মুম্বই, 6 ফেব্রুয়ারি : ক্রিকেট পাগল দেশ ৷ কমবেশি প্রতিটি শিশুই হাতে ব্যাট নিয়ে সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখে ৷ অনেকের স্বপ্ন মাঝপথে থমকে যায় ৷ আবার কেউ কেউ জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন মনের মধ্যে লালন করতে থাকে ৷ তাতে চলার পথে যতই বাধা আসুক ৷ যশস্বী জয়সওয়ালও তাঁদের মধ্যে একজন ৷ মুম্বইয়ের রাস্তায় পানিপুরি বিক্রেতা যশস্বী বিশ্বকাপের মঞ্চে চোখ ধাঁধানো সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ৷ বিশ্বকাপে এই বিস্ময় কিশোরের কীর্তি পথে ঘাটে মানুষের মুখে মুখে ফিরছে ৷ সচিন তেন্ডুলকরকে আদর্শ মেনে বড় হওয়া বছর আঠারোর যশস্বী এখন খোদ লাখো ভারতীয়র অনুপ্রেরণা ৷
অনূর্ধ্ব -19 বিশ্বকাপে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবে ক্রিকেট ভক্তরা ৷ ভালোমতোই জানতেন যশস্বী ৷ টুর্নামেন্টে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দিয়ে আসছিলেন ৷ তিনটে অর্ধশতরান করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় প্রথম স্থানে ছিল তাঁর নাম ৷ কিন্তু বিশ্বকাপের মঞ্চে কাঙ্ক্ষিত শতরান কিছুতেই আসছিল না ৷ সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূরণ হল সেই স্বপ্ন ৷ একে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, তাতে বিপক্ষ আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান ৷ সেই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পাকিস্তান সংহার করে ক্রিকেটপ্রেমীদের আলোচনার কেন্দ্রে ফের যশস্বী ৷
জয়সওয়াল প্রথমবার প্রচারের আলোয় এসেছিলেন 2015 সালে ৷ গিলস শিল্ড ম্যাচে অপরাজিত 319 রান এবং 13টি উইকেট নিয়ে লিমকা বুক অব রেকর্ডসে নাম তোলেন ৷ যার জেরে ডাক পান মুম্বইয়ের অনূর্ধ্ব-16 টিমে ৷ এরপর থেকে লাগাতার সাফল্যই ধরা দিয়েছে যশস্বীর কাছে ৷ 2018 ACC অনূর্ধ্ব-19 এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টেও উজ্জ্বল ছিলেন যশস্বী ৷ সর্বোচ্চ 318 রান তুলে টুর্নামেন্টের সেরা হন ৷ কিশোর যশস্বীর বড় ইচ্ছে পূর্ণ হয় সেবছরই ৷ শুধুমাত্র মুম্বইয়ের হয়ে খেলবেন বলে 10 বছর বয়সে উত্তরপ্রদেশ থেকে বাণিজ্য নগরীতে পাড়ি দিয়েছিলেন ৷ মাস্টার ব্লাস্টারকে আদর্শ মেনে চলা যশস্বীর 2018-19 মরশুমে মুম্বইয়ের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় ৷ ততদিনে শিরোনামে আসাটা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন ৷ বিজয় হাজারে ট্রফিতে ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে 154 বলে 203 রানের ইনিংস খেলে ঘরোয়া ক্রিকেটে ইতিহাস গড়েন ৷ লিস্ট এ ক্রিকেটে সবচেয়ে কমবয়সি ডাবল সেঞ্চুরিয়ন হন যশস্বী ৷
চোখে মুখে বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ৷ অথচ ছেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য আর্থিক সঙ্গতি ছিল না উত্তরপ্রদেশের বদোহির জয়সওয়াল পরিবারের ৷ 10 বছর বয়সে বাবার সঙ্গে মুম্বইয়ে আসার পর প্রায়ই আজাদ ময়দানে যেতেন যশস্বী ৷ সেখানেই ক্রিকেট খেলতেন ৷ পরে বাবার আদেশেও বাড়ি ফিরে যাননি ৷ মাথায় ছাদ ছিল না ৷ তাই বাক্স প্যাঁটরা বেঁধে নিয়ে সোজা আজাদ ময়দানে চলে এসেছিলেন ৷ তাঁকে বলা হয়েছিল ম্যাচে ভালো পারফর্ম করতে পারলে মাঠের তাঁবুতে থাকতে দেওয়া হবে ৷ তাঁবুতে থাকার অনুমতি পেলেও ছিল না শৌচাগার, ছিল না আলো ৷ যশস্বী পরে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, "সকালে খেলতাম আর বিকেলে ফুচকা বিক্রি করতাম ৷ মাঝে মধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে খুব খারাপ লাগত ৷ ওদের চোখে নিজেকে ছোটো মনে হত ৷ তবে আমার ফোকাস সবসময়ই ক্রিকেট ছিল ৷ তাই অন্য কিছু মাথায় রাখতাম না ৷"
বাড়ি ছেড়ে ভিন রাজ্যে আসা, মাঠের তাঁবুতে দিনযাপন, ফুচকা বিক্রি করে উপার্জন ৷ সবটাই ক্রিকেটের জন্য ৷ কঠিন পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন যশস্বী ৷ IPL-এ রাজস্থান রয়্যালস তাঁকে কিনে নিয়েছে 2 কোটি 40 লাখ টাকায় ৷ IPL-এর মঞ্চ মাতাতে এখনও দেরি ৷ আপাতত ফোকাসে বিশ্বকাপ ফাইনাল ৷ আগামী 9 ফেব্রুয়ারি দৃঢ়চেতা যশস্বীর দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ ৷