা সময় 3.1 ওভারে 5 রানে তিন উইকেট পড়ে গেছিল । ঋষভ পন্থ ও হার্দিক পান্ডিয়া চেষ্টা করলেও তাঁদের যে এখনও অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে সেটা স্পষ্ট বোঝা গেল উইকেট ছুড়ে আসা দেখে । আর এখানেই নিজেকে চেনালেন 'স্যার' জাদেজা । যখন নেমেছিলেন তখন ভারতের স্কোর 92/6 । জেতার জন্য ভারতের দরকার 117 বলে 148 রান । হাতে চার উইকেট । ক্রিজ়ে ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি । শেষ স্বীকৃত জুটি । অন্যদিকে, ধোনি স্পিনারদের বিরুদ্ধে স্ট্রাইক রোটেট করতে রীতিমতো সমস্যায় পড়ছেন । নিজেও ধরে খেলছিলেন । আস্কিং রেট ক্রমশ বাড়ছিল । একটা সময় ঠিক করেন, অনেক হয়েছে । পালটা আক্রমণ করবেন । দিনকয়েক আগে সঞ্জয় মঞ্জরেকরকে টুইটে জবাব দিয়েছিলেন । এর পালা ছিল ব্যাট হাতে জবাব দেওয়ার । দিচ্ছিলেনও । রাজপুত তো । শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়াই করতে জানেন ।
মিচেল স্যান্টনারকে স্টেপ আউট করে বাউন্ডারির বাইরে ফেললেন । ম্যান্চেস্টারে কার্যত হতভম্ব হয়ে যাওয়া ভারতীয় সমর্থকদের ফের উদ্বুদ্ধ করলেন । ড্রেসিংরুমে প্রায়ে কেঁদে ফেলার মতো অবস্থা থেকে রোহিত শর্মার মধ্যে বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেন । আশ্বাস দিলেন, "স্যার জাদেজা আছে তো ।" ফের "ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া" ধ্বনি উঠল গ্যালারিতে । চাপে পড়ে ওয়াইড করতে লাগলেন কিউয়ি বোলাররা । হাতের বল ফসকাল । পায়ের তলা দিয়ে বল গলতে শুরু করল । এটাই তো চেয়েছিলেন জাদেজা । কম্পন ধরিয়েছিলেন নিউজ়িল্যান্ড শিবিরে । 41.5 ওভারে দু'রান নিয়ে হাফ-সেঞ্চুরি পূরণ করেন । আর তারপরই ট্রেডমার্ক তরোয়ারি খেলা দেখান । ভারতীয়রা সমর্থকরা বুক বাঁধছিলেন, আজ সত্যিই জাদেজার ব্যাট তরোয়ারি হয়ে উঠেছে । আর সেই তরোয়ারিতে নিউজ়িল্যান্ড বিদ্ধ হবে । সেইমতো খেলতেও থাকেন । মূলত জাদেজার সৌজন্যেই ম্যাচে ফিরতে থাকে ভারত । 47 তম ওভারে মাত্র পাঁচ রান দেন ম্যাট হেনরি । কিছুটা চাপ বাড়ে তাঁর উপর । 18 বলে দরকার ছিল 37 রান । বল করতে আসেন ট্রেন্ট বোল্ট । স্লোয়ার বলে ধোঁকা খেয়ে যান । কিছুটা আগে শট খেলেন । ফলে বল আকাশে উঠে যায় । তীব্র চাপের মধ্যে ক্যাচ ধরেন কেন উইলিয়ামসন । মুহূর্তের জন্য থমকে যায় ওল্ড ট্র্যাফোর্ড । জেতার জন্য ভারতের তখন দরকার ছিল 13 বলে 32 রান । পারেনি ভারত । ফের স্বপ্নভঙ্গ । হেরে যান জাদেজাও । দল তো হেরেছে । দলের হারে ব্যক্তিগত ইনিংসের তো কোনও মূল্যই থাকে না জাদেজার মতো খেলোয়াড়ের কাছে । কিন্তু, জাদেজার ইনিংসটাই ভারতীয়দের একসূত্রে বেঁধেছিল । একসুরে প্রার্থনায় বসিয়েছিল । 4টি চার ও 4টি ছয় সহ 59 বলে 77 রানের ইনিংস হয়তো ভারতকে ফাইনালে তুলতে পারেনি । কিন্তু, হৃদয় জিতে নিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা । দেশবাসীর মনে বিশ্বাস এনে দিয়েছেন, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও আমাদের একজন জাদেজা আছেন যিনি জান লড়িয়ে দেবেন ।